কোরবানি ও আকিকা: মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী
ইসলামে আকিকার গুরুত্ব রয়েছে। আকিকা বলা হয়, সন্তান জন্মের সপ্তম দিন বা পরবর্তীতে শোকরিয়া হিসেবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু জবাই করা। ইসলামী বিধানে আকিকা করা মুস্তাহাব আমল। আকিকার (পশুর) সংখ্যার ব্যাপারে বলা হয়েছে, নবজাত ছেলের জন্য দুটি ছাগল এবং কন্যাসন্তানের জন্য একটি ছাগল জবাই করা সুন্নত। তবে সামর্থ্য না থাকলে পুত্রসন্তানের জন্য একটি বকরি দিয়েও আকিকা করা যাবে। আকিকা ফরজ কিংবা ওয়াজিব ইবাদত না হলেও ইসলামী শরিয়তে এর গুরুত্ব অনেক। আকিকার মাধ্যমে সন্তানের নিরাপত্তা সুরক্ষিত হয়, সন্তানের ওপর থেকে বালা-মুসিবত দূর হয়। হাদিসে আছে, হজরত সালমান ইবনে আমের দাবি্ব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হুজুরকে (সা.) বলতে শুনেছি, ছেলের (জন্মের সঙ্গে সঙ্গে) আকিকা করা আবশ্যক। অতএব তার তরফ থেকে রক্ত প্রবাহিত কর। অর্থাৎ জন্তু জবাই কর এবং তার (ওপর) থেকে কষ্ট দূর কর। (বুখারি শরিফ)। যেমন মহানবী (সা.) হজরত হাসানের (রা.) জন্য একটি বকরি দিয়ে আকিকা করেছিলেন। কোরবানির জন্য যেসব পশু উপযুক্ত, আকিকার ক্ষেত্রেও সে ধরনের পশু জবাই করার নিয়ম। অর্থাৎ ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ বা উট দ্বারা আকিকা করতে হবে। কোরবানির সময়ও (জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ) আকিকা করা যায়। কোরবানির পশুর মধ্যে গরু, মহিষ বা উটে পুত্রসন্তানের জন্য ২ ভাগ এবং মেয়েসন্তানের জন্য এক অংশের দ্বারা আকিকা করা শরিয়ত সম্মত। আকিকার গোশত কোরবানির গোশতের মতো সবাই খেতে পারবে। এ গোশত তিন ভাগ করে এক-তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনদের জন্য সদকা করে দেওয়া, এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বণ্টন করা এবং বাকি এক-তৃতীয়াংশ নিজের জন্য রাখা সুন্নত অথবা পুরোটা বণ্টন করা বা নিজের জন্য রাখাও বৈধ। এ ব্যাপারে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, আকিকার গোশত নিজেরাও খাবে এবং সদকাও করবে। আকিকার পশুর চামড়ার বিক্রয়লব্ধ টাকা গরিব-মিসকিনদের মধ্যে দান করে দেবে। আকিকার গোশত রান্না করেও বণ্টন করা যায়, আবার দাওয়াত দিয়ে লোকজনকে খাওয়ানোও জায়েজ আছে।
লেখক : বিশিষ্ট মুফাচ্ছিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।