খুশকিমুক্ত চুল

03/03/2014 10:39 pmViews: 12

 

 

hairদুঃজনক হলেও সত্যি রুপ চর্চার দিকে খেয়াল রাখতে গিয়ে আমরা অনেকেই চুলের কথা ভুলে যাই। অবহেলা অযত্নে চুলে জন্মায় খুশকি। খুশকির ভোগান্তির শেষ নেই। দেখা গেল, কোনো উৎসবে হাজির হতে রুপে-পোশাকে ফ্যাশন করতে গিয়ে আপনি দেখলেন চুল থেকে খুশকি বের হয়ে আপনার কাঁধে পড়ছে। ভাবুন তো আপনার ফ্যাশনটা কোথায় গিয়ে ঠেকেবে? এভাবে যে কোন পার্টি-সভাতেই খুশকি আপনাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে। তাই জানতে হবে খুশকির আদি-অন্ত এবং তার হাত থেকে প্রিয় চুল বাঁচানোর উপায়। খুশকিমুক্ত চুলের জন্য করণীয় নিয়ে বিশেষ এই ফিচারটি লিখেছেন রাহাত সাইফুল।

 

কেন হয় খুশকি :
অনেকেই ভাবেন শীতকালেই চুলে খুশকি হয়। এখন শীত শেষ, তাই খুশকি নিয়ে ভাবনাও শেষ। এই ভাবনা একদম ঠিক নয়। শুধু শীতের রুক্ষতাই নয়, অযত্নে-অবহেলাতেও চুলে খুশকি হয়। এ ছাড়া ধুলাবালিও এর কারণ। শরীরে প্রয়োজনীয় পানির অভাব পূরন না হলেও খুশকি হয়। খুশকির আরো কারন পেট পরিস্কার না থাকা। তাই শীত চলে গেল বলে খুশকির প্রতি উদাসীন না হয়ে এ থেকে চুল বাঁচতে অধিক মনযোগী হওয়া প্রয়োজন।

 

সতর্কতা :
খুশকি মুক্ত চুলের জন্য নিয়মিত পরিচর্যা প্রয়োজন। চুল পরিস্কার রাখুন। একই সঙ্গে চিরুনি, ব্রাশ, তোয়ালে, বালিশের কাভার, বিছানার চাদর-এগুলো পরিস্কার রাখুন। কখনোই অন্যের এ জিনিসগুলো ব্যবহার করবেন না। নিজেরটাও করতে দেবেন না। মাসে একবার পার্লারে গিয়ে হেয়ার ট্রিটমেন্ট করান কিংবা হেয়ার স্পা করুন। দিনে আট গ্লাস পানি খান। এক দিন পর পর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। ধুলাবালি থেকে চুল বাঁচিয়ে চলুন।

 

যা করা উচিত :
শেষ হয়েছে শীত। এ সময় মাথার ত্বক শুস্ক হয়ে যায়। ফলে দেখা দেয় চুলের নানান সমস্যা। অনেকেই ভালো করে চুল পরিস্কার করেন না। যার কারনে খুশকি মাথায় জমে। খুশকি দূর করতে হেয়ার ট্রিটমেন্ট করাটা জরুরি। এটি আপনি বাসায় বা পার্লারে গিয়েও করতে পারেন। তবে সুযোগ থাকলে বাসায় করাটাই শ্রেয়। কারণ বাড়িতে করলে অনেক ঝাক্কি-ঝামেলা থেকে রেহাই পাবেন।

 

ট্রিটমেন্ট করার কিছু টিপস :
১. প্রথম কুসুম গরম তেল (সেটা নারিকেলও হতে পারে) এ তুলো ডুবিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন।
২. চুলের প্রত্যেকটি গোড়ায় ভালোমতো তেল ম্যাসাজ করা হয়ে গেলে হালকা গরম পানিতে তোয়ালে চুবিয়ে মাথায় ১০ মিনিট গরম ভাবটা নিতে হবে। এভাবে দুইবার ভাব নেবার পর ধীরে ধীরে ভালোমতো চুল আচড়াতে হবে।
৩. গরেম ভাপের কারণে মাথার  ত্বকের খুশকি নরম হয়ে যাওয়ায় খুশকি ঝরে পড়বে।
৪. এরপর ভালো মানের একটা অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু দিয়ে মাথাটা ভালো করে ধুয়ে নিন।
৫.শ্যাম্পু করার পর আপনার চুল সর্ম্পূন রুপে পরিস্কার করুন।মাথার কোন অংশে যেন শ্যাম্পু না লেগে থাকে। চুল ধুয়া শেষে তা ভালো করে তোয়ালে দিয়ে মুছে ‍নিন। চুলের গোড়ায় পানি জমে থাকলে তা হিতে বিপরীত হয়ে আপনার সব চেষ্টাই মাটি করে দিতে পারে। কেননা, জমে থাকা পানি চুলে নানা সমস্যার কারণ হয়ে থাকে। হেয়ার ড্রায়ার ব্যাবহার না করে ফ্যানের বাতাসে চুল শুকিয়ে নিন।

 

খুশকি তাড়াতে শ্যাম্পু :
খুশকি সমস্যা নিয়ে রুপ সচেতন মানুষই দুশ্চিন্তায় থাকেন।ত্বকের রুক্ষতা আর ছত্রাকের প্রভাবে চুলে খুশকি হয়। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। একটু যত্ন নিলেই তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আজকাল বাজারে নানা রকম শ্যাম্পু পাওয়া যাচ্ছে যেগুলোর খুশকি সমস্যায় শ্যাম্পুর ব্যবহার নিয়ে কিছু পরার্মশ :
১. বাজারে বিভিন্ন মেডিকেল ড্যাড্রাফ শ্যাম্পু পাওয়া যায়। সেগুলো ব্যবহার করুন। এ ধরনের শ্যাম্পু কেনার আগে দেখে নিবেন “Zinc pyrithion, selenium sulfide, sulfur, ketoconazole, salicylic acid”এই উপাদানগুলোর অন্তত একটি যেন অবশ্যই শ্যাম্পুটিতে থাকে।
২. বিভিন্ন মেডিকেটেড শ্যাম্পু দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন যে কোনটি আপনার চুলের জন্য ভালো ।
৩. এ ধরনের শ্যাম্পু কতদিন পর পর ব্যবহার করবেন সেটা নির্ভর কেরবে আপনার চুলের পরিমাণ এবং মাথার তালুতে খুশকি কতটুকু সেটার ওপর।
৪. খেয়াল রাখবেন যেন মেডিকেটেড শ্যাম্পু মাথার তালুতে লাগে। শ্যাম্পু দিয়েই ধুয়ে ফেলবেন না। কিছুক্ষন রেখে দিতে হবে যেন ভালো মত মাথার তালুতে মিশে যেতে পারে।
৫. আপনি যদি দিনে একবার শ্যাম্পু ব্যবহার করার পরেও কোন কাজ না হয় তাহলে একই দিনে বার বার শ্যাম্পু না করে কোন ডার্মাটোলজিস্ট এর সাহায্য নিন।
৬. অন্য কোন শ্যাম্পুর সুগন্ধি আপনার ভালো লেগে থাকে বা আপনি জেনে থাকেন যে কোন শ্যাম্পুটি আপনার চুলের সৌন্দর্যের জন্য ভালো হবে তাহলে সেটাও ব্যবহার করতে পারেন। তার আগে মেডিকেটেড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ও মাথার তালু ধুয়ে নিবেন । তারপর আপনার পছন্দের শ্যাম্পুটি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলবেন।
৭. অনেক সময় দেখা যায় কারো কারো মাথার ত্বক বা তালু নির্দিষ্ট কোন প্রোডাক্টের প্রতি অভ্যস্ত হয়ে যায়। তাই সে সময় মেডিকেটেড শ্যাম্পু দিয়েও কোন কাজ হয় না। এক্ষেত্রে আপনি মেডিকেটেড শ্যাম্পু আর সেই নির্দিষ্ট প্রোডাক্টটি একসাথে মিশিয়ে চুলে দিতে পারেন।

 

যত দিন খুশকি নিয়ন্ত্রনে না আসে :
যতদিন খুশকি নিয়ন্ত্রন করতে না পারছেন ততদিন হালকা রঙের পোশাক পরুন।বিশেষ করে শরীরের উপরে অংশে।যেমন কোথাও বেড়াতে গেলে খুশকি কাঁদের ওপর পরে থাকলেও যেন বোঝা না যায় সেজন্য সাদা অথবা সিলভার রঙ এর পোশাক পরতে পারেন।
১. আপনার মাথার কোন অংশে বেশি খুশকি তা খুঁজে বের করুন এবং এমন ভাবে বাঁধুন যেন ঐ অংশটির ওপরে চুল দিয়ে ঢেকে থাকে ।
২. স্কার্ফ না হলে চওড়া হেড ব্যবহার করতে পারেন।এমন কিছু ব্যবহার করুন খুশকি আক্রান্ত অংশ ঢেকে রাখার জন্য যেটা আপনার পোশাকের সাথে মানিয়ে যাবে আবার কেউ ভাববেনা যে আপনি কোন কিছু লুকাতে চাচ্ছেন।
৩. সবসময় সাথে ছোট লিন্ট ব্রাশ রাখুন যেন প্রয়োজন মতো কাঁধে পরে থাকা খুশকি ঝেড়ে ফেলতে পারেন ।

 

খুশকি থেকে রেহাই পেতে :
চুলে খুশকি পড়লে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান থেকেও সমাধান সিতে পারেন।সহজলভ্য এসব উপাদান আপনার চুলের যেমন খুশকি দূর করবে তেমনি চুল রাখবে স্বাস্থ্যোজ্জল আর ঝলমলে ।পাশাপাশি নানা রকম তেলও চুলে খুশকি তাড়াতে দারুন কাজ করে ।

 

মেথি :
২/৩ টেবিল চামচ মেথি সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন খুব ভালো ভাবে পিষে নিবেন ।তার পর এর সাথে এক টেবিল চামচ টক দই ও ১ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে রাখুন৩০/৩৫ মিনিট ।পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করুন ।সপ্তাহে একবার করে করুন ।

 

নিম পাতা:
নিম পাতা খুশকির জন্য অত্যন্ত উপকারী। ঘরোয়া উপাদান। এর ব্যবহারও খুব সহজ। ২ মুঠো নিম পাতা ৪/৫ কাপ গরম পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে পানিটি ছেঁকে চুল ধুয়ে নিতে পারেন অথবা আপনি যদি চান তাহলে কাঁচা নিম পাতা ব্লেন্ত করে মাথার তালুতে লাগিয়ে ১ ঘন্টা অপেক্ষা করুন ।তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৩ বার করুন।

 

লেবু:
লেবু এমন এক উপাদান যা ত্বকে,চুলে সব কিছুর জন্য উপকারী। তবে সরাসরি লেবুর রস কখনই লাগাবেন না। কেননা লেবুর রসে থাকা এসিড উপকারের বদলে অপকার করতে পারে। ৩/৪টি লেবুর খোসা ছাড়িয়ে ৪-৫ কাপ পানিতে ২০ মিনিট সেদ্ধ করে নিন। ঠাণ্ডা হলে এই সলিউশন দিয়ে শ্যাম্পু করার পর চুল ধুয়ে ফেলুন। খুশকি থেকে মুক্তির জন্য আরেকটি প্যাকের কথা বলছি। ১ চা চামচ লেবুর রসের সাথে ৫ চা চামুচ নারকেলের তেল ভালো করে ফেটিয়ে নিন। তারপর মাথার তালুতে লাগিয়ে ৩০-৩৫ সিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। লেবুর রস খুশকি দূরীকরণের জন্য খুবই উপকারী ঘরোয়া উপাদন। এটি স্কাল্প থেকে ফ্লেক পরিস্কার করে দেয়।

 

মেহেদি :
মেহেদি যদিও আমাদের চুল রাফ করে দেয় তবুও মেহেদি পাতার রস চুলের অনেক সমস্যা দূর করে। আর তারই রেশ ধরে খুশকির অত্যাচার থেকও অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে এই প্যাকটি লাগানোর আগের দিন রাতে চুলে ভালো করে তেল ম্যাসেজ করে নেবেন। এতে চুল রাফ হবেনা। ২ চা চামচ চায়ের পাতা পানিতে ফুটিয়ে নিন। পানি ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তার পর একে একে মেহেদি পাতার গুঁড়া বা কাঁচা মেহেদি পাতা, দই, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস, একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। তারপর এই পেস্ট চুলের গোঁড়ায় লাগিয়ে আধা ঘন্টা পর চুল ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। খুশকি মুক্ত চুলের জন্য ১৫ দিনে ১ বার প্যাকটি ব্যবহার করুন।

 

বেকিং সোডা :
বেকিং সোডা খুব ভালো অ্যান্টি-ফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে ।এর ব্যবহারও খুব সিম্পল। এক মুঠো শ্যাম্পুর সঙ্গে এক টেবিল চামচ সোপিয়াম বাই কার্বনেট মিশিয়ে চুল শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে একবার করে করবেন।

 

লেবু এবং রসুন :
এক টেবিল চামচ লেবুর রসের সাথে দুই টেবিল চামচ রসুন পেস্ট মিশিয়ে একটি প্যাক বানান। এই প্যাক ফ্লেক থেকে আমাদের দূরে রাখে। রসুন প্রাকৃতিক অ্যান্টি-বায়োটিক যা স্কাল্পের চারপাশে থাকা ব্যাকটেরিয়ার বংশ ধংস করে ।এই অ্যান্টিডেনড্রাফ  ট্রিটমেন্ট চুলে ২০-৩০ মিনিট লাগিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।

 

পেঁয়াজের রস :
আমরা সবাই জানি পেয়াজের রস চুল গজাতে সাহায্য করে। এর আরেকটি গুনের দিক হল খুশকি সারাতেও কিন্তু উপকারী। পেঁয়াজের পেস্ট মাথার তালুতে লাগিয়ে ১ ঘন্টা অপেক্ষা করুন, পেঁয়াজের ঝাঁঝলো গন্ধ যদি আপনার জন্য অস্বস্তিকর হয় তাহয়ে কয়েক ফোটা লেবুর রসও মিশিয়ে নিতে পারেন।

 

আপেল:
আপেলে থাকা এনজাইম ডেড স্কিন সেল দূর করে। দুই টেবিল চামচ ফ্রেশ আপেলের রস ১ চা চামচ পানির সঙ্গে মিশিয়ে কটন প্যাডের সাহায্যে চুলের গোড়ায় লাগান। ১০-১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
যে কোন বয়সের নারী-পুরুষের জন্যই চুলে খুশকি একটি সমস্যা। খুসকি নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ নেই। চুলের প্রতি একটু মনযোগ থাকলেই এই বিড়ম্বনা জয় করা সম্ভব। তাই বাহ্যিক সৌন্দর্য আর পোশাকের ফ্যাশনটাকে শতভাগ ফিট রাখতে চুলকেও ভালোবাসুন।

Leave a Reply