কারচুপি হলেই কর্মসূচি দেবে বিএনপি

25/12/2015 5:44 pmViews: 6
কারচুপি হলেই কর্মসূচি দেবে বিএনপি
কারচুপি হলেই কর্মসূচি দেবে বিএনপিআর মাত্র ৫ দিন বাকি পৌরসভা নির্বাচনের। আগামী ৩০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় একযোগে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নানা শঙ্কার মধ্যেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে পৌরসভা নির্বাচনের ভোটযুদ্ধে নেমেছে বিএনপি। শুরুতে নির্বাচনে থাকা না থাকা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনী লড়াই চালিয়ে যাবে। ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই নির্বাচনী সহিংসতাও বাড়ছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীদের প্রচারণায় হামলার ঘটনা ঘটছে। কোনো কোনো স্থানে প্রার্থীদের বাসাবাড়িতে হামলা হচ্ছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের। ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে ভোটারদের। ভোটের আগেই এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিএনপির প্রার্থীরা ভুগছেন অস্বস্তিতে। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, এসব হামলার ঘটনায় তারা স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। বরং কোথাও কোথাও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। বিএনপির এক নীতিনির্ধারক মানবকণ্ঠকে বলেন, ভয়ভীতি, হামলা উপেক্ষা করেই আমরা ভোটের লড়াইয়ে আছি। থাকব। তবে ভোটের ফলাফল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হলে আমরা বসে থাকব না। জানা গেছে, দল পুনর্গঠন না হলেও পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপি হলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নামবে। পৌরসভা নির্বাচন মনিটরিং করছেন বিএনপির এমন এক নেতা মানবকণ্ঠকে বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপি হলে এই ইস্যুকে সামনে নিয়েই আমরা আন্দোলনে নামব। প্রাথমিকভাবে দলের এমন সিদ্ধান্ত রয়েছে। কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া হবে তা পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্ধারণ করা হবে। ৩০ ডিসেম্বর ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নতুন জাতীয় নির্বাচন আদায়ের আন্দোলন ও পৌরসভা নির্বাচন একসঙ্গে চলবে। পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপি করা হলে জনগণ এর উপযুক্ত জবাব দেবে। আন্দোলন-নির্বাচনের সঙ্গে দল পুনর্গঠনের কাজ এগিয়ে নেয়ার কথাও জানান বিএনপির এই নীতিনির্ধারক।
গতকাল বৃহস্পতিবার কুমিল্লার লাকসামে আওয়ামী লীগের এমপি তাজুল ইসলামের এপিএস মনিরুল ইসলাম রতনের নেতৃত্বে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী গণসংযোগে হামলা ও ভাঙচুর করেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা। পৌরসভার গাজীমোড়া এলাকায় এই হামলায় বিএনপির সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজিম ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মজির আহমেদের গাড়িবহরও ভাঙচুর করা হয়। একই দিন সকালের দিকে যশোরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মারুফুল ইসলামের গণসংযোগে হামলা চালানো হয়। এ সময় বিএনপির বেশ কয়েক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের পরে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বগুড়ায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী মাহাবুুবুর রহমানকে ধাওয়া দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় ছাত্রলীগের হামলায় সুজন নামে বিএনপির একজন কর্মী আহত হয়েছেন। হামলার ঘটনা ঘটেছেও শরীয়তপুরেও। এছাড়া নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্রেফতার অভিযানে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির তিনজন কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এর আগের দিন বুধবার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার সময় কুমিল্লায় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুক ও পটুয়াখালীতে ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর হামলার শিকার হন।
গতকাল নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে দলের প্রার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা তুলে ধরে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ দলের প্রার্থী ও এজেন্টদের নিরাপত্তা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি নির্বিঘ্নে ভোটারদের ভোট দেয়ার গ্যারান্টিও দাবি করেছেন। দলীয় প্রার্থীদের ওপর হামলা, প্রচারে বাধা ও নেতাকর্মীদের আটকের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছে। বিএনপি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানায়। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী নামানোর মতো পরিস্থিতি হয়নি।
এদিকে দলীয় প্রার্থীদের প্রচারণায় হামলা, নেতাকর্মীদের আটক, নেতাকর্মী ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ পৌরসভা নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি কূটনীতিকদের অবহিত করেছে বিএনপি। বুধবার দলের চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি নেতারা তাদের কাছে পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন। বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির এক নেতা কূটনীতিকদের জানান, নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করছে। ক্ষমতাসীন সরকার চায় না সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। সরকার প্রশাসনকে ব্যবহার করে কারচুপির আশ্রয় নিচ্ছে। জবাবে কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, তারা পৌরসভা নির্বাচনসহ সার্বিক পরিস্থিতির ওপর তীক্ষè নজর রাখছেন।

Leave a Reply