গ্যাসের আগুনে বনানীতে পুড়লো বাড়ি

19/03/2016 10:18 amViews: 8

গ্যাসের আগুনে বনানীতে পুড়লো বাড়ি

 

রাজধানীর বনানীর একটি বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বাড়ির ছাদের বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়েছে। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে যায়। আতঙ্কে বাড়ির বাসিন্দাদের অনেকে ছাদে আশ্রয় নেন। ভয়াবহ এই আগুন আতঙ্কে বাঁচবেন কি না তা ভাবতে পারছিলেন না ভবনের অনেকেই। বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে শুরু হওয়া অগ্নিকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে বাড়ির সামনে জড়ো হন স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় লোকজন, বনানী থানা পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রচেষ্টায় প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত সাতজন। দগ্ধ হয়েছেন ভবন মালিকের ছেলে নাভেদ ইমতিয়াজ। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মাসুদুর রহমান আকনকে সভাপতি করে তিনি সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বনানীর ২৩ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর ছয়তলা ভবনে রাত পৌনে ২টার দিকে আগুন লাগে। খবর পেয়ে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন খানের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন পুলিশ সদস্যরা। তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিস ও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। পাশের ভবনের ছাদ থেকে হ্যান্ডমাইকে কথা বলে আটকা পড়াদের সাহস দেন তিনি। ওসি সালাহউদ্দিন জানান, আগুনের তীব্রতা ছিল ভয়াবহ। পাশের বিল্ডিং ছুঁয়ে যাচ্ছিল আগুনের লেলিহান শিখা। জীবন বাঁচাতে ওই বিল্ডিংয়ের অন্তত ২৫ জন ছাদে আশ্রয় নেন। আগুন বাড়তে থাকায় তাদের নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে কিছু্‌ই করতে পারছিল না। পরবর্তী আরও ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তাদের সহযোগিতায় ২৫ জনকে নিরাপদে ছাদ থেকে নামানো হয় বলে জানান তিনি।
এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা, ফায়ার সার্ভিস কর্মী, পুলিশ সদস্য এমনকি মেয়র নিজেও ঝুঁকি নিয়ে ভবনের বাসিন্দাদের উদ্ধার করেন। তাদের মধ্যে অনেক শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি ছিলেন। আগুনের তীব্রতায় ওই বাড়ির ছাদসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ভেঙে গেছে। ভয়াবহ এই আগুনের উৎপত্তি সম্পর্কে বাড়ির মালিক শামসুল আলম জানান, রাস্তায় গ্যাস লাইন লিক হয়েছিল। কয়েক দিন ধরে সেখান থেকে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। বিষয়টি অনেকবার তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি তারা। ভবনের মালিক শামসুল আলম থাকেন চতুর্থ তলায়। বিস্ফোরণে তার ছেলে নাভেদ দগ্ধ হয়েছেন। তাকে একটি বেসরকারি মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ফায়ার সার্ভিসের কর্তব্যরত কর্মকর্তা মাহমুদ জানান, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। ১টা ৫২ মিনিট থেকে চেষ্টা চালিয়ে সোয়া ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে। আগুনের তীব্রতা কমার পরপরই ছাদে আটকে থাকা লোকজনকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ঘটনাস্থলে দেখেছি নিচে গ্যাসলাইনে লিক ছিল। আগুনের উৎপত্তিসহ এ ঘটনার পুরো ব্যাপারটি তদন্ত করা হচ্ছে।
ভবনের নিচের গ্যাস লাইনের লিকেজ পেয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভবনের নিচের গ্যাস লাইনে লিকেজ পাওয়া গেছে। তবু আগুন লাগার বিষয়টি তদন্ত করা হবে। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিলেই এ বিষয়ে সবকিছু জানা যাবে।
আগুনের উৎপত্তি ভবনের ভেতর থেকে। ভেতরে আগুন লাগায় আতঙ্কে ছাদে আশ্রয় নেন অনেকে। ছয়তলা ভবনের তৃতীয়তলা থেকে ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত এই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও রাত ৩টার দিকে তিতাস গ্যাসের একটি গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তিতাস গ্যাসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভবনের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
ওই ভবনের বাসিন্দার জানান, রাত পৌনে ২টার দিকে হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভাঙে তাদের। আগুনের তীব্রতায় ফ্ল্যাটের জানালার কাচ ভেঙে ছড়িয়ে থাকতে দেখেন তারা। এসময় স্যুয়ারেজের নালা থেকে ভলকে ভলকে গ্যাস বের হচ্ছিল। গ্যাসের গন্ধ তখন আশপাশেও ছড়িয়ে গেছে বলে জানান স্থানীয়রা। ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার উত্তর পাশের বাসিন্দা নাসের আহমেদ জানান, বিস্ফোরণের বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে তার। এসময় উত্তর পাশে আগুন দেখতে পান। তাৎক্ষণিকভাবে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে নিচে নেমে যান তিনি। বাসিন্দারা জানান, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভবনের দক্ষিণ দিকের ফ্ল্যাটগুলো। অগ্নিকাণ্ডের পর ওই ভবনে কোন বাসিন্দা নেই। আগুনের উৎপত্তি, ভবন নির্মাণে ত্রুটি আছে কি-না ইত্যাদি বিষয়ে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে কেউ থাকবেন না বলে জানান বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন খান।
উল্লেখ্য, গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি ভোরে উত্তরার এর ভবনের সপ্তম তলায় গ্যাসের আগুনে দগ্ধ হয়ে একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়। ওই বাসাতে গ্যাসের লাইনে সমস্যা ছিল। বাসাটি ভাড়া নেয়ার পরপর তা ভবন মালিককে অবগত করলেও তা মেরামত না করায় দুর্ঘটনা ঘটে।

Leave a Reply