ক্ষমতা দখলে বিএনপি ষড়যন্ত্রের অলিগলি খুঁজে বেড়াচ্ছে : ওবায়দুল কাদের
ক্ষমতা দখলে বিএনপি ষড়যন্ত্রের অলিগলি খুঁজে বেড়াচ্ছে : ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, করোনা মহামারীর এ সময় বিএনপি-জামায়াত জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে অবৈধপথে চোরা গলি দিয়ে ক্ষমতায় আসার জন্য ষড়যন্ত্রের অলিগলি খুঁজে বেড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দুঃস্বপ্নে তারা বিভোর হয়ে আছেন। গণবিরোধী ও দেশবিরোধী কোন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে দেশের জনগণকে সাথে নিয়েই তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে।’
শুক্রবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলী, দলের ঢাকা মহানগর শাখা এবং সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ওবায়দুল কাদের এ সব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের গভীর ষড়যন্ত্রের তথ্য উদঘাটন করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। যা ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট কখনোই জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করতে চায় না। সর্বদাই তাদের ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। তাদের আস্থা স্বাধীনতাবিরোধী ও দেশবিরোধী অপশক্তিতে। আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের আবেগ ভালোবাসা আশা-আকাঙ্খা ধারণ করে। কাজে-কর্মে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায়। আওয়ামী লীগ কখনো ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে না। ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বরদাস্ত করে না কিন্তু বারে বারে আওয়ামী লীগই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়।’
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে মানবিক কারণে মুক্তি দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামি। করোনা সংক্রমণকালে প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ মানবিকতা ও উদারতার পরিচয় দিয়ে তাকে জামিনে মুক্তির ব্যবস্থা করেন। এই মানবিকতা বা উদারতাকে বিএনপি দুর্বলতা মনে করলে ভুল করবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জনগণের প্রতি আস্থাহীন হয়ে বিএনপি নেতৃবৃন্দ বারবার ভুল করে আসছে বলেই তারা জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
মহামারীর এসময় তারা জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে অবৈধপথে চোরা গলি দিয়ে ক্ষমতায় আসার জন্য ষড়যন্ত্রের অলিগলি খুঁজে বেড়াচ্ছে। দুঃস্বপ্নে তারা বিভোর হয়ে আছেন। আমরা বিএনপি নেতৃবৃন্দের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলতে চাই গণবিরোধী ও দেশবিরোধী কোন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে দেশের জনগণকে সাথে নিয়েই তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে প্রস্তুত আওয়ামী লীগ। দলীয় সভাপতির ৭৩তম জন্মবার্ষিকীতে আমরা এ শপথ গ্রহণ করছি।’
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী যাতে আওয়ামী লীগে জায়গা না পায় তার জন্য দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে সতর্ক থাকতে হবে।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। হঠাৎ করে কেউ দলে এলে তাকে প্রথমেই নেতা বানানো যাবে না। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে কোনো অবস্থাতেই অনুপ্রবেশের সুযোগ দেয়া হবে না।’
সকল বাধা বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে পথ চলাই এদেশের মানুষের চিরায়ত রীতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মানুষ কাজে ফিরতে শুরু করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জীবনের সঙ্গে জীবিকার চাকা সচল হয়েছে। আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে সীমিত পর্যায়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। জাতীয় সম্মেলনের আগে পরে ৩১টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। করোনা সংক্রমণের বাস্তব কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে অধিকাংশ পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রীয় দফতরে জমা পড়েছে।
দলীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি একটা বিষয় পরিষ্কার করে বলতে চাই- কমিটি গঠনে দলের প্রেসিডিয়াম সভায় নেত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। তা মেনেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে। দলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। আপনারা যারা কমিটি করেছেন বা করবেন। তাদের কমিটি গঠনে এ নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে।’
আসন্ন সাংগঠনিক সফরের কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ৮টি বিভাগের জন্য ৮টি টিম সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত করে নেত্রীর কাছে জমা দেয়া হয়েছে। অনুমোদন দিলে এই টিমগুলো সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি সর্বদা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাংগঠনিক কর্মসূচি পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ওই সম্মেলনের পরে আমাদের সামনে ছিল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা অনেকটা গৃহবন্দী ছিলাম। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে শতবার্ষিকীর কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করতে হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ দেয়ার ঘটনা স্মরণ করে বলেন, এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করে সারা দুনিয়ার সকল বাঙালিকে ধন্য করেন। গৌরবান্বিত করেন।
তিনি বলেন, কোন সঙ্কটই মানবসভ্যতাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। থেমে থাকে না। করোনা মহামারীর মধ্যেও থেমে থাকেনি মানুষের জীবন। অদৃশ্য করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মানতে দেশের মানুষের সম্মিলিত প্রয়াস ছিল উল্লেখ করার মত। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সারা দেশের মানুষ সাড়া দিয়েছে এবং করোনাকালে তিনি একমাত্র ট্রাস্টেড সিঙ্গেল ফেস হিসেবে দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মানুষের কষ্ট লাগবে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও করোনা মোকাবেলায় সফলভাবে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি।
মন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রামণকালে তার সুনিবিড় পর্যবেক্ষণ ও সুনিপুণ ব্যবস্থাপনায় মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে অন্যান্য দেশের চেয়ে আমরা তুলনামূলকভাবে অনেক সক্ষম হয়েছি। তিনি দক্ষ নাবিকের মতো দিশেহারা জনগোষ্ঠীকে সুদক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে পথ দেখিয়েছেন। দেশের মানুষের দুর্ভোগ দুর্দশা লাঘবে ৭৩ বছর পেরিয়েও তিনি অবিরাম ছুটে বেড়িয়েছেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার জন্মদিন বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। বঙ্গবন্ধু আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতার রোল মডেল। শেখ হাসিনা আমাদের উন্নয়ন এবং অর্জনের রোল মডেল। নিজে যা অর্জন করেছেন তা নজিরবিহীন। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। তার জন্মদিন পালন না করলে আমরা জাতির কাছে অকৃতজ্ঞ থেকে যাব।
এ সময় ওবায়দুল কাদের দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগ দিনটি উপলক্ষে সারাদেশে সকল মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং মন্দির, প্যাগোডা গির্জাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করেছে।