গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে রোববার সারা দেশে ২০ দলের প্রতিবাদ সমাবেশ
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে রোববার সারা দেশে ২০ দলের প্রতিবাদ সমাবেশ
বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সিএনজির অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আগামী রোববার সারা দেশে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল। একইসঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোকে অযৌক্তিক দাবি করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়েছে তারা। এর আগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো লিফলেট সংযুক্ত এক বিবৃতিতে আগামী শনিবার এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। তবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্মাষ্টমীর কারণে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি একদিন পিছিয়ে রোববার পুননির্ধারণ করা হয়। রাতে নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত সংশোধিত বিবৃতিতে বলা হয়, হিন্দুু ধর্মাবলম্বীদের শুভ জন্মাষ্ঠমী ৫ই সেপ্টেম্বর হওয়ায় ২০ দলীয় জোটের বিক্ষোভ কর্মসূচি ৫ই সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ৬ই সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। ওদিকে লিফলেটে বলা হয়, আমরা সরকারের এই গণবিরোধী, শিল্প বিরোধী, কৃষি বিরোধী, বিনিয়োগ বিরোধী, কর্মসংস্থান বিরোধী তথা দেশবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। এটা প্রতিরোধ করা না গেলে আগামী ডিসেম্বরে গ্যাসের দাম আরও বাড়বে। লিফলেটে বলা হয়, দেশ যখন বন্যায় ভাসছেÑ লাখো বন্যার্ত মানুষ যখন বিপন্ন, পিয়াজ, মরিচ, শাক-সবজি, চাল-ডাল, মাছ-মাংসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে নির্দিষ্ট নিম্ন ও মধ্যআয়ের কোটি কোটি মানুষ যখন দিশাহারাÑ ঠিক তখন আবার অযৌক্তিক ও বেআইনিভাবে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সিএনজির দাম বাড়ানো হয়েছে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১২০ ডলার থেকে কমে যখন মাত্র ৪০ ডলার হয়েছে। গত ৫ বছরে সরকারি সংস্থা পেট্রোবাংলা যেখানে ২০ হাজার ৮০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, তখন তেল এবং তেল দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎ, গ্যাস, সিএনজির দাম কমানো হবে এটাই স্বাভাবিক ছিল। এতে জনগণ উপকৃত হতো। তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় কমতো। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নিÑ তাই জনগনের আকাক্সক্ষা পূরণ কিংবা স্বার্থ রক্ষায় তাদের কোন দায় নেই। এই জন্যই বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম না কমিয়ে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কুইক রেন্টালের নামে লুট করা হাজার হাজার কোটি টাকার দায় জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়ার সরকারি এই অযৌক্তিক, অন্যায় ও গণবিরোধী সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাই। ২০ দলের লিফলেটে আরও বলা হয়, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সিএনজির মূল্য বৃদ্ধির ফলে অনিবার্যভাবেই দেশের সব মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। কারণ এর ফলে শুধু বিদ্যুৎ, গ্যাসের বিল বাড়বে নাÑ নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে। যাতায়াত ব্যয় বাড়বে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার ব্যয় বাড়বে, শিল্প ও কৃষি পণ্যের দাম বাড়বে। প্রত্যেকটি মানুষ এবং প্রত্যেকটি পরিবারকে বাড়তি ব্যয়ের দুঃসহ বোঝা বহন করতে হবে। লিফলেটে বলা হয়, শিল্প উৎপাদনের ব্যয় বৃদ্ধির ফলে মূল্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ায় দেশের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিনিয়োগ আরও কমবে, শ্রমিকরা চাকুরি হারাবেন ও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে না। কৃষি পণ্য উৎপাদনের ব্যয় আরও বাড়বে এবং কৃষকরা আরও বেশি লোকসানের শিকার হবেন। ২০ দলের তরফে বলা হয়, বিদ্যুৎ, গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর পক্ষে সরকারি কর্মচারিদের বেতন বাড়ানোর যুক্তি দিয়ে দেশবাসীকে ভাওতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ১৬ কোটি মানুষের দেশে ১৩ লাখ সরকারি কর্মচারির বেতন বাড়ানোর প্রভাব পড়বে মাত্র ৪ শতাংশ জনগণের ওপর। বাকি ৯৬ শতাংশ মানুষ কোন আয় বৃদ্ধি ছাড়াই বাড়তি ব্যয়ের অসহায় শিকার হবেন। লিফলেটে বলা হয়, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সিএনজির মূল্য বাড়ানোর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের কোটি কোটি নির্দিষ্ট নিম্ন ও মধ্যআয়ের কৃষক, শ্রমিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। এদের কারও আয় বাড়বে না কিন্তু ব্যয় বাড়বে অনেক। ফলে তাদের ধার-দেনা বাড়বে, না হয় কম খাওয়ায় পুষ্টিহীনতা ও রোগ-ব্যাধি বাড়বে। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ কোন সরকার জনগণের স্বার্থ বিরোধী এমন ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কিন্তু এই অনির্বাচিত সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয় বলেই জনগণের অনিবার্য দুঃখ দুর্দশার কথা বিবেচনা করেনি। আমরা তাই জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষাকারী গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি। লিফলেটে গ্যাস-বিদ্যুতের এ দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।