চা শ্রমিকদের সবাইকে ঘর করে দিবো: প্রধানমন্ত্রী
চা শ্রমিকদের সবাইকে ঘর করে দিবো: প্রধানমন্ত্রী
এখন আপনার কারণে আমরা সোফা, চেয়ারে বসতে পারি। তিনি অতীতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোলাকুলি করার কথা স্মরণ করে বলেন, আপনি বেঁচে থাকেন, আপনি বেঁচে থাকলে আমরা বেঁচে থাকবো। আপনি বেঁচে না থাকলে আমাদের পথেঘাটে কেটে মেরে ফেলা হবে। এসময় দুই নারী শ্রমিক ভিটেমাটির দাবি জানান প্রধানমন্ত্রীর নিকট। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাবা আপনাদের নাগরিকত্ব দিয়েছেন, আমি সবাইকে ঘর করে দিবো। দুই চা শ্রমিকের বক্তব্যের পর চা শ্রমিকদের দুটি ঝুমুর নৃত্য উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। মত বিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রী নিজের হাতে পরা স্বর্ণের চুড়ি দেখিয়ে চা শ্রমিকদের বলেন, আপনারা এই উপহার আমাকে দিয়েছিলেন। এত বড় উপহার আমি কখনো পাইনি। হবিগঞ্জ, সিলেট ও পরে কর্ণফুলি ভেন্যুর চা শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। ভার্চ্যুয়াল মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন চা শ্রমিকরা। চা-শ্রমিকরা ভূমির অধিকার, পেটভরে খেতে পারার জন্য মজুরি, মালিকদের ৪০২ টাকা সুবিধা প্রদানের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান প্রধানমন্ত্রীর কাছে। সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের ভূমির অধিকার, চিকিৎসা, বাসস্থান, এম্বুলেন্স, চা-শ্রমিক সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা, শ্রমিকদের গ্র্যাচুইটি, মাতৃত্বকালীন পূর্ণ ছুটি ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন।
কমলগঞ্জের ভিডিও কনফারেন্সস্থলে সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি, নেছার আহমদ এমপি, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক রফিকুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দীন, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুল রহমান, কমলগঞ্জ পৌর মেয়র জুয়েল আহমেদ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও জেলার ৯২টি চা বাগান থেকে চা শ্রমিক ইউনিয়নের পঞ্চায়েত কমিটির নেতৃবৃন্দ, নারী শ্রমিকসহ সহস্রাধিক চা শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন। যে দাবি করলেন সিলেটের চা শ্রমিকরা: সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগান এলাকার গলফ মাঠ থেকে চা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এ সময় চা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এম্বুলেন্স ও চিকিৎসক চান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান। মতবিনিময় সভায় নারীদের পক্ষ থেকে চা শ্রমিক শ্যামলী গোয়ালা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি ছাড়া আমাদের কেউ নেই। আপনি আমাদের পিতা-মাতা। আমরা যখন আন্দোলন শুরু করি তখন আমাদের একটাই চাওয়া ছিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটিবার কথা বলবো।
সেই সময়ে আপনি নিজ থেকে আমাদের হয়ে কথা বলেন এবং আমাদের মজুরি বাড়িয়ে দেন। এজন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানান, আমরা চিকিৎসাসহ নানা ভোগান্তিতে রয়েছি। আমরা অসুস্থ হলে হাসপাতালে যাবো সেই ব্যবস্থা নেই। আমাদের জন্য একটি এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দিন। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য বাগানে একজন এমবিবিএস চিকিৎসকের ব্যবস্থা করে দেয়ার দাবি জানান তিনি। এ ছাড়া তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটি চার মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করার দাবি জানান। চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা তার বক্তব্যে বলেন, চা শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য চাকরির ক্ষেত্রে আলাদা কোটা ও উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের সুযোগ প্রদান এবং গ্র্যাচুইটি (অনিবার্য কারণে পাঁচ বছর পর চাকরি ছেড়ে দিলে এককালীন ভাতা বা বকশিশ) ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানান। তাদের বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানসহ নাগরিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাস দেন।
সিলেটের অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের এমপি ড. একে আব্দুল মোমেন, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পিপিএম, জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ, সিলেট জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, সিলেট মহানগর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ও জেলার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান প্রমুখ।