চলো দিল্লি চলো, নতুন ভারত গড়ো: মমতা
দিল্লি দখলের ডাক দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজিত জনসভায় এ ডাক দেন তিনি। নন্দীগ্রামে সিবিআই চার্জশিট প্রসঙ্গে এ জনসভার আয়োজন করা হয়।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের জন্য তিনি স্লোগান তুলেছেন, ‘চলো দিল্লি চলো, নতুন ভারত গড়ো।’ কিন্তু সেই চলার পথে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কোনো একটির সঙ্গে জোট গড়বেন, কি গড়বেন না তা খোলাসা করেননি মমতা।
৫০ মিনিটের বক্তৃতায় কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার এবং প্রধান বিরোধী দলের তীব্র সমালোচনা করেন মমতা। কারো কারো মতে, এভাবে কংগ্রেস ও বিজেপি, দু’দলের থেকেই সমদূরত্ব রাখার বার্তা দিয়েছেন তিনি।
তাদের মতে, এ দিনের বক্তৃতায় আগাগোড়াই প্রবল রাজনৈতিক পরিপক্কতার পরিচয় দেন মমতা।
তিনি বলেন, ‘বাংলায় যে পরিবর্তন এসেছে, দিল্লিতেও সেই পরিবর্তন চাই।’ এটা যদি কংগ্রেস শাসনের অবসানের ডাক হয়, তাহলে পরিবর্তন হিসেবে বিজেপিকে আনারও বিরোধী তিনি। কারণ, ‘ওরা শুধু হিন্দু-মুসলমান করে। আমরা সংহতি ও সম্প্রীতি রক্ষার সরকার চাই।’
তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, মমতা চান, কেন্দ্রে নির্ণায়ক শক্তি হয়ে উঠতে।
আর এ কারণেই রাজ্যের সবক’টি কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীকে জেতানোর জন্য ব্রিগেডের জনতাকে অনুরোধ করেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘কংগ্রেসের বিকল্প বিজেপি নয়। বিজেপির বিকল্প কংগ্রেস নয়। তৃণমূলই দেশের একমাত্র বিকল্প। লোকসভায় প্রতিটি আসনে আমাদের জিততেই হবে। যত বেশি আসন বাড়বে, দিল্লিতে আমাদের গুরুত্ব ততই বাড়বে।’
তৃণমূল সূত্র বলছে, রাজ্যে মমতার প্রধান প্রতিপক্ষ সিপিএম হলেও অধিকাংশ আসনে জয় সুনিশ্চিত করতে হলে এবং দেশের অন্যত্র লড়তে হলে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে আক্রমণ করতেই হবে। কিন্তু সেই আক্রমণও তৃণমূল নেত্রী করেছেন অত্যন্ত সুকৌশলে। তিনি নীতিগত সমালোচনা করেছেন, ব্যক্তিগত আক্রমণে যাননি। যেমন, বলেছেন ‘দিল্লিতে রাজতন্ত্রের অবসান চাই’। কেউ মনে করতে পারেন, এই আক্রমণ গান্ধী পরিবারকে। কিন্তু একেবারে সাধারণভাবেই কথাটা বলা, এই ব্যাখ্যাও ফেলে দেওয়ার নয়।
মমতা বলেন, ‘আমরা দাঙ্গার সরকার চাই না। দাঙ্গার মুখ চাই না।’ এক দিক থেকে এই মন্তব্যের লক্ষ্য বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদী বলে মনে হলেও নীতিগত দিক থেকে এর বিরোধিতা করার উপায় নেই।
দিল্লির সরকারের সঙ্গে তার সংঘাতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘আমাদের লড়াই দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আমাদের লড়াই মানুষের পক্ষে, বাংলার উন্নয়নের স্বার্থে।
আমরা প্রতিহিংসা চাই না। আমরা সমস্যার প্রতিকার চাই। আমরা সুশাসন, আইনের শাসন চাই।’
জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানির দাম বাড়ানো, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির পথ খুলে দেওয়া (যার বিরোধিতায় মমতার ইউপিএ ত্যাগ) নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের নীতিকে আখ্যা দিয়েছেন জনস্বার্থবিরোধী বলে।