কে হবেন থাই প্রধানমন্ত্রী!

17/05/2023 11:42 amViews: 2

 

থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে ভূমিকম্প। ওলটপালট সবকিছু। সব পূর্বাভাস এলোমেলো। ভোটাররা তাদের রায়ে সবাইকে বিস্মিত করেছেন। রোববারের জাতীয় নির্বাচনে তারা প্রতিটি পূর্বাভাস, জরিপকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়েছেন। রোববারও বুথফেরত জরিপ বলছিল, ব্যাপকভাবে  বিজয়ী হতে চলেছেন থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার নেতৃত্বাধীন দল ফেউ থাই পার্টি। সোমবার খবরে বলা হচ্ছে, তাদেরকে টপকে ১৫১ আসনে জয় পেতে চলেছে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি। পার্লামেন্টের ৫০০ আসনে তাদের থেকে ১০ আসনে পিছিয়ে আছে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার ফেউ থাই পার্টি। তারা পেয়েছে ১৪১ আসন। ফলে জনগণ সেখানে রাজনীতির গণেশ উল্টে দিয়েছে। আবারো তারা প্রমাণ করেছে, সেনাশাসন নয়, বেসামরিক শাসনই তাদের গণতন্ত্র। জয়ী বিরোধী এই দুটি দলই ক্ষমতাসীন সেনাসমর্থিত সরকারের বিরোধী। ফলে প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ওচার জন্য বড় পরাজয় নিয়ে এসেছে এই নির্বাচন। এখন কে হবেন থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী, তিনি কতোটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন, তা নিয়ে চলছে নানা হিসাবনিকাশ। এমনিতেই পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে আছে সেনাদের কর্তৃত্ব।

এ অবস্থায় বিরোধী দল বা জোট থেকে যিনিই প্রধানমন্ত্রী হোন না কেন, তাকে সবকিছু সামলে নিতে বেগ পেতে হবে। এরই মধ্যে সংস্কারপন্থি দল মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নেতৃত্বাধীন সম্ভাব্য জোট সরকারে যোগ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার ফেউ থাই পার্টি।  মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাত তার সঙ্গে যোগ দিয়ে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এ দলটিকে। তারা সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। দলটি জানিয়েছে, তারা পিটা নেতৃত্বাধীন সরকারে যোগ দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এর ফলে সম্ভাব্য নতুন পার্লামেন্টে শতকরা কমপক্ষে ৬০ ভাগ আসন থাকবে তাদের দখলে। এরই মধ্যে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নেতা ৪২ বছর বয়সী পিটা লিমজারোয়েনরাত। জানিয়েছেন, ৩০তম প্রধানমন্ত্রী হতে প্রস্তুত তিনি। তার ভাষায়, আমরা থাইল্যান্ডকে উন্নত করতে চাই। সম্ভাব্য সব পরিবর্তন করতে চাই। আরও জানিয়েছেন সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তিনি দলীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। তার অবস্থান হবে স্বৈরশাসক ও সেনাসমর্থিত দলগুলোর বিরুদ্ধে। এতে এটাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়েছে যে, বর্তমান সরকারে সেনাসমর্থিত দুটি দল ও প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ওচা’কে জনগণ ভোটের বিচারে প্রত্যাখ্যান করেছে। ক্ষমতাসীন জোট নির্বাচনে শতকরা মাত্র ১৫ ভাগ আসন পেয়েছে। ফলে মুভ ফরোয়ার্ড দলের নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাত বলেছেন, আমরা কোনো কিছুই অসম্পন্ন রাখবো না।

 গত এক দশকে জনগণের সঙ্গে যথেষ্ট হয়েছে। এখন সামনে নতুন দিন। তার এসব কথায় মনে হচ্ছে, নতুন সরকারের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট এক্ষেত্রে জট পাকিয়ে দিতে পারে। সিনেটে আছেন অনির্বাচিত ২৫০ জন শক্তিধর সদস্য। তাদেরকে নিয়োগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ওচা। নতুন প্রশাসনের বিষয়ে পার্লামেন্টে তাদের ভোট দেয়ার অনুমোদন আছে। মুভ ফরোয়ার্ড যে প্রগতিশীল এজেন্ডা নিয়ে অগ্রসর হবে, তাতে তারা বাধা দেবেন বলেই মনে হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন আইন সংস্কার করতে চায় এই দলটি। তার মধ্যে বহু বিতর্কিত হলো রাজতন্ত্র বা রাজার ক্ষমতা বিষয়ক আইনের সংস্কার। এ অবস্থায় সামনে অপেক্ষা করছে রাজনৈতিক দরকষাকষি। তাতে বিজয়ী দলগুলোর সামনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে সেনাবাহিনী বা তাদের সমর্থকরা। এই ভয় এখন থাই ভোটারদের। তবে কী আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটবে! মিয়ানমারের মতো নতুন প্রশাসন তার যাত্রা শুরুর আগেই সেনাবাহিনী ক্ষমতা কেড়ে নেবে! এমন আলোচনাও আছে। তবে অন্য একটি ঘটনা ঘটতে পারে। তা হলো ২০২০ সালে ফিউচার ফরোয়ার্ডকে যেমন টেকনিক্যালি অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল, এবার মুভ ফরোয়ার্ডের সঙ্গেও তাই ঘটতে পারে। যদি বিরোধীরা মিলে একটি সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়, তাহলে মুভ ফরোয়ার্ড ও ফেউ থাই পার্টি কীভাবে একসঙ্গে কাজ করবে তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কারণ, গত পার্লামেন্টেও তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল কিছুটা রেষারেষির।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন পিটা। তিনি একজন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান। কিন্তু একটি জোট টিকিয়ে রাখা এবং একটি জোটকে টেকসই করার ব্যাপারে এখনো তিনি পরীক্ষিত নন। সে যা-ই হোক সোমবার সকালে ঘুম থেকে জেগে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার বলেছেন প্রায়ুত শাসনযন্ত্র থেকে মুক্তি পাওয়া উচিত তাদের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অভিনন্দন বার্তায় ভেসে যাচ্ছে। এসব বার্তা পোস্ট করছেন মুভ ফরোয়ার্ডের সমর্থকরা। তারা নিজেদেরকে ‘অর্গানিক ক্যানভাসার’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। দলের বিজয়কে ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলছেন ‘নতুন যুগের ভোরের আলো ফুটেছে’। অথচ যে দলটি থাইল্যান্ডের ব্যুরোক্রেসি, অর্থনীতি, সেনাদের ভূমিকা এমনকি রাজতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখার আইন সংশোধন করার কথা বলেছে, তাদের জয় ছিল অকল্পনীয়। তাদের জয়, অন্য সব প্রতিযোগীর চেয়ে বেশি ভোট পাবে তা চিন্তাও করা যায়নি।

এক দশকে একাধিক সেনা অভ্যুত্থান দেখেছে থাইল্যান্ড। দেশের সংবিধান বদলে ফেলা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ২০২০ সাল থেকে দেশজুড়ে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। সেনাবাহিনী কড়া হাতে তা মোকাবিলা করে। ছাত্রদের দাবি ছিল- সেনাবাহিনীর তৈরি সংবিধানের বদল এবং রাজার ক্ষমতা হ্রাস। গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই ছিল তাদের। বর্তমান বিরোধীপক্ষ ছাত্র আন্দোলনের সমর্থক। তারাও গণতন্ত্রের জন্য লড়ছে। ফলে এই জয়ে দেশের গণতন্ত্রপন্থিরা অত্যন্ত আনন্দিত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিরোধীপক্ষ কতোটা সুযোগ পাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

 

Leave a Reply