কড়াইল বস্তিতে শুধু কান্না আর হাহাকার

05/12/2016 9:47 pmViews: 8
কড়াইল বস্তিতে শুধু কান্না আর হাহাকার
 
কড়াইল বস্তিতে শুধু কান্না আর হাহাকার
চারদিক শুধু কান্না আর আহাজারি। শীতের রাতে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে এখন তারা খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাচ্ছে। এই চিত্র রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তির। রবিবার দুপুরে আগুনে শেষ সম্বলটুকু খুইয়ে নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ সহস্রাধিক মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে। তাদের শরীরের কাপড় ছাড়া আর কিছুই সম্বল নেই। গুলশান-বনানীর কাছেই গড়ে ওঠা এই কড়াইল বস্তি পোশাক শ্রমিক, রিকশাচালক, গৃহকর্মী, হকার ফেরিওয়ালা, দোকানদারসহ নিম্ন আয়ের বহু মানুষের ঠিকানা।
সোমবার সকালে কড়াইল বস্তিতে সরজমিনে দেখা গেছে, পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তুপে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো খোঁজ করেছে যে তাদের কিছু অবশিষ্ঠ আছে কী না। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা ঝর্ণা বেগম বলেন, কয়েকদিন আগে ছোট দুই ছেলে আর এক মেয়েকে ফেলে চলে গেছে স্বামী। থাকার মধ্যে ছিলো শেষসম্বল ঘরটুকু, সেটাও পুড়ে গেলো।
অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ঘরের টিন ধরে চিত্কার করে কাঁদছিলেন হালিমা (৫৫)। ‘সারাডা জীবন মাইনসের বাড়িত কাম কইরা একটা ঘর দিছিলাম, স্বামী মইরা গ্যাছে ১৫ বছর। দুই ছেলের কেউই কুন খোঁজ রাইখ্যে না। এখন আর কিছুই নাই-’ বলছিলেন হালিমা।
একটি পোড়া ঘরের মেঝেতে দেখা গেল কয়েকজন নারী-পুরুষ বসে আছেন। তাদের একজন কুমিল্ল­ার শ্যামল দাস, রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। স্ত্রী আদর রাণী দাস আর ছেলে নির্মল দাসকে নিয়ে শ্যামল খোলা আকাশের নিচে বসে আছেন সাহায্যের আশায়। তিনি বলেন, ‘পরনের গেঞ্জিটাও প্রতিবেশীগো কাছে ধার কইরা পরছি।  দ্যাশে জমি-জিরাত নাই, সরকার কিছু ব্যবস্থা না করলে কি করমুু’। নুরুল মিয়া নামে অপর একজন বলেন,  দেশের বাড়ি কুড়িগ্রাম। দুই ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে ভিক্ষা করে সংসার চালাতেন।
বাকপ্রতিবন্ধি বিল্ল­াল হোসেন কম্পিউটারে নানা কাজও করতো বলে স্থানীয়রা জানান। সেই দোকানেই মাকে নিয়ে থাকতেন তিনি। পোড়া দোকানের সামনে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বিল্ল­াল। কিছু বলতে পারছে না, তবে চোখে সর্বস্ব হারানোর বেদনার ভাষা স্পষ্ট। বিল্ল­ালের মা হাহাকার করে বলছিলেন, ‘গায়ের কাপড় ছাড়া কিছুই বাঁচাইতে পারি নাই’।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো আশায় আছেন, যদি সরকার বা কেউ তাদের জন্য কিছু করে। এর মধ্যে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা এসে বিভিন্ন ধরনের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। তবে সরকার বা কোনো সংস্থা এখনো এগিয়ে না এলেও এলাকাবাসী নিজেরা চাঁদা তুলে সেখানেই বড় বড় হাঁড়িতে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের জন্য খিচুড়ি রান্না করছেন। ঢাকার সবচেয়ে বড় এই বস্তিতে এর আগে গত ১৪ মার্চ আগুন লেগে অর্ধশত ঘর পুড়ে যায়, অন্তত দুই জন আহত হন।

Leave a Reply