ঢাকা : নেদারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা এক অদ্ভূত আবিষ্কারের মুখোমুখি হয়েছেন। চীনের একটি প্রাচীন বুদ্ধ মূর্তির সিটি স্ক্যান করাতে গিয়ে তারা এই আবিষ্কার করেন। পদ্মাসনে নির্মিত ওই ভাস্কর্যটির ভেতর থেকে একই আসনে বসে থাকা এক বৌদ্ধ ধর্মগুরুর মমি পাওয়া গেছে। মমিটির দেহের ভেতরকার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো অপসারন করে তা কাগজ দিয়ে ভরে রাখা হয়েছে। কাগজগুলোতে চীনা ভাষায় বিভিন্ন কিছু লেখা রয়েছে।
বুদ্ধ মুর্তিটি ১১০০ খ্রীষ্টাব্দের। নেদারল্যান্ডস এর ড্রেন্টস মিউজিয়াম এটির মালিক। তবে বর্তমানে সেটি বুদাপেস্ট যাদুঘরে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা মমিটি বৌদ্ধ সন্নাসী লি কুয়ানের। যিনি ১১ শতকের চীনা মেডিটেশন বিদ্যালয়ের একজন সদস্য ছিলেন।
যাদুঘর কর্তৃপক্ষের মতে, ওই বৌদ্ধ সন্নাসী নিজেই হয়তো নিজের মমিকরন করেছিলেন। নিজেই নিজেকে মমিতে রুপান্তর করার প্রক্রিয়া খুবই যন্ত্রণাদায়ক একটি প্রক্রিয়া। এজন্য ধাপে ধাপে কয়েকবছর ধরে না খেয়ে থেকে দেহকে মমিতে রুপান্তরিত করার জন্য উপযোগী করে গড়ে তুলতে হয়।
নিজেই নিজেকে মমিতে রূপান্তর করার এই প্রথা মূলত জাপানের বৌদ্ধ ধর্মগুরুদের মাঝে প্রচলিত ছিল। ডিসকভারি নিউজে এই স্বীয় নিপীড়নমূলক পদ্ধতিকে এভাবে বর্ননা করা হয়- যিনি নিজেকে মমিতে রুপান্তর করতে চান তাকে প্রথম ১ হাজার দিন শুধুমাত্র বাদাম ও ফলবীজ জাতীয় খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করতে হয়। এর পরের ১ হাজার দিন শুধুমাত্র শেকড় এবং বাকল জাতীয় খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করতে হয়। এভাবে শরীর থেকে সকল চর্বি দূর করতে হয়।
সর্বশেষ জাপানের একধরণের বিষাক্ত বৃক্ষের প্রাণরস দিয়ে তৈরি চা পান করতে হয়। এতে বমির মাধ্যমে শরীর থেকে সব ধরণের তরল অপসারিত হয়। ওই বিষাক্ত বৃক্ষরস শরীরের ব্যাকটেরিয়াগুলোকেও মেরে ফেলে, কিন্তু এতে মানুষের মৃত্যু হয় না। এরপর কঙ্কালসার দেহসহ জীবন্ত অবস্থায় তাকে একটি পাথরের সমাধিতে ঢুকিয়ে রাখা হয়। সমাধির ভেতরে বায়ু চলাচলের জন্য একটি পাইপ যুক্ত করা হয়। আর ভেতরে একটি ঘন্টাও সরবরাহ করা হয় যেন তিনি মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন একবার করে তা বাজিয়ে নিজের বেঁচে থাকার খবর জানান দিতে পারেন।
যেদিন থেকে বেল বাজানো বন্ধ হবে সেদিন থেকেই ধরে নেয়া হবে যে তিনি মারা গেছেন। এর ১ হাজার দিন পর তার দেহটি ওই সমাধি থেকে বের করে মমি হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে। কিন্তু খুব কম সংখ্যক বৌদ্ধ ধর্মগুরুই এই লম্বা যন্ত্রনাদায়ক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিজেকে মমিতে রুপান্তর করতে সক্ষম হয়েছেন।
আবিষ্কৃত মমিটির শরীরের ভেতরকার পঁচনশীল অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ঠিক কখন অপসারিত হয়েছিল তা জানা যায়নি। মমিটি নিয়ে আরো গবেষণা চলছে। এর আগে মঙ্গোলিয়াতেও দুশো বছরের পুরোনো এক বৌদ্ধ ধর্মগুরুর মমি পাওয়া গেছে।