চট্টগ্রামে ১৮ দলের সমাবেশে বক্তারা ‘হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে, ৭ নভেম্বর দাফন’
চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তিনি বলেন, আজ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে, আগামী ৭ নভেম্বর দাফন হবে। ততদিন তারা থাকবেন কোল্ড স্টোরেজে আর আমরা থাকবো রাজপথে। এরই মধ্যে সরকারি দলের এমপি মন্ত্রীদের কম্পন শুরু হয়ে গেছে।
শুক্রবার বিকেলে নগরীর কাজীর দেউরী মোড়ে ১৮ দলীয় জোট চট্টগ্রামের উদ্যোগে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
সমাবেশের সভাপতির বক্তব্যে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জোট ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করে ছাড়বে ইনশআল্লাহ।
তিনি বলেন, ১৬ কোটি মানুষের ভোটাধিকার, সভা, সমাবেশ ও মিছিলের অধিকার কেড়ে নিয়েছে সরকার। যাদের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে তারাই এ সরকারের পতন ঘটিয়েছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে তাবেদার, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে আজ থেকে। দেশবাসী শেখ হাসিনা সরকারের কোন অবৈধ শাসন আজ থেকে আর মানবে না। সারাদেশে আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী প্রশাসনের ছত্রছায়ায় বিএনপির সভা সমাবেশ প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে দেশে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়েছে আজকের সমাবেশের মাধ্যমে তার জবাব দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামবাসী মহিউদ্দিন চৌধুরীর ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। আজকের সমাবেশ থেকে সরকারকে তিন তালাক দেয়া হলো। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় না পর্যন্ত ১৮ দলীয় জোটের দুর্বার আন্দোলন চলবে। বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়ে পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে সভা সমাবেশের নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে।
সমাবেশে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর নাসির বলেন, সারা দেশের মানুষ আজ ১৮ দলীয় জোটের দিকে তাকিয়ে আছে। সরকারের দুর্নীতি, অত্যাচার, নির্যাতন, মামলা, হামলার কারণে মানুষ আজ অতিষ্ট।
শুক্রবার বেলা সোয়া তিনটায় চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার যৌথ উদ্যোগে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ শুরু হয়।
এর আগে গত রাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে সময় স্বল্পতার কারণে বিএনপির সমাবেশস্থল কাজির দেউড়িতে মঞ্চ তৈরি করা সম্ভব হয়নি। সেখানে দুইটি ট্রাকে মঞ্চ তৈরি করে নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন। সমাবেশের জন্য ৬০টি মাইক বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধার কাজ শেষ হয়েছে সমাবেশ শুরু হওয়ার এক ঘন্টা আগেই।
দুপুর থেকে কাজীর দেউড়ি সমাবেশ স্থলে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল সহকারে নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন। নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে এসেছে। জামায়াত-শিবির যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত জামায়াতের শীর্ষ নেতা গোলাম আজম, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীসহ বিভিন্ন জনের মুক্তির দাবিতে তাদের ছবি সম্বলিত পোষ্টার ফেষ্টুন নিয়ে একের পর এক মিছিল আসে সমাবেশস্থলে।
একটি মিছিলের অগ্রভাগে চট্টগ্রামের জামায়াতের শীর্ষ নেতা সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম ও সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরীকে দেখা গেছে। যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে বড় আকারের একটি মিছিল নিয়ে নগর বিএনপির সমাবেশে যোগ দিয়েছে কর্মীরা। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি শিবির কর্মীদের হাতেও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মুক্তির দাবি সম্বলিত পোস্টার দেখা গেছে। সমাবেশস্থল দখলে ছিল জামায়াত শিবিরের দখলে।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম আকবর খোন্দকার, সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আসলাম চৌধুরী, রোজী কবির, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, এ.এম. নাজিম উদ্দিন ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর সংসদ সদস্য মাওলানা শামসুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী। এর আগে বিকাল চারটা পর্যন্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির নগর সভাপতি আবু জাফর মো.আনাস, খেলাফত মজলিশের খোরশেদ আলম, জামায়াত ইসলামী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আমীর অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নগর সাধারণ সম্পাদক মো.ইলিয়াস, জামায়াত নেতা মওলানা অধ্যক্ষ রবিউল হোসেন, ন্যাপ নেতা ওসমান গণি সিকদার, লেবার পার্টির নগর নেতা জামাল উদ্দিন ও ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আজম ওবায়দুল্লাহ প্রমুখ।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। সমাবেশস্থল ছাড়াও নাশকতার আশংকায় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে বলে জানান নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) মাসুদ উল হাসান। তিনি বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে দেয়া হবে না। –