‘গণমাধ্যমের শত্রু’ ফরহাদ মজহারকে অবিলম্বে গ্রেফতার করুন,বিএফইউজেসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের ক্ষোভ ॥ নিন্দার ঝড়
বেসরকারী টেলিভিশন একাত্তরের সামনে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা টেনে ওই টকশোতে তিনি আরও বলেন, ‘আমি তো মনে করি হরতালের তিনদিনে বোমা-পটকা ফাটানো খুবই কম হয়েছে, আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল। অন্য যে কোন দেশে এ ধরনের পরিস্থিতিতে আরও বেশি হয়। আর এটার পক্ষে একটা জনমতও কাজ করে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং এর অঙ্গ ইউনিয়নের নেতারা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলা নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা এ ধরনের হামলায় সরাসরি উস্কানিদাতা হিসেবে ফরহাদ মজহারকে ‘গণমাধ্যমের শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করে অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ও মহাসচিব আবদুর জলিল ভূঁইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি শহীদ উল আলম ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ হায়দার, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের (কেইউজে) সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম কাজল ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সোহাগ, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আকবারুল হাসান মিল্লাত ও সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এইচএম আখতারুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক আরিফ রেহমান, দিনাজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওয়াহিদুর আলম আর্টিস্ট ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহীন হোসেন, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাজ্জাদ গনি খান রিমন ও সাধারণ সম্পাদক সাকিরুল কবির, ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী ইয়াসিন ও সাধারণ সম্পাদক আতাউল করিম খোকন, নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাফিজ আশরাফ ও সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টি এবং কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সারোয়ার সোহেল।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৭ অক্টোবর থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল কর্মসূচী শুরু হওয়ার আগে থেকে কর্মসূচী শেষ হওয়া পর্যন্ত অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ঢাকাসহ সারাদেশে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এসব হামলায় অন্তত ১০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। পত্রিকাবাহী গাড়িতেও হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়েছে।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, গত ২৫ অক্টোবর শুক্রবার চট্টগ্রাম মহানগরীর কাজীর দেউড়িতে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে এটিএন বাংলার ক্যামেরাপার্সন মোঃ ফরিদ উদ্দিনের ওপর হামলা চালায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এ সময় তাকে রক্ষা করতে এসে আক্রান্ত হন বাংলাভিশনের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান নাছির উদ্দিন তোতা এবং এটিএন বাংলার রিপোর্টার আবুল হাসনাত। গত ২৬ অক্টোবর শনিবার রাতে ঢাকায় বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল ৭১-এ বোমা হামলায় গুরুতর আহত হন চ্যানেলটির জ্যেষ্ঠ নিউজরুম এডিটর জাকারিয়া বিপ্লব ও ভিডিও চিত্রগ্রাহক আলমগীর হোসেন। দুজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
২৬ অক্টোবর শনিবার রাতে রাজধানীতে দেশ টিভি, মোহনা টিভি ও ভোরের কাগজসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় পরিকল্পিতভাবে বোমা হামলা করা হয়। ২৭ অক্টোবর রবিবার হরতাল চলাকালে যশোরে দৈনিক সমাজের কথার সাংবাদিক লাবুয়াল হক রিপনের ওপর এবং দুপুরে শহরের দড়াটানায় যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও বৈশাখী টেলিভিশনের যশোর সংবাদদাতা সাকিরুল কবীর রিটনের ওপর বোমা হামলা চালানো হয়।
১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের দ্বিতীয় দিনে ২৮ অক্টোবর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণে তিন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্নস্থানে দুর্বৃত্তরা পত্রিকাবাহী বেশ কয়েকটি গাড়িতেও হামলা চালায়। আহত সাংবাদিকরা হলেন বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ঢাকার প্রতিবেদক রাশেদ নিজাম, আরটিভির নাটোরের ভিডিও চিত্রগ্রাহক শেখ তোফাজ্জল হোসাইন এবং সময় টেলিভিশনের রাজশাহীর ভিডিও চিত্রগ্রাহক আবদুস সালাম। তোফাজ্জলের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
৬০ ঘণ্টার হরতাল চলাকালে আরও আক্রান্ত হয়েছে বিটিভি, জিটিভি অফিস এবং এসএ টেলিভিশনের গাড়ি।
সাংবাদিক নেতারা মিডিয়ার ওপর এসব বেধড়ক হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপরই আক্রমণ। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কর্মসূচী চলাকালে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, যাতে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকরা আক্রান্ত না হয়। তারা কর্মসূচী ঘোষণাকারী দলগুলোকে এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানান।
নেতারা গত কয়েকদিনে যারা এসব হামলা চালিয়েছে তাদের গ্রেফতারে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তারা আহত সাংবাদিকদের চিকিৎসার খরচ ও তাদের গাড়ি এবং ক্যামেরা ভাংচুরের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য বিএনপিসহ ১৮ দলের প্রতি আহ্বান জানান।
সাংবাদিক নেতারা জাতীয় পার্টি নেতা কাজী ফিরোজ রশিদকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানান।
নেতারা বলেন, বক্তব্য ও ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো দেখে বিষয়টি প্রমাণিত যে, ফরহাদ মজহারের সরাসরি উস্কানিতেই গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ফরহাদ মজহারকে ‘গণমাধ্যমের শত্রু’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সাংবাদিক নেতারা অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।