কেক কেটেই খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন

16/08/2015 10:24 amViews: 8
কেক কেটেই খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন

জন্মদিন উপলক্ষে গুলশান কার্যালয়ে নেতাদের নিয়ে কেক কাটছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া-যুগান্তর

প্রথম প্রহরে কেক না কাটলেও শনিবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নেতাকর্মী পরিবেষ্টিত হয়েই ৭০তম জন্মদিন উদযাপন করলেন খালেদা জিয়া। জন্মদিন উপলক্ষে নেতাকর্মীদের আনা ৫টি কেক পরপর কাটেন তিনি। এর আগে তার সুস্থতা কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

রাত ৯টা ৫ মিনিটে গুলশান কার্যালয়ে আসেন খালেদা জিয়া। এ সময় সেখানে আগেই উপস্থিত কয়েক হাজার নেতাকর্মী তাকে তুমুল করতালি দিয়ে স্বাগত জানান। তিনি হাত নেড়ে অভিনন্দনের জবাব দেন। এরপর তারা দলীয় নেত্রীকে ফুল দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। পর্যায়ক্রমে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা সারি বেঁধে চেয়ারপারসনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। জন্মদিন উপলক্ষে গুলশান কার্যালয়ের ভবনের প্রধান ফটক থেকে ভেতরের কক্ষগুলো আলোকসজ্জাসহ সাজানো হয়।

কেক কাটার পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পায়ে হালকা সমস্যা আছে আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। এ সময় তিনি দেশবাসীর কাছেও দোয়া চান। লন্ডন যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময়-সুযোগ মতো যাব।

এর আগে, জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে সন্ধ্যার পর খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে ভিড় করেন দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকরা। অনেকে ফুল, মিষ্টি ও কেক নিয়ে আসেন। দুপুরেই গুলশান কার্যালয়ে চেয়ারপারসনের ৭০তম জন্মদিন উপলক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল নেতারা ৭০ পাউন্ড ওজনের কেক নিয়ে আসেন।

জন্মদিন উপলক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, রুহুল আলম চৌধুরী, সাবিহ উদ্দিন, আবদুল কাইয়ুম, এজেডএম জাহিদ হোসেন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আবদুল মান্নান, মোহাম্মদ শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, খন্দকার গোলাম আকবর, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, অ্যাডভোকেট আবদুস সামাদ আজাদ, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খায়রুল কবীর খোকন, মামুনুর রশীদ, আকরামুল হক খান, আফরোজা আব্বাস, শামা ওবায়েদ, জাসাসের আবদুল মালেক, মনির খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের হাবিব-উন নবী খান সোহেল, শরাফত আলী সপু, শফিউল বারী বাবু, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেন, নুরুল ইসলাম নাসিম, মহিলা দলের নুরী আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের মুনির হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফতসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে শনিবার বিকালে বনানীতে দলের কেন্দ্রীয় এক নেতার বাসায় মহিলা দলের নেতাকর্মীরা কেক কেটে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সভাপতি নুরী আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, বিলকিস জাহান শিরীন, বিলকিস ইসলাম, সুলতানা আহমেদ, ফরিদা ইয়াসমিনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

এর আগে সকালে পল্টনে একটি ভবনে খালেদা জিয়ার জন্মদিনে তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জোটের শরিক লেবার পার্টি। এ সময় পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইঞ্জিনিয়ার ফরিদ উদ্দিন, এমদাদুল হক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ফারুক রহমান, আবদুর রহমান খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন লেবার পার্টি ঢাকা মহানগর সহ-সভাপতি মাওলানা আনোয়ার হোসাইন। এছাড়া বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটার খবর পাওয়া যায়।

প্রথম প্রহরে কেক কাটা হয়নি খালেদা জিয়ার নির্দেশেই : ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে নতুন করে ‘ঝামেলা’ এড়াতেই দলীয় চেয়ারপারসনের জন্মদিনের প্রথম প্রহরে কেক কাটেনি বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। খালেদা জিয়ার নির্দেশেই এমনটা করা হয়েছে বলে জানান দলের একাধিক নেতা। বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকেও জন্মদিন পালনের বিষয়টি উঠে আসে বলে দলীয় সূত্র জানায়। বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের কেউ কেউ জন্মদিনের প্রথম প্রহরে কেক কাটার পক্ষে মত দেন। তবে পরের দিন কেক কাটতে অনুরোধ করেন কয়েকজন। এর পরই খালেদা জিয়া বলেন, কেউ চাইলে একদিন পর জন্মদিন পালন করতে পারেন। তবে দলের ‘কট্টরপন্থীদের’ দাবি, শুক্রবার থাকায় খালেদা জিয়া কার্যালয়ে না আসায় কেক কাটা হয়নি।

নেতাকর্মীদের একটি অংশ জানান, বিগত আন্দোলনে দলীয় নেতাকর্মীদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় প্রায় ২২ হাজার মামলা হয়েছে। প্রথম প্রহরে জন্মদিন পালন করতে গেলে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে নতুন করে ঝামেলা তৈরি হতে পারে। ফলে দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর আরও হামলা-মামলা হতে পারে বলে মনে করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এসব কারণেই এবার বিএনপি বা তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঘটা করে ১৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে জন্মদিনের কেক কাটা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেন খালেদা জিয়া। সূত্র জানায়, দলের অন্যতম অঙ্গসংগঠন স্বেচ্ছাসেবক ও মহিলা দল প্রথম প্রহরে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনে গিয়ে কেক কাটার প্রস্তুতি নিলেও শুক্রবার রাতেই তাদের নিষেধ করা হয়। পরে সব অঙ্গসংগঠনকে শনিবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে কেক নিয়ে আসতে বলা হয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি দয়া করে ১৫ আগস্ট আপনার জন্মদিন পালন না করে ১৬ বা ১৭ তারিখ করেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপির মুখপাত্র ডা. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, বিএনপি বাংলাদেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল। তার নেতাকর্মী-সমর্থক-ভক্ত রয়েছে। এটা তাদের অনুভূতির ব্যাপার। খালেদা জিয়া নিজে কখনও জন্মদিন পালন করেন না।

তবে বিএনপির ‘কট্টরপন্থী’ হিসেবে পরিচিত নেতাকর্মীরা জানান, শুক্রবার থাকায় চেয়ারপারসন কার্যালয়ে না আসায় কেক কাটা হয়নি। এখানে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে নতুন করে ঝামেলায় জড়ানোর কিছু নেই। আর চেয়ারপারসন তো কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জন্মদিন পালনের কোনো কর্মসূচির নির্দেশ দেন না। নেতাকর্মীরা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাতে কেক নিয়ে তার কার্যালয়ে যান। তিনি সবাইকে নিয়ে কেক কাটেন। এমনকি সেই কেকগুলো এতিমদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া হয়।

তারা দাবি করেন, ২০০৯ সালে ১৪ আগস্ট ছিল শুক্রবার। ওইদিন খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে না গেলেও ১৫ আগস্টের প্রথম প্রহরে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে যুবদলের নেতাকর্মীরা বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে ৬৫ পাউন্ড ওজনের কেক কেটে জন্মদিন পালন করে। কিন্তু এবার গুলশান বা নয়াপল্টনের কোথাও প্রথম প্রহরে কেক কাটা হয়নি। এমনকি দিনেও নয়াপল্টন কার্যালয়ে কোনো কেক কাটা হয়নি।

Leave a Reply