ইতিহাস জানাচ্ছে, অপূর্ব সুন্দরী মিশরের মহারানি ক্লিওপেট্রার ত্বকের জেল্লা ছিল অসাধারণ। কারণ, রেশম কোমল ও উজ্জ্বল ত্বকের মালকিন ক্লিওপেট্রা নিয়মিতভাবে গাধার দুধে স্নান করতেন। গাধার দুধ পানও করতেন। ক্লিওপেট্রার স্নান ও পানের জন্য প্রতিদিন দুধ দিত ৭০০ গাধা। পুষ্টিবিদ ও পশু চিকিৎসকরাও জানিয়েছেন, গাধার দুধের পুষ্টিগুণ অপরিসীম। যে প্রাণী কে নিয়ে এত মশকরা, হাসাহাসি এবং যার বোধ বুদ্ধি নিয়ে তীব্র ব্যঙ্গ ও উপমার বন্যা বইয়ে দেয় মানুষ সেই প্রাণীই এখন খবরের শিরোনামে। সম্প্রতি বিশাখাপত্তনমে হাজির হয়েছে একদল যাযাবর পশুপালক। সঙ্গে কয়েক ৩০ থেকে ৪০টি গাধা। রাজ্যের তেলঙ্গনার প্রত্যন্ত গ্রামগুলি থেকে এক পাল গাধা নিয়ে তারা হাজির হয়েছে উপকূলবর্তী অন্ধ্রে। সেখানে তারা বেআইনিভাবে চড়া দামে বিক্রি করছে গাধার দুধ। কারণ নবজাতকদের পুষ্টির জন্য ওই এলাকায় গাধার দুধের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাদের দাবি, চিকিৎসকরাই বলেছেন, গাধার মিষ্টি দুধ নিয়মিত খেলে খুব দ্রুত ব্যথা, যন্ত্রণার উপশম হয়। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং যৌবন দীর্ঘায়িত হয়।
খবরটি প্রকাশ করে টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তেলঙ্গানার আদিলাবাদ জেলার মাঞ্চেরিয়াল গ্রাম থেকে ২০জন যাযাবর পশুপালক গাধার দল নিয়ে ভাইজাগের শিবাজিপেলামে কয়েকদিন ধরে ঘাঁটি গেড়েছে। পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় সেখানে দেদার বিকোচ্ছে গাধার দুধ। গাধার দুধ কিনতে দেখা গিয়েছে পুলিশকেও। প্রতি বছর শীতে নাকি এরা আসে গাধার দল নিয়ে। বিক্রেতা তথা কয়েকটি গাধার অভিভাবিকা দেহাতি তেলুগু জি লিঙ্গাম্মা গর্বের সঙ্গেই জানালেন, গাধার দুধের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই এখানে আমাদের আসা। লাভের অঙ্ক ভালই। ১৫ জোড়ার বেশি গাধা নিয়ে আমরা এখানে এসেছি। এখানে যা রোজগার হচ্ছে তাতে আমাদের পোষ্যগুলির ভরণপোষণও ভাল হবে। কারণ গ্রামে তো ওরা তেমন ভাল মন্দ খেতে পায় না। ওখানে গাধাদের চাষাবাদেও নিয়মিতভাবে কাজে লাগানো যায় না। ফলে গাধার প্রজননে তেমন উৎসাহ নেই গ্রামের লোকদের।
লিঙ্গাম্মা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে জানালেন, তবে গাধার দুধ অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ জলদি সারিয়ে তোলে। ত্বকের পক্ষে ভীষণ উপকারী। অ্যালার্জির সমস্যা থাকে না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জনা কুড়ির দলের সর্দার জানালেন, গাধার দুধ বিক্রি করে তাঁরা কোনও অন্যায় করছেন না। আইনে কি আছে তাঁরা জানেন না। ট্রেড লাইসেন্স কি? সেটাই জানেন না। এদের অনেকের স্থায়ী বাসিন্দার পরিচয়পত্রও নেই। বিশাখাপত্তনমে এসে দুধের ব্যবসায় নেমেছেন। কত দাম গাধার দুধের? ২৫ মিলিলিটার তাজা দুধের দাম ২০০টাকা। লিটার পিছু দাম রেখেছেন দুই হাজার টাকা। তাও বহুজন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। গাধা না কিনুক, কিন্তু গাধার দুধ কেনার জন্য অর্ডার আসছে প্রচুর। জানালেন, এখানে কয়েকদিন গাধার দুধ বিক্রি করে পরে বিজয়ওয়াড়ায় ডেরা বাঁধবেন। স্থানীয় বাসিন্দা সত্যবতী দেবী জানিয়েছেন, আমার সদ্যোজাত নাতির জন্মের পর তার পুষ্টির নিয়মিত গাধার দুধ কিনছি। ও খেয়ে ভালই আছে।
জেলার পশুপালন দফতরের যুগ্ম নির্দেশক ভেঙ্কটশ্বর রাও জানিয়েছেন, গাধার দুধ শীতপ্রধান ইউরোপীয় দেশগুলিতে খুব জনপ্রিয়। চিজ,পরিজ তৈরিতেই ব্যবহার হয় বেশি। অবশ্য এটা বিশ্বের সবচেয়ে দামী দুগ্ধজাত দ্রব্য। গাধার দুধের পুষ্টিগুণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। তবে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বিক্রি করা উচিত।
বলবাহুল্য, নাম সার্থক করে মানুষের সেবায় এখনও গাধার খাটুনি খেটেই যাচ্ছে গাধা। ক্লিওপেট্রার জমানা থেকে একবিংশ শতকের বিশাখাপত্তনম, গাধার অবদানের ছবিটা কিন্তু বদলায়নি।সূত্র: ওয়েবসাইট