ঘূর্ণিঝড় ‘পাইলিন’ অন্ধ্র ও উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হানবে

11/10/2013 6:39 pmViews: 27

pilinস্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ ও উড়িষ্যায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘পাইলিন’। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে পাইলিন যেভাবে, যে পথে এগিয়ে যাচ্ছিল তার ভিত্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতীয় আবহাওয়া অফিস। ঘণ্টায় ২০৫ থেকে ২১৫ কিলোমিটার বেগের ঝড়ো হাওয়া নিয়ে ৪ মাত্রার এই ঘূর্ণিঝড়টি শনিবার বিকেল বেলায় আঘাত হানতে পারে। তবে পাইলিন যে দিক পরিবর্তন করে বাংলাদেশে আঘাত হানবে না, সেই আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না বলে শুক্রবার সন্ধ্যায় জানিয়েছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস। কারণ ঘূর্ণিঝড়টি ইতোমধ্যে ১ বার পথ পরিবর্তন করেছে। সতর্কতা হিসেবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মংলা সমুদ্রবন্দরসমূহকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঢাকার আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবারের পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘পাইলিন’ সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে ঘনীভূত হয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে বর্তমানে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
আর শুক্রবার সন্ধ্যার আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বুলেটিন-১৭ এ বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিম এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৮০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল । ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিমি এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১৯০ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২১০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুব উত্তাল রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আজ শনিবার রাজশাহী খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, রংপুর ও সিলেট বিভাগের দু’-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হাল্কা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতরের সবশেষ বুলেটিনে জানা গেছে, দক্ষিণ অন্ধ্র প্রদেশ ও ওডিশার কালিঙ্গাপট্টনাম এবং গোপালপুরের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে ঘূর্ণিঝড় পাইলিন। ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার গতিতে ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আঘাত করতে পারে। এর সর্বোচ্চ গতি ২০৫ থেকে ২১৫ কিলোমিটার। পাইলিনের প্রভাবে দেড় থেকে দুই মিটার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। কোথাও বা আড়াই মিটার জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইনে বলা হয়েছে, কলকাতার আলিপুর আবহাওয়া অফিস বলছে, বঙ্গোপসাগরের তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় পাইলিন বয়ে যাবে উড়িষ্যা-অন্ধ্র উপকূলের দিকেই। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি হবে কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গে। উপকূলবর্তী এলাকার কোথাও কোথাও ভারি বৃষ্টিও হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার আঁচ পেয়েই বুধবার দুপুরে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছিলেন ঘূর্ণিঝড়টি শনিবার রাতে উড়িষ্যা-অন্ধ্র উপকূলে আছড়ে পড়বে। তবে সেই সম্ভাব্য গতিপথ যে বজায় থাকবেই, নিশ্চিত করে তা বলতে পারেননি তাঁরা। আবহাওয়াবিদরা বলেছিলেন, সম্ভাব্য গতিপথে সামান্য কয়েক ডিগ্রীর বদল হলেই ঘূর্ণিঝড় চলে আসতে পারত উড়িষ্যা-বাংলা উপকূলে। যদিও সে আশঙ্কা রয়ে যাচ্ছে, তবে তার সম্ভাবনা বেশ কম বলেই দাবি আবহাওয়বিদদের।
আবহাওয়াবিদরা জানান, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ না পেরোলে ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। বুধবার রাতেই আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ পেরিয়ে ভারতের মূল ভূখ-ের দিকে রওনা দিয়েছিল পাইলিন। তার পর থেকে ক্রমাগত বায়ুপ্রবাহের অভিমুখ, বায়ুম-লের উপরিস্তরের গতিপ্রকৃতিসহ বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, বাংলাকে স্বস্তি দিয়ে উড়িষ্যা-অন্ধ্রের দিকেই যাচ্ছে পাইলিন। তবে বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে চরিত্র বদলেছে পাইলিন। সাধারণত ঘূর্ণিঝড় ধাপে ধাপে শক্তি বাড়ায়। ঘূর্ণিঝড় থেকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়ে অতি-প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিতে এক দু’দিন সময় লাগে। এ ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগরে অতিরিক্ত জলীয়বাষ্প থাকার ফলেই পাইলিন চরিত্র বদলেছে বলে বিজ্ঞানীদের অনুমান।

Leave a Reply