কাশি ও হৃদরোগের সম্পর্ক
ঘন ঘন কাশিতে আক্রান্ত হওয়া ও দীর্ঘমেয়াদি শুকনো কাশির অন্যতম কারণ হৃদরোগ। যারা দীর্ঘদিন যাবৎ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, যাদের হৃৎপিণ্ডে ভাল্বের সমস্যা আছে, যারা বাতজ্বরজনিত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বা হয়েছেন তাদের মধ্যে এ ধরনের কাশির প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। মাইওকার্ডাইটিস এক ধরনের প্রদাহজনিত অসুস্থতা। যার ফলে শুকনো কাশি ও তার সঙ্গে জ্বর, শ্বাসকষ্ট এবং ক্ষেত্র বিশেষে হাত, পা ও মুখ ফুলে যায়, বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট হওয়ার মতো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। সাধারণভাবে ভাইরাস জ্বরের প্রভাবে মাইওকার্ডাইটিস হয়ে থাকে, তবে অন্যান্য কারণেও মাইওকার্ডাইটিস হতে পারে যেমন- কিডনি ফেইলুর, যক্ষ্মা, বাতজ্বরজনিত জটিলতা ও ক্যান্সারের কেমো ও রেডিওথেরাপি ইত্যাদি। কার্ডিওমাইওপ্যাথি হৃৎপিণ্ডের মাংশপেশির এক ধরনের অসুস্থতা। যার ফলে দীর্ঘ মেয়াদি কাশি ও শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড়, বুকে ব্যথা হয়ে থাকে। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে মনে করতে হবে, রোগীর হার্ট বেশ দুর্বল হয়ে গেছে এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিতে হবে, তা না হলে জীবন বিপন্ন হতে পারে। কার্ডিওমাইওপ্যাথি অনেক কারণেই হতে পারে। যেমন- হৃৎপিণ্ডের রক্তপ্রবাহের স্বল্পতা বা করোনারি আর্টারি ডিজিজের (ব্লক), যারা দীর্ঘদিন যাবৎ ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন বা উচ্চ রক্তচাপজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন অথবা হৃৎপিণ্ডের বাল্বের সমস্যায় ভুগছেন কিংবা জন্মগত হৃদরোগে ভুগছেন। কার্ডিওমাইওপ্যাথির আরও কারণ হলো বয়স্ক ব্যক্তি (যাদের বয়স ৭৫ বছরের অধিক) বংশগত প্রবণতা, প্রসবকালীন অসুস্থতা। সাধারণত হৃদরোগজনিত কাশি দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে। কাশি শুকনো ধরনের হয়ে থাকে, কাশির সঙ্গে কফ খুব একটা বের হয় না, কখনো কখনো ফেনা ফেনা জাতীয় কফ বের হতে পারে।
এ ধরনের কাশি বিশ্রামকালীন সময়ের চেয়ে পরিশ্রম করার সময় বেশি পরিলক্ষিত হয়। অনেকের রাতে বিছানায় শুতে গেলে কাশি শুরু হয়ে যায় এবং উঠে বসে গেলে তা প্রশমন হয়। এ ধরনের কাশি বেশি দিন বিদ্যমান থাকলে রোগীর বুকে, পেটে ও পিঠে ব্যথা অনুভূত হয়। ক্ষেত্র বিশেষে কাশির সঙ্গে রক্ত দেখা দিতে পারে। রোগ নির্ণয়ের জন্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে ইসিজি, চেষ্ট এঙ্-রে ও ইকো-কার্ডিওগ্রাম করে নিশ্চিত হওয়া যায়।
লেখক : সিনিয়র কনসালটেন্ট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা। ফোন : ০১৯৭১-৫৬৫৭৬১।