কে জিতবেন বিতর্কে?
কে জিতবেন বিতর্কে?
নব্বই মিনিটেই পাল্টে যেতে পারে দুনিয়া। তবে হিলারি ক্লিনটন এখনই বলছেন, সোমবারের প্রথম বিতর্কে এগিয়ে যেতে পারেন ডনাল্ড ট্রাম্প, যদি মডারেটররা তার ‘স্বভাবগত মিথ্যা’কে চ্যালেঞ্জ না করেন। ডেমোক্রেটিক শিবিরের এই আক্রমণ এমন সময় হলো যখন উভয় প্রার্থী বিতর্কের জন্য প্রস্তুত। উভয়ে বেশ টেনশনে সময় পার করছেন। প্রায় ১০ কোটি আমেরিকান প্রথম বিতর্ক দেখবেন। আর বিভিন্ন মতামত জরিপের ফলাফল থেকে অনুমান করা হচ্ছে, এ বিতর্কের পারফরম্যান্সই যেকোনো প্রার্থীর জন্য টার্নিং পয়েন্ট হয়ে যেতে পারে। দোদুল্যমান ভোটাররা বিতর্ক দেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন কোন্ দিকে ঝুঁকবেন। তবে হিলারির উদ্বেগ অন্য জায়গায়। ট্রাম্প যেভাবে হালকা চালে কথাবার্তা বলেন, তা পত্রপত্রিকার তথ্য-যাচাইয়ের পরীক্ষায় আটকে গেছে বটে। কিন্তু টেলিভিশনে বেশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে । অস্পষ্ট এ স্টাইল দিয়েই বাঘা বাঘা রিপাবলিকান প্রার্থীদের প্রাইমারিতে হারিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। সম্প্রতি জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে আয়োজিত একটি বিশেষ টেলিভিশন অনুষ্ঠানে ট্রাম্প ইরাক যুদ্ধের পক্ষে তার অবস্থান বেমালুম অস্বীকার করে পার পেয়ে যান। কারণ, উপস্থাপক তাকে চ্যালেঞ্জ করেননি। হিলারির প্রচারাভিযান থেকে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘নিজের পূর্ব ইতিহাস যখনই বিকৃত করবেন ট্রাম্প, তখনই হিলারি পাল্টা জবাব দেবেন। কিন্তু ডনাল্ড ট্রাম্পের মিথ্যা বলার ঐতিহাসিক যে নজির, তাতে তার ভুল ধরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব শুধু হিলারির হতে পারে না।’ হিলারির যোগাযোগ পরিচালক জেনিফার পালমিরি বলেন, ‘যদি মডারেটররা তার মিথ্যাকে চ্যালেঞ্জ না জানান, তাহলে এটা তাকে অন্যায় সুবিধা দেবে।’
টের পেয়ে ট্রাম্পও আগেভাগেই আক্রমণ দাগাচ্ছেন। প্রথম বিতর্কের মডারেটর লিস্টার হল্টকে তিনি ‘কারও পক্ষ না নেয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আরেকজন ক্যান্ডি ক্রোলিকে চাই না।’ প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে বারাক ওবামা ও মিট রমনির মধ্যকার বিতর্কে উপস্থাপক ক্যান্ডি ক্রোলি রমনির ভুল বক্তব্য ঠিক করে দিয়েছিলেন।
তবে এবার সরাসরি প্রার্থীদের তথ্য-যাচাইয়ের ব্যবস্থা করবেন কিনা উপস্থাপক লিস্টার হল্ট, তা জানা যায়নি। যা-ই হোক, প্রথম বিতর্কটা নিয়ে আগ্রহ এত তুঙ্গে উঠেছে যে, কোনো প্রার্থীই এ বিতর্কে হারতে চাইবেন না। ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, আর হিলারিকে অবশ্যই তা থামাতে হবে। অপরদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে প্রমাণ করতে হবে যে, যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডার-ইন-চিফ হওয়ার মেজাজ তার রয়েছে। উভয় শিবিরই নিজ নিজ সমর্থকদের প্রত্যাশা মেটাতে উঠে পড়ে লেগেছে। হিলারির কমিউনিকেশন্স পরিচালক পালমিরি বলেন, ‘বিতর্কের আগে বিশেষ সতর্কতা নেয়ার দাবি জানাতে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করার ঘটনা নজিরবিহীন। কিন্তু এছাড়া কোনো উপায়ও ছিল না, কারণ প্রতিপক্ষ (ট্রাম্প) হলেন একজন স্বভাবগত মিথ্যাবাদী।’
এদিকে বিতর্ককে সামনে রেখে হিলারির প্রস্তুতি নিয়ে খোঁচা দিলেও, ট্রাম্প নিজেও শুক্রবার প্রস্তুতির জন্য প্রচারাভিযান স্থগিত করেছেন। তিনি তার সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছেন হিলারিকে আক্রমণের কলাকৌশল সম্পর্কে কোনো পরামর্শ থাকলে তা ই-মেইলে পাঠাতে।
নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ৭ সপ্তাহ। ডেমোক্রেটরাও সব স্থগিত করছে। শক্তিমত্তা পুনরুদ্ধারে বিতর্ককেই একমাত্র উপায় ভাবছে না হিলারি শিবির। তবে এসব বিতর্কের দর্শক থাকবেন অনেকে। পালমিরি বলেন, ‘হিলারি বিতর্ককে ভীষণ গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন। লাখ লাখ মানুষের সামনে যাবেন তিনি, হয়তো ১০ কোটি আমেরিকানের সামনে। তাদেরকে বোঝাবেন কেন তাদের ভোট তার দরকার।’
স্টান গ্রিনবার্গ একজন ডেমোক্রেট কৌশলবিদ, যিনি বিল ক্লিনটন, আল গোর, টনি ব্লেয়ার ও নেলসন ম্যান্ডেলার হয়ে কাজ করেছেন। তিনিও একমত যে, দোদুল্যমান ভোটারদের ঘরে টানতে এবার বিতর্কই হয়ে উঠবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এ সময়টায় মানুষ একটু খোলাসা হয়। যখন শেষ বিতর্ক হয়ে যায়, আর মানুষ নিজেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, আপনি খোলা চোখেই তা দেখতে পাবেন। আমার মনে আছে, রস পেরেট ও বিল ক্লিনটনের ১৯৯২ সালের বিতর্কে কয়েকদিনের মাথায় আমরা সমর্থন নিশ্চিত করে ফেলি। তাই বিতর্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ আল গোরের বেলায় বিতর্ক বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। গ্রিনবার্গ বলেন, বিতর্কের আগে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী জর্জ ডব্লিউ বুশের চেয়ে ৭ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু তিন বিতর্ক শেষে আল গোর ৫ পয়েন্ট এগিয়ে গিয়েছিলেন।
অবশ্য ডিবেট পারফরম্যান্সই সব পার্থক্য গড়ে দেয় না। যেমন, বারাক ওবামার বিরুদ্ধে চার বছর আগে বিতর্কে ভালোই করেছিলেন মিট রমনি। গ্রিনবার্গ বলেন, ‘তারও চার বছর আগে জন কেরিও ভালো করেছিলেন জর্জ বুশের বিরুদ্ধে। জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছিল কেরিই জিতবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিতর্ক আর জনমত জরিপ- কোনোটিই ভোটে কোনো প্রভাব ফেলেনি। এমনকি পরে গবেষণায় দেখা যায়, সেবার দুই দলের ভোটও খুব একটা পাল্টেনি।’ গ্রিনবার্গের বিশ্বাস হিলারি বিতর্ক ও নির্বাচন- দুটোই কোনো না কোনো ভাবে জিতবেন। তার ভাষ্য, ‘হিলারি অনেক বিতর্ক করেছেন। তিনি বিতর্কে ভীষণ অভিজ্ঞ। ভালো বিতর্কও করেন।’ এই প্রবীণ কৌশলবিদ আরো বলেন, ‘হিলারি প্রস্তুত থাকবেন। আমি বেশ আত্মবিশ্বাসী যে এর দরুন অবশ্য পুরো নির্বাচনে খুব একটা পরিবর্তন আসবে না। আমার কোনো ধারণাই নেই যে ট্রাম্প কী করবেন। এটি আগাম অনুমান করা কঠিন। তবে আমি মনে করি হিলারি বেশ দৃঢ় ও অবিচল বিতার্কিক।’