কাতারের মতো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে লেবাননে?

15/11/2017 5:03 pmViews: 6

কাতারের মতো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে লেবাননে?

 

কাতারের মতো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে লেবাননে?কাতারের মতো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে লেবাননে?

 

লেবাননের রাজনীতিবিদ ও ব্যাংকারেরা মনে করে সৌদি আরব তাদের ওপরও কাতারের মতো নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। তবে কাতারের মতো এই অবরোধ কাটিয়ে ওঠার মতো সক্ষমতা তাদের নেই।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় চার লাখ লেবানিজ কাজ করেন। এখানে থেকেই বছরে ৭০০-৮০০ কোটি ডলার আয় হয় দেশটির। ঋণগ্রস্ত সরকারে আয়ের বড় উৎস তাই শ্রমসম্পদ। লেবাননের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রতিকূল অবস্থায় থাকা লেবাননের জন্য এটা বড় হুমকি। তারা যদি এই বৈদেশিক মুদ্রা আসার পথ বন্ধ করে দেয় তবে বড় বিপদে পড়বে লেবানন।’
গত ৫ জুন কাতারের ওপর সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের অভিযোগ এনে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসরসহ কয়েকটি দেশ। এই দাবি বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে কাতার। ৪ নভেম্বর সৌদি সফরে থাকাকালীনই হঠাৎ করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি। আকস্মিক এই ঘটনায় রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়ে লেবানন।
রোববার হারিরি নিজেই সৌদি নিষেধাজ্ঞার আভাস দিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে না পড়তে চাইলে সৌদি আরবের দেয়া শর্তও উল্লেখ করেন তিনি। লেবাননে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হিজবুল্লাহকে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে বলা হয়। বিশেষ করে ইয়েমেনে।
সৌদি আরবের এই পদক্ষেপের সঙ্গে পরিচিত এক কর্মকর্তা বলেন, হারিরির বক্তব্যে আভাস মিলেছে সৌদি কর্তৃপক্ষের দাবি মেনে না নিলে আমাদের বিপক্ষে কী ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। আর কাতারের উদাহরণ তো সামনেই আছে।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে লেবানন নিয়ে সৌদি নীতির পরিবর্তন এসেছে। মূলত তিনিই এখন সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী।
হারিরির পদত্যাগের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার করতে সৌদি আরব ও ইরানের ছায়াযুদ্ধের বিষয়টিই আবার সামনে চলে আসে। ১৯৭৯ সালে ইরানে সংঘটিত বিপ্লবের পর থেকেই দেশটিকে ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় পরিসরে শক্ত প্রতিপক্ষ বিবেচনা করে আসছে সৌদি আরব। সৌদি আরবের আশঙ্কা, ইরান তাদের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। ইরাকযুদ্ধ ও আরব বসন্তের সুযোগ নিয়ে বাড়াতে পারে অঞ্চলগত প্রভাব। বাগদাদ, দামেস্ক, সানা ও বৈরুতের ধারাবাহিকতায় তেহরান মধ্যপ্রাচ্যের বাদ বাকি দেশগুলোকে নিজেদের কব্জায় নিতে পারে বলেও আশঙ্কা সৌদি আরবের। এই বাস্তবতায় মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করার লড়াইয়ে নেমেছে তারা।
‘লেবাননের জনগণের ঐক্য হারিরিকে অবস্থান স্পষ্ট করতে বাধ্য করেছে’
এ দিকে লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির পদত্যাগের ব্যাপারে দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেয়ার কারণে হারিরি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে বাধ্য হয়েছেন। আউন বলেন, সাদ হারিরি দেশে ফিরে আসার পর তার পদত্যাগ সংক্রান্ত সব জল্পনার অবসান হবে এবং সব ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও দূর হবে।
সাদ হারিরি রোববার লেবাননের আল-মুস্তাকবেল টেলিভিশনকে দেয়া লাইভ সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি দুই-তিন দিনের মধ্যে দেশে ফিরবেন এবং এরপর নিজের হাতে প্রেসিডেন্ট আউনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন।

সৌদি প্রিন্সদের বিচারে নিরপেক্ষ থাকার প্রতিশ্রুতি সরকারের

রয়টার্স

দুর্নীতির অভিযোগে আটক প্রিন্সসহ উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা আর ধনকুবেরদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সৌদি আরব। সোমবার জাতিসঙ্ঘে নিয়োজিত সৌদি দূত আবদুল্লাহ আল-মোয়াল্লিম এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যথাযথ বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সৌদি রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ সূত্রকে উদ্ধৃত করে মিডল ইস্ট আই-এর সাম্প্রতিক এক খবরে আটককৃতদের একাংশের ওপর শারীরিক নিপীড়নের অভিযোগ তোলা হয়। এই অভিযোগের মুখে সৌদি আরব তাদের জন্য আইনি সুরক্ষা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

সৌদি আরবে সাম্প্রতিক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে রাজপরিবার থেকে ২০১ জনকে আটকের কথা জানানো হলেও রাজ দরবারের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানায়, আটককৃতদের প্রকৃত সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। এদের মধ্যে কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তির ওপর বেধড়ক পিটুনি ও নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠে। তবে জাতিসঙ্ঘের সৌদি দূত দাবি করেছেন, নিরপেক্ষ বিচারকই আটককৃতদের বিরুদ্ধে শুনানি করবেন।

সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘের সদর দফতরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল মোয়াল্লিম বলেন, ‘আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি যে যারাই আটক হচ্ছেন তাদের যে কেউই স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়ায় বিচার পাওয়ার সুযোগ পাবেন।’ তবে কতজনকে আটক করা হয়েছে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান। বলেন, ‘আপনাদের জানানোর মতো কোনো সংখ্যা আমার জানা নেই। সঠিক সময় এলে নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ তা ঘোষণা করবে।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে সমর্থন জানিয়েছেন। তার দাবি, যারা আটক হয়েছে তারা বছরের পর বছর ধরে দেশকে শুষে খাচ্ছিল। অবশ্য, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এ ব্যাপারে ‘সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ’ বিচারপ্রক্রিয়া চালানোর জন্য রিয়াদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচও আটকের আইনি ভিত্তি ও অভিযোগের প্রমাণ হাজিরের মধ্য দিয়ে যথাযথ বিচারপ্রক্রিয়া অনুসরণে সৌদি আরবকে তাগিদ দিয়েছিল। সব মিলে আটককৃতদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু বিচারপ্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে কি না তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

Leave a Reply