খালেদার সমাবেশে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবিতে ব্যানার ফেস্টুন
দুলাল আহমদ চৌধুরী : বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোট হলেও গতকালের সমাবেশের নিয়ন্ত্রণ ছিল জামায়াত-শিবিরের। তাদের দাপটে মঞ্চের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বিএনপি ও ছাত্রদলকর্মীরা। যুদ্ধাপরাধী ঘাতকদের মুক্তির দাবি ও ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন ও বেলুন নিয়ে তারা অবস্থান নেয় সমাবেশ মঞ্চের সামনে। সমাবেশ শুরুর আগেই দুপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় বাকবিতণ্ডা, হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত পিছু হঠতে হয়েছে বিএনপি ও ছাত্রদল কর্মীদের। এ সময় মঞ্চ থেকে একজন বিএনপি নেতা মাইকে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে আজ কোনো বিরোধ নেই। আজকে আমরা ভাই ভাই। আমাদের লক্ষ্য একটাই। আমরা হাসিনা সরকারের পতন চাই।’ বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া বক্তব্য শুরু করলে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা ‘হরতাল হরতাল’ বলে কর্মসূচির দাবি জানাতে থাকে।
শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল আটটা থেকেই জামায়াত-শিবির কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে থাকে। তাদের হাতে ছিলো যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মুক্তির দাবিতে ব্যানার-ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। জুমার নামাজের আগেই পুরো মঞ্চের সামনে দখল নেয় তারা। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জব্বারের ‘দেশ অচল’ করে দেয়ার হুমকির মধ্য দিয়ে শুরু হয় গতকাল ১৮ দলের সমাবেশে বক্তৃতা পর্ব। শেখ হাসিনাকে কিভাবে ক্ষমতা থেকে নামাতে হয় তা তারা দেখিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে জব্বার কারাবন্দি জামায়াতের সব শীর্ষ নেতার মুক্তির দাবি জানায়। যারা ইতিমধ্যে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত হয়েছেন। জামায়াত-শিবিরকর্মীদের এহেন তত্পরতায় বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। যে উদ্যানে একাত্তরে আত্মসমর্পণের দলিলে সই করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী, বাঙালির স্বাধীন চেতনার প্রতীক হয়ে যেখানে জ্বলছে শিখা চিরন্তন, সেই সোহরাওয়ার্দীতে শিবিরকর্মীরা হাজির হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী ও যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের ছবি ও তাদের মুক্তির দাবি সংবলিত ব্যানার নিয়ে। তদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান তুলেছে তাদের উত্তরসূরি জামায়াত-শিবির কর্মীরা।
১৩ শর্তে ১৮ দলীয় জোটকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। তার মধ্যে অন্যতম শর্ত ছিল— সমাবেশস্থলে দুই ঘণ্টা আগে লোক সমাগম করা যাবে না এবং সমাবেশস্থলের বাইরে কোনো মিছিল করা যাবে না। কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীরা অনেকটা সংযত থাকলেও এসব শর্ত মানেনি জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার আগেই তারা পুরো মঞ্চের সামনের জায়গা দখল করে নেয়। এছাড়া মত্স্য ভবন এবং শাহবাগ এলাকা থেকে মূল সড়ক দিয়ে একের পর এক মিছিল করে তাদের সমাবেশস্থলে যেতে দেখা গেছে। উদ্যানের বাইরে বিভিন্নস্থানে তাদের শোডাউন করতে দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন জেলা ও থানা থেকে ফজরের নামাজের পরপরই জামায়াত-শিবিরকর্মীরা সোহরাওয়াদী উদ্যানের উদ্দেশে রওনা হয়। সকাল আটটা থেকে তারা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সামনে জড়ো হতে থাকে। সকাল ১০টার দিকে দেখা যায়, সমাবেশস্থল ও তার আশপাশ এলাকায় জামায়াত-শিবিরের হাজারও নেতাকর্মীকে অবস্থান করতে। দুপুর দেড়টায় দেখা যায় সমাবেশমঞ্চের সামনে— বাঁয়ে-ডানে শিবিরের শক্ত অবস্থান। কিন্তু তখন পর্যন্ত অন্য কোনো দলের নেতাকর্মীদের খোঁজই মিলেনি। বিরোধী জোটের মূল দল বিএনপির একটি মিছিলও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত পৌঁছায়নি সমাবেশস্থলে। নেই ইসলামী ঐক্যজোট কিংবা নামসর্বস্ব অন্য শরিক দলগুলোর কেউ। সমাবেশজুড়ে বিএনপি বা অন্য কোনো সংগঠনের ব্যানার-ফেস্টুন চোখে না পড়লেও যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত শীর্ষ জামায়াত নেতাদের ছবি হাতে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা তাদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান তুলেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কেবল সমাবেশস্থলেই নয়, শর্ত ভেঙ্গে উদ্যানের বাইরেও শোডাউন করেছে জামায়াত-শিবির। রাস্তায় মিছিল করেছে তারা। মত্স্য ভবন এলাকায় রাস্তা দখল করে বন্ধ করে দিয়েছে যান চলাচল। সেখানে সরকারের উন্নয়নের প্রচার সংবলিত বিলবোর্ড ভেঙেছে। আবার সেই দৃশ্যের ছবি তুলতে যাওয়া সাংবাদিকদের আটকে দিয়েছে, ক্যামেরা নামিয়ে রাখতে বলেছে। ক্যামেরা কেড়ে নেয়ার হুমকি দিয়েছে।
তাদের স্লোগান ছিল ‘শিবির, শিবির-ডাইরেক্ট অ্যাকশন’। সোহরাওয়ার্দীর গেটের সামনে শিবিরের ঢাকা কলেজ শাখা একটি বড় ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়। এছাড়া ভিতরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণসহ বিভিন্ন থানা কমিটির ব্যানার নিয়ে নেতাকর্মীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, জামায়াত-শিবিরের এসব উগ্র তত্পরতার কারণে কূটনৈতিক অঙ্গন ও ভোটের রাজনীতিতে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। -বর্তমান