নরেন্দ্র মোদির সফরে প্রত্যাশা পুরণ না হওয়ায় জনগণ হতাশ হয়েছে : জামায়াত
নরেন্দ্র মোদির সফরে প্রত্যাশা পুরণ না হওয়ায় জনগণ হতাশ হয়েছে : জামায়াত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ আজ রোববার এক বিবৃতিতে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর থেকে দেশের জনগণের প্রত্যাশা পুরণ না হওয়ায় জনগণ হতাশ হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯টি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা সারক সাক্ষর হওয়ার কথা উল্লেখ করে মকবুল আহমাদ বলেন, এ সবই কার্যত ভারতের প্রয়োজনেই সম্পাদিত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ আশা করেছিল এ সফরে তিস্তা নদী ও ফেনীর মুহূরী নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাবে বাংলাদেশ। কিন্তু এ দুটি নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ জনগণ দেখতে পায়নি। দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান অসম বাণিজ্য, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধ, অপদখলীয় ভূমি হস্তান্তর, অনিষ্পন্ন সীমানা নির্ধারণ এবং পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরার সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত বিরোধের কোনো সমাধান এ সফরের মাধ্যমে জনগণ পায়নি। এদেশের জনগণ আশা করেছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ সফর বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জনগণের প্রত্যাশা পুরণ করবে। কিন্তু দেশের জনগণের নিকট গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কার্যকর কোন সহায়ক পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি।
বিবৃতিতে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির বলেন, বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে গত ১ জুন আমরা এক বিবৃতি দিয়েছিলাম। বাংলাদেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ অধীর আগ্রহে বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হবে বলে বুকভরা আশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরে দ্বিপাক্ষীক বাণিজ্য, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল ও দুই রুটে বাস চলাচলের বিষয়ে চারটিসহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯টি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা সামুদ্রিক বন্দর ব্যবহারের সুযোগ পাবে ভারত। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে উত্তর ভারতে যাওয়ার ট্রানজিট সুবিধা পাবে উত্তর-পূর্ব ভারত। এ সবই কার্যত ভারতের প্রয়োজনেই সম্পাদিত হয়েছে। বাংলাদেশের সাথে সীমান্তবর্তী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের এ সফরে সফরসঙ্গী হিসেবে সাথে নিয়ে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশের জনগণ আশা করেছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে তিস্তা নদী ও ফেনীর মুহূরী নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাবে বাংলাদেশ। কিন্তু এ দুটি নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা না হওয়ায় বাংলাদেশের জনগণ হতাশ হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন নদীসমূহের পানি বণ্টনের কোনো সমস্যার সমাধান না হওয়ায় বাংলাদেশ মরুভূমি হতে চলেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশের জন্য এক গুরুতর সমস্যা হচ্ছে ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশীদের হত্যা। প্রধানমন্ত্রীর সফরে এ সব সমস্যার সমাধান হবে বলে জনগণ আশা করেছিল। কিন্তু তারও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ জনগণ দেখতে পায়নি। দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান অসম বাণিজ্য, টিপাইমুখ বাধ নির্মাণ বন্ধ, অপদখলীয় ভূমি হস্তান্তর, অনিষ্পন্ন সীমানা নির্ধারণ এবং পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরার সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত বিরোধের কোনো সমাধান এ সফরের মাধ্যমে জনগণ পায়নি।
মকবুল আহমাদ বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ববাসীর নিকট এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের নিকট এটা স্পষ্ট যে, বর্তমান সরকার ৫ জানুয়ারি ২০১৪ নির্বাচনের নামে একটি প্রহসনের আয়োজন করে ক্ষমতা দখল করেছে। শতকরা ৫ ভাগ ভোটারও ওই নির্বাচনে ভোট দেয়নি। বাংলাদেশের এই নির্বাচনের বিষয়ে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচনের দ্রুত আয়োজনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এদেশের জনগণ আশা করেছিল জনগণের প্রত্যাশা ও গণতান্ত্রিক দেশসমূহের আহ্বানের পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ সফর বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জনগণের প্রত্যাশা পুরণ করবে। কিন্তু দেশের জনগণের নিকট গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কার্যকর কোন সহায়ক পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি। সার্বিকভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর থেকে দেশের জনগণের প্রত্যাশা পুরণ না হওয়ায় জনগণ হতাশ হয়েছে।
তিবি বলেন, আমরা আশাকরি বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অর্থবহ ভূমিকা ও দু’দেশের বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন।
শীর্ষ নেতাদের মুক্তি দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সোমবার
আগামীকাল সোমবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ করবে জামায়াতে ইসলামী।
পবিত্র রমযানের আগেই দলটির সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে ও সরকারের জুলুম-নির্যাতনের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করবে তারা।
গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটির সব শাখার নেতাকর্মীদের প্রতি শান্তিপূর্ণভাবে পালনের আহ্বান জানান এবং দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।