খুলনায় খালেদা জিয়ার জনসভা আজ ॥ ব্যাপক আয়োজন

28/09/2013 7:29 pmViews: 13

3423_khaleda-ziaস্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আজ রবিবার খুলনায় আসছেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন বেগবান করার লক্ষ্যে তাঁর এই খুলনা সফর। বিকেলে তিনি খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে ১৮ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন। জনসভা সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আবহাওয়া প্রতিকূল থাকতে পারে এমন আশঙ্কা থাকলেও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ আশা করছেন এ জনসভায় মানুষের ঢল নামবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ১৮ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত অগ্রবর্তী টিম শনিবার খুলনায় পৌঁছেছে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অনেকে ইতোমধ্যে খুলনায় এসে অবস্থান করছেন। জোট নেত্রী শনিবার বিকেলে ঢাকার গুলশানের বাড়ি থেকে সড়ক পথে রওয়ানা হয়ে যশোরে এসে রাত যাপন করেন। সেখান থেকে রবিবার বেলা ১১টায় খুলনার উদ্দেশে রওনা হয়ে আসবেন। বিকেল ৪টায় তিনি সার্কিট হাউস ময়দানে আয়োজিত জনসভা মঞ্চে পৌঁছবেন এবং সাড়ে ৪টায় ভাষণ দেবেন। জনসভায় খুলনা মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে জোটের নেতাকর্মীসহ ব্যাপক লোক সমাগম হবে এবং বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপিসহ ১৮ দলের নেতাকর্মীরা গাড়িবহর নিয়ে যোগদান করবেন। প্রায় দু’হাজার গাড়ি আসবে। এগুলো যাতে নিরাপদে পৌঁছতে পারে তার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
এদিকে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বরণ করতে খুলনার প্রবেশপথ ফুলতলা থেকে শুরু করে নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় প্রায় আড়াই শ’ তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি নগরজুড়ে নানা রঙের পোস্টার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, বিলবোর্ড টাঙ্গানো হয়েছে। এতে রয়েছে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি। মহানগরী ছাড়াও জেলা উপজেলার অলিগলিতে একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে মাইকিং। দলীয় চেয়ারপার্সনের খুলনা সফরকে ঘিরে স্থানীয় বিএনপির নিষ্ক্রিয় গ্রুপও সক্রিয় হয়েছে। বিলবোর্ড, প্ল্যাকার্ড ইত্যাদির মাধ্যমে তারাও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপি জানান, খুলনায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বরণ করতে ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। জনসভা সফল করার জন্য গঠিত ১৬টি সাব কমিটি তাদের নিজ নিজ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। জনসভা স্থলে বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ২শ’ ৫০ নেতা বসতে পারবেন। এ ছাড়া জাসাস শিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশন এবং মিডিয়াকর্মীদের বসার জন্য পৃথক দুটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। জনসভায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী থাকবে। সার্কিট হাউস ময়দানের আশপাশের প্রায় তিন বর্গকিলোমিটার এলাকায় থাকবে অন্তত তিন শ’ মাইক। জনসভায় আগত লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে এ জন্য ৭টি মেডিক্যাল টিম, ৫টি এ্যাম্বুলেন্স, দুটি ক্লিনিক ও দুটি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকলেও দেশনেত্রীর জনসভায় মানুষের ঢল নামবে।
এদিকে বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার খুলনায় এটি তার তৃতীয় সফর। এর আগে ২০১১ সালের ২৭ নবেম্বর রোড মার্চ নিয়ে তিনি খুলনায় আসেন এবং সার্কিট হাউস মাঠে আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেন। ওই জনসভায় জামায়াত-শিবিবের নেতাকর্মীরা আগেভাগেই জনসভা স্থলে গিয়ে মাঠ নিজেদের দখলে নেয়। এবারও তারা মাঠ দখলের চেষ্টায় তৎপর রয়েছে। জামায়াতের একাধিক নেতাকর্মী জানান, ১৮ দলের জনসভায় নিজেদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। জনসভায় লোক সমাগম বাড়াতে প্রতিটি ওয়ার্ডে পৃথক জনসভা বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেছে জামায়াত। এগুলো মনিটরিংয়ের জন্য গঠন করা হয়েছে আরেকটি কমিটি। দূরের উপজেলা থেকে নেতাকর্মীদের আগের রাতেই খুলনায় এসে অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সকাল থেকেই তারা মিছিল নিয়ে সার্কিট হাউস মাঠে যাবেন।
খুলনায় আয়োজিত ১৮ দলীয় জোটের জনসভাকে কেন্দ্র করে বিলবোর্ড দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। নগরীর র‌্যায়াল চত্বর, শিববাড়ী মোড়, কেডিএ এ্যাভিনিউর ডিভাইডারের পুরোটাই দখল করে লাগানো হয়েছে জনসভার বিলবোর্ড ও ফেস্টুন। নিচে গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপন যাতে দেখা না যায় সেজন্য বাকি অংশ কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এর আগে জনসভার প্রচারের জন্য বিলবোর্ড বা কোন কোম্পানির বিজ্ঞাপন দখল না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।
আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে খুলনায় জনসভার আয়োজকরা কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। শুক্রবার বিকেলে খুলনায় ভারি বর্ষণ হয়েছে। এতে বহু রাস্তাসহ নগরীর নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। শনিবার সকালেও থেমে থেমে হালকা বৃষ্টিপাত হয়। এতে জনসভার জন্য প্রস্তুতকৃত সার্কিট হাউস ময়দানেও পানি জমে। জনসভার পোস্টার, আলোকসজ্জাসহ বিভিন্ন উপকরণ বৃষ্টিতে নষ্ট হয়। আরও বৃষ্টির আশঙ্কা থাকায় আয়োজকরা কিছুটা উদ্বিগ্ন হলেও জনসভার আয়োজন চলছে পুরোদমে। নেতারা মনে করছেন, যদি প্রতিকূল অবস্থা অব্যাহত থাকে তাহলেও জনসভায় ব্যাপক লোক সমাগম হবে।
পথে পথে সংবর্ধনা ॥ আমাদের রিপোর্টার শরীফুল ইসলাম যশোর থেকে জানান, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানী ঢাকা থেকে যশোর আসার পথে সংসদ নির্বাচনে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যাপক শোডাউন করেন। তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে পথে পথে দলের নেতাকর্মী ও উৎসুক জনতার ঢল নামে। বিভিন্ন স্থানে তাঁকে দেয়া হয়েছে ব্যাপক সংবর্ধনা। রাস্তার দু’পাশে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও তোরণ নির্মান করা হয় শতাধিক। হাজার হাজার নেতাকর্মী নেত্রীকে ফুল ছিটিয়ে ও সারিবেঁধে স্বাগত জানান। এ সময় খালেদা জিয়া হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন।
রাজধানীর গুলশানের বাসভবন থেকে বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে যাত্রা শুরু করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের ভাইসচেয়ারম্যান সেলিমা রহমান। আজ বিকেলে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের উদ্যোগে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়া। এর আগে বেলা সাড়ে বারোটায় যশোর সার্কিট হাউস থেকে খুলনার উদ্দেশে রওনা দেবেন। বিকেলে খুলনার সার্কিট হাউসে পৌঁছার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবেন। এরপর জনসভা মঞ্চে উপস্থিত হবেন এবং জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও জোটের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেবেন।
শনিবার বিকেলে গুলশানের বাসভবন থেকে যশোরের উদ্দেশে রওনা হন। গাড়ি বহর গুলশান থেকে গাবতলী, আমিনবাজার, হেমায়েতপুর, সাভার, নবীনগর, ধামরাই, মানিকগঞ্জ হয়ে পাটুরিয়া দিয়ে ফেরী পার হন। খালেদা জিয়ার যাত্রাপথে বিভিন্ন স্থানে তাঁকে স্বাগত জানাতে নানা বয়সী মানুষের ঢল নামে। নানা রঙের ডিজিটাল ব্যানার, ফেষ্টুন, ধানের শীষ হাতে নিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী সারিবদ্ধভাবে অবস্থান নেয়।
গুলশানের বাসা থেকে যশোরের পথে শ্যামলীতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গাবতলীতে এস এ খালেক, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, আমিনবাজার-হেমায়েতপুরে দলের যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাভারে ডা. দেওয়ান মোঃ সালাহউদ্দিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় গেইটে জাতীয়তাবাদী দল সমর্থিত শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ ও ছাত্র দল, সাভার স্মৃতিসৌধের সামনে স্থানীয় বিএনপি নেতা মেজর অব. মিজানুর রহমান, ধামরাইয়ে দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ তমিজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদ, মানিকগঞ্জ থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রীতা, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এ কবির জিন্নাহ, বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার হোসেনের ছেলে এ্যাডভোকেট খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলু, নির্বাহী কমিটির সদস্য মইনুল ইসলাম শান্ত, মাকসুদর রহমান, এ্যাডভোকেট জামিলুর রশীদ, মোহব্বত হোসেন, মোতালেব হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক তোজাম্মেল হোসেন তোজার নেতৃত্বে সহস্রাধিক নেতাকর্মী রাত পৌনে ৮টার দিকে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান। পাটুরিয়া ফেরী ঘাটে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর পৌছলে সেখানে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অভ্যর্থনা জানিয়ে ফেরীতে তুলে দেয়। এ সময় ফেরীতে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি। এছাড়াও ফেরীতে রাজবাড়ী জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা বিপুল সংবর্ধনা জানায়। ফেরী পার হয়ে রাজবাড়ির গোয়ালন্দ মোড়ে জেলা বিএনপির সভাপতি আলী নেওয়াজ খৈয়াম, নাসিরুল হক সাবু, ফরিদপুরে দলের ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, নির্বাহী কমিটির সদস্য শ্যামা ওবায়েদ, মাগুরায় প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কবির মুরাদ, সহআইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, কাজী সলিমুল হক কামাল, যশোরের খাজুরায় টিএস আইয়ুব এর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী বাদ্যের তালে তালে নেচে গেয়ে ফুল ছিটিয়ে তাদের প্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান।
রাতে যশোর সার্কিট হাউসে পৌঁছলে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান, ভারপ্রাপ্ত জেলা সভাপতি শামসুল হুদা, সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু প্রমুখ। রাতে যশোর সার্কিট হাউসেই অবস্থান করেন তিনি। সেখান থেকে খুলনার জনসভায় বক্তব্য দেয়ার জন্য তিনি রওনা দেবেন। জনসভায় বক্তব্য শেষে রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়ার কথা রয়েছে তাঁর।

Leave a Reply