কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা আসছেন
৩ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা আসছেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী জাবের আল মুবারক আল হামাদ আল সাবাহ। আগামী ৩রা মে বিকালে চার্টার্ড বিমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন তিনি। তাকে স্বাগত জানাতে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। সফরের দ্বিতীয় দিনে (৪ঠা মে) জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে সফরের আনুষ্ঠানিকতা করবেন তিনি। ওই দিন বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে তার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, কুয়েতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেশটির অর্থ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ৫০ সদস্যের প্রতিনিধি দল আসছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে অন্তত আধা ডজন চুক্তি সই হতে পারে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের অংশ হিসেবে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরটি হচ্ছে। বাংলাদেশ সফর শেষে তিনি পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, জাপান ও হংকং সফর করে কুয়েত সিটিতে ফিরবেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ কুয়েত সফরে জানানো আমন্ত্রণের ভিত্তিতেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাবের আল মুবারক আল হামাদ আল সাবাহ ঢাকা আসছেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছাড়াও প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি। সফরের শেষ দিনে (৫ই মে) সাক্ষাৎটি হতে পারে। রাষ্ট্রীয় সফরের রীতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করবেন। সফরের দ্বিতীয় দিনে ওই ভোজ হতে পারে। কুয়েতি প্রধানমন্ত্রীর সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত সরকারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা গতকাল মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে বলেন, কুয়েতে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে। উপসাগরীয় যুদ্ধের পর কুয়েতের পুনর্গঠন এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের কিছুটা হলেও অবদান রয়েছে। দেশটির চলমান সরকারি উন্নয়ন কার্যক্রমে বাংলাদেশের প্রায় ৪ হাজার দক্ষ জনশক্তি নিয়োজিত রয়েছে। কুয়েতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় সুদৃঢ় উল্লেখ করে সরকারি ওই কর্মকর্তা বলেন, কুয়েতের সঙ্গে সহযোগিতা বিদ্যমান সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া এবং আগামী দিনে এ সম্পর্কের সুফল বের করে আনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন আনুষ্ঠানিক বৈঠকে আলোচনা হবে। সেই বৈঠকে দুই দেশের সহযোগিতার বিষয়গুলো চিহ্নিত হবে। ওই বৈঠকের এজেন্ডা এবং চুক্তিগুলো চূড়ান্ত করতে আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। ওই বৈঠবে দক্ষ শ্রমিক রপ্তানি, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ, কুয়েতের অর্থায়নে তেল শোধনাগার স্থাপন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন তুলে ধরবেন। দুই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে জানিয়ে সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যমান প্রতিরক্ষাবিষয়ক সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া, তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এবং কৃষিতে সহযোগিতাসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে দুই দেশের অভিন্ন স্বার্থ, মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি, ওআইসি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ কুয়েত থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল আমদানি করে থাকে। আমদানি করা অপরিশোধিত তেল শোধন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে একটি তেল শোধনাগার গড়ে তোলার জন্য কুয়েতের সহায়তা চাওয়া হতে পারে। কুয়েত বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক নেয়ার জন্য আগ্রহ দেখালে শ্রমিক রপ্তানি চুক্তির প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। তবে সব কিছুই চূড়ান্ত হবে আজকের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর।