ক্ষমতাসীনরা নির্বাচন ভয়ে দিতে চায় না : খালেদা জিয়া
ক্ষমতাসীনরা নির্বাচন ভয়ে দিতে চায় না : খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা এত লুটপাট এত চুরি-চামারি, এত খুন-খারাবি, এত গুম করেছে যে, মানুষের ভয়ে, বিচারের ভয়ে আজকে তারা ক্ষমতা ছাড়তে চায় না, নির্বাচন দিতে চায় না। তারা জানে, নির্বাচন দিলে তাদের ভরাডুবি হবে। মানুষ কিভাবে তাদের প্রত্যাখ্যান করবে সেটা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটু দৃষ্টান্ত দেখিয়ে দিয়েছে। যদি সত্যিকারের নির্বাচন হতে পারত তাহলে মানুষ তাদের সত্যিকারের জবাব দিয়ে দিতো।
হোটেল পূর্বাণীতে গতকাল জোটের শরিক ইসলামী ঐক্যজোট আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নিজামীর সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে জোটের শরিক দলের নেতারা অংশ নেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ।
ইফতারের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আজকে বিদেশেও বাংলাদেশের কোনো সম্মান নেই। এমনকি বাংলাদেশের মানুষকে কেউ বিশ্বাস করে না এমন একটা অবস্থার মধ্যে দেশ চলে গেছে। বিদেশীরা বলছে, আজকে বাংলাদেশে কোনো গণতন্ত্র নেই এবং অতি দ্রুত আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করা উচিত। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা তাদের কুকর্মের জন্য নির্বাচন দিতে ভয় পায়। কাজেই এ অবস্থায় আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করব সবাই। আল্লাহতায়ালা যেন এ জালেম অত্যাচারী খুনিদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করেন, দেশের মানুষকে রক্ষা করেন আর সবাইকে যেন এর থেকে মুক্ত করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আজ দেশের কী অবস্থা তা আপনারা সবাই বোঝেন। দেশ আজ কারাগারে পরিণত হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ বলেন আর রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীই বলেনÑ সবাই আজ বন্দী। আর আওয়ামী লীগের লোকজন যতই অত্যাচার, জুলুম, অনাচার, চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি করুক না কেন, তারা কিন্তু বহাল তবিয়তে আছে। তারা সবাই ফ্রি। দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর ওপর আস্থা আমাদের আছে। আমরা আল্লাহর ওপর আস্থা-বিশ্বাস রেখেই চলি। সব কিছুর ওপরে আল্লাহতায়ালা। কিন্তু দুনিয়াতে মানুষের বিচার পাওয়ার জন্য যে বিচার বিভাগ সেটাকেও দলীয়করণ করার ফলে আজ এখানেও ন্যায়বিচার পাওয়া যায় না, সুবিচার পাওয়া যায় না। এখানে কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি, কে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী সেটা দেখে বিচার করা হয়। বিএনপি বা ২০ দলীয় জোটের নেতা হলে তারা অপরাধ না করলেও অপরাধী হয়ে তাদেরকে জেলে মরতে হয়। আর আওয়ামী লীগের লোকেরা আল্লাহর নবী রাসূল সা:কে যত অপমান করুক, দেশের মানুষকে খুন করুক, হত্যা করুক যা কিছু করুক তারপরও তারা কিন্তু ফ্রি থাকে। তারা বিচারের ঊর্ধ্বে। তাদেরকে ধরাও হয় না, জেল-জুলুমও হয় না।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা দেখছেন দেশের কী অবস্থা। আজ মন্ত্রী-এমপিরা অবাধে লুটপাট করছে, চুরি করছে। জমি-বাড়ি দখল থেকে শুরু করে সব কিছু করছে। তারপরও এসব তাদের জন্য অপরাধ নয়। কারণ তারা আওয়ামী লীগ করে। তাদের জন্য সবকিছুই মাফ। মহিলাদেরকে তারা কোনো রকম নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ঘরে বাইরে কোথাও আজ মানুষ নিরাপদ নয়। তাই আজ এ অবস্থা। আমরা চাই দেশের মানুষ ভালো থাকুক, নিরাপদ থাকুক। আমরা ঢাকা শহরে থাকলেও মাঝে মধ্যে আমরা গ্রামে যাই। ঢাকা শহর দিয়ে শুধু বিচার করলে হবে না। ঢাকা শহরের মানুষ কোনো রকমভাবে জীবনযাপন করতে পারে। কিন্তু সত্যিকারের গ্রামে গিয়ে দেখেন কী অবস্থা সেখানে মানুষের। মানুষের নিরাপত্তা নেই, কাজ নেই, খাবার নেই। তারা অসহায়। গ্রাম থেকে মানুষ যাচ্ছে বিদেশে চাকরির লোভে। আর এর সাথেও জড়িত আওয়ামী লীগের লোকজন। তারা মানুষকে লোভ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে পাচার করছে। সেখানে পুলিশও তাদের সাথে রয়েছে এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও রয়েছে। তারা এদেরকে পাঠাচ্ছে বিভিন্নভাবে। লোকজন এয়ারপোর্ট দিয়ে যেতে না পেরে জাহাজে করে যায়। জাহাজে তারা বন্দী জীবনযাপন করছে, সেখানে মারা যাচ্ছে। তারা কেন যাচ্ছে? তারা বলেছে, দেশে কোনো কাজ নেই, আমরা বেকার, আমরা না খেয়ে মরছি। মরবোই যখন একবার চেষ্টা করে দেখি বিদেশে গিয়ে কোনো কাজ পাই কি না। এভাবে দেশের মানুষ বিদেশের মাটিতে গিয়ে মারা যাচ্ছে, গণকবর হচ্ছে তাদের। সেখানে হয়তো দেখা যাবে গণকবরের বেশির ভাগই বাংলাদেশের মানুষ।
ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আমিনুল ইসলাম, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাছির উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, ন্যাপ ভাসানী সভাপতি অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান, লেবার পার্টির সভাপতি ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানা, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা রেজাউল করিম, ভাসানী ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদী, ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব, সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান মুফতি তৈয়ব প্রমুখ।