গোপীবাগ সিক্স মার্ডারের সঙ্গে খুলনার পিতা-পুত্র খুনের মিল!

24/12/2013 8:07 amViews: 8

রাজধানীর গোপীবাগে চাঞ্চল্যকর সিক্স মার্ডারের সঙ্গে খুলনার খালিশপুরে পিতা-পুত্র হত্যাকাণ্ডের মিল খুঁজে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তবে সিক্স মার্ডার তদন্তে পারিবারিক, ধর্মীয় আদর্শের বিরোধ ও অর্থনৈতিক- এই তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তিনজন সহকারী কমিশনারের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে তিনটি চৌকস দল। এ ছাড়া তদন্তের অংশ হিসেবে খতমে আল নবুওয়াত, হিজবুত তাওহিদ, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিযবুত তাহ্রীর, জেএমবি-হুজিসহ মোট সাতটি উগ্রপন্থি সংগঠনের সদস্যদের ওপর বিশেষ নজরদারি শুরু করেছেন র‌্যাব-পুলিশসহ সব কটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। গোয়েন্দারা বলছেন, চলতি বছরের ৮ আগস্ট ঈদুল ফিতরের আগের দিন খুলনার খালিশপুরে তৈয়েবুর রহমান (৭০) ও তার ছেলে নাজমুম মনিরকে (১৩) জবাই করে হত্যা করেছিল দুই অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত। তারা ভক্ত হিসেবে ওই বাসায় প্রবেশ করেছিল। মুসলিম উম্মাহ নামের একটি ধর্মীয় সংঠনের প্রধান ছিলেন তৈয়েবুর রহমান। ওই সংগঠনের সদস্যরা শনিবার জুমা ও প্রতিদিন তিন ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। রোজা রাখতেন ১০টি। নিজেকে উম্মুল মুমিনিন দাবি করতেন তৈয়েবুর। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গোপীবাগে সিক্স মার্ডারে অংশ নেওয়া খুনিরা নিহত লুৎফর রহমান ফারুক ও তার তিন সার্বক্ষণিক সঙ্গীর পূর্বপরিচিত। আগেও একাধিকবার ঘাতকরা ওই বাসায় গিয়েছিল। লুৎফরের ধর্মীয় মতবাদের অনুসারী হওয়ার জন্য তারা দরবার-ঘরে বসে বিভিন্ন সময় কথা বলেছে। শনিবার সন্ধ্যায় ছয়জনকে জবাই করে হত্যার পর দারোয়ানের অনুপস্থিতিতে নির্বিঘ্নে বেরিয়ে যায় তারা। নিহত লুৎফরের একাধিক স্বজন ও অনুসারীর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত তারা আটজন ওই হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে বলে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছেন। তবে বাড়ির বাইরেও ঘাতকদের আরও সদস্য ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, নিহত লুৎফর রহমানের ধর্মীয় মতবাদের বিষয়টি ছিল অতিমাত্রায় বিতর্কিত। এ নিয়ে ধর্মীয় উগ্রপন্থি একাধিক দল বিষয়টি নিয়ে ছিল ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে কথিত নাস্তিকদের কতল করার জন্য সম্প্রতি মাঠে নামে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা। এর ধারাবাহিকতায় একজনকে কুপিয়ে ও অন্য কয়েকজনকে হত্যার চেষ্টা চালায় তারা। ইসলামের কথিত শত্রুদের কতল করাটা তাদের কাছে পুণ্যের কাজ বলে বিবেচিত।

এদিকে গতকাল গোপীবাগের অভয় দাশ লেনের ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায় গেটে পুলিশের প্রহরা। বাড়িটি তালাবদ্ধ। ডিবির একটি তদন্ত দল বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখছে। এ ছাড়া বাড়ির ভেতর থেকে তারা কিছু আলামত উদ্ধার করে। এর আগে রবিবার সন্ধ্যায় বাড়ির লোকজন সবাই লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর চরভরুয়া গ্রামে গিয়েছেন। গ্রামের কবরস্থানে দাফনে বাধা দেওয়ায় রবিবার রাত ২টার দিকে বাড়ির পাশে তিনটি কবরে লুৎফর রহমান ফারুক, তার ছেলে সরোয়ার ইসলাম ফারুক ওরফে মনির ও মজিবুর রহমানকে দাফন করা হয়। নিহত লুৎফরের ছোট ছেলে ও মামলার বাদী আবদুল্লাহ আল ফারুক মুঠোফোনে বলেন, তারা আগে থেকেই বলে আসছেন তার বাবা প্রচলিত মোল্লা ও পীরব্যবস্থা এবং এদের কার্যকলাপ সম্পর্কে কড়া সমালোচনা করতেন। এ কারণেই তার বাবাকে বিভিন্ন মোল্লা গ্রুপ নানা সময় হুমকি ও হত্যার জন্য হামলা চালিয়েছে। তারাই পরিকল্পিতভাবে তার বাবা ও ভাইসহ ছয়জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।

প্রসঙ্গত, শনিবার সন্ধ্যায় গোপীবাগের ৬৪/৬ আর কে মিশন রোডের দ্বিতীয় তলায় লুৎফর রহমান ফারুক ও তার ছেলে সরোয়ার ইসলাম ফারুক ওরফে মনিরসহ ছয়জনকে জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত লুৎফর রহমান নিজেকে ইমাম মাহদীর প্রধান সেনাপতি দাবি করে নতুন এক ধর্মীয় মতবাদ প্রচার করে আসছিলেন।

Leave a Reply