কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ আলী ভিক্ষা করে বেঁচে আছ

04/12/2019 8:19 pmViews: 10
পরিবার নিয়ে ভিক্ষা করে বেঁচে আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ আলী
মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ আলী। ছবি: ইত্তেফাক

দারিদ্র্যের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ে পরাস্ত হয়ে এখন ভিক্ষা করে সংসার চালাচ্ছেন এক হতভাগ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা। নাম তার মুরাদ আলী (৭২)। পিতার নাম মৃত ওয়াজ আলী। বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের অঞ্জনগাছী গ্রামে।

জীবনবাজী রেখে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া সত্বেও দেশের অনেক অকুতোভয় বীরসেনানী; প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার এখনও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম ওঠেনি। সেই বঞ্চিত তালিকার একজন মুরাদ আলী।

জানা যায়, মুরাদ আলী ১৯৭১ সালে নিজ গ্রাম অঞ্জনগাছীর আজগর, পিয়ার, নূর হোসেন, ইনতাজ, ইয়াকুব, সাদেক, আবুল, আইনাল, মনছুর, শের আলীসহ আরও কয়েকজন টগবগে যুবক মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন তারা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আনছার ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার তাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

দেশ স্বাধীন হলে সহযোদ্ধাদের অনেকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান পেলেও বাদ পড়েন মুরাদ আলী। নাম তালিকাভুক্ত করতে তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের দপ্তরে অসংখ্যবার আবেদন-নিবেদন করেও আশানুরূপ ফল লাভে ব্যর্থ হয়েছেন।

২০১২ সালে আকস্মিকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে উপনীত হন মুরাদ আলী। চিকিৎসায় সে যাত্রায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এলেও মুরাদ আলীর শরীরের ডানপাশ প্যারালাইজড হয়ে যায়।হতদরিদ্র হওয়ায় এমনিতেই সংসারে যখন নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা, তার সঙ্গে যুক্ত হয় ব্যায়বহুল চিকিৎসার খরচ। সংসারের চাকা ঘোরাতে নুন্যতম সম্মানজনক সব আয়ের পথ রুদ্ধ হয়ে গেলে নির্মম বাস্তবতার মুখে তাকে বেছে নিতে হয় ভিক্ষাবৃত্তিকে।

সেই থেকে ৩/৪বছরের বেশি সময় ধরে মুরাদ আলী প্যারালাইজড শরীর নিয়ে নিজ গ্রাম ছাড়াও আশেপাশের গ্রাম ও হাটবাজারে ভিক্ষাবৃত্তি করেছেন। ভিক্ষাবৃত্তির অর্থ দিয়ে তার সংসার চলে।

মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ আলীর ভিক্ষা করার বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয়। বিভিন্ন বেসরকারী সংগঠন থেকে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়। তবে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কাজ করা ঢাকাস্থ ‘জেগে আছি’ নামের একটি সংগঠন মাসিক ভিত্তিতে মুরাদ আলীকে সামান্য আর্থিক সহায়তা দেন। তাছাড়া আর কেউ কিংবা রাষ্ট্রীয়ভাবে সহায়তায় কেউ এগিয়ে আসেনি।

মুরাদ আলীর স্ত্রী, ৪ মেয়ে ও ১ ছেলের সংসার। সর্বকনিষ্ঠ মেয়ে মরিয়ম ২ বছর আগে অর্থাভাবে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি। মরিয়ম হতদরিদ্র পিতার সংসারে বোঝা হয়ে না থেকে ৩ স্ত্রী ছেড়ে চলে যাওয়া এক ছেলের সঙ্গে বিয়ে করতে বাধ্য হন।

মুরাদ আলী এখনও আশা করে আছেন, সরকার তার মতো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবে। তার সংসারে অন্তত দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে।

Leave a Reply