কাইয়ুম কমিশনারের ভাই মতিন ৮ দিনের রিমান্ডে
ইতালীয় নাগরিক সিজারি তাভেল্লা হত্যার ঘটনায় আলোচিত ‘বড় ভাই’ ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাড্ডার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আবদুল কাইয়ুমের ছোট ভাই এমএ মতিনের ৮ দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার তাকে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এর আগে যশোরের বেনাপোল থেকে বুধবার রাতে তাকে আটক করার কথা জানিয়েছে ডিবি পুলিশ।
তবে প্রায় ১০দিন আগে বিবিসির সাথে এক সাক্ষাতকারে বিএনপি নেতা কথিত বড় ভাই আবদুল কাইয়ুম জানিয়েছেন, বিদেশী হত্যায় তাকে বলির পাঠা বানানো হচ্ছে। ওই সময় তিনি দাবি করেন, তার ছোট ভাই এম এ মতিনকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে আটক করা হয়েছে। তখন থেকে মতিন নিখোঁজ ছিলেন। এরই মধ্যে গতকাল রাতে আবদুল কাইযুমের ছোট ভাই মতিনকে গ্রেফতারের কথা জানাল পুলিশ।
ডিবির উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম রাত পৌনে ২টায় যুগান্তরকে জানান, রাত পৌনে ১২টায় বেনাপোলের একটি বাস কাউন্টারের সামনে থেকে এমএ মতিনকে আটক করে ডিবির একটি টিম। রাতেই এমএ মতিনকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন ডিবির সদস্যরা।
এদিকে পুলিশ জানায়, এমএ মতিন বিদেশী হত্যার জন্য হত্যাকারীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছেন দুই আসামি শুটার রুবেল ও কালা রাসেল।
এর আগে আটক মোহাম্মদ নাঈম ও মো. আলাউদ্দিন একটি গ্রুপ অব কোম্পানির কর্মচারী। ইতালি নাগরিক খুনের দশ মিনিটের মধ্যেই এরা নিজেদের গুলশানের অফিস থেকে টুইট বার্তা আপলোড করে। আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে এ দুজনের আটকের বিষয়টি একটি ছায়া তদন্তকারী সংস্থা নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, নাঈমকে গাজীপুরের টঙ্গীর গির্জা রোড (পাগাড়) ঝিনু মাকের্ট এলাকা থেকে আটক করা হয়। আর আলাউদ্দিনকে গুলশানে ৪৪ নম্বর রোডের ওই গ্র“প অব কোম্পানির সামনে থেকেই আটক করে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। নাঈম ও আলাউদ্দিন তাভেল্লা খুনের পরপরই ফরিদ ও মারুফ ছদ্মনাম দিয়ে ব্লগিং শুরু করে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধমে তাভেল্লা খুনের ঘটনা প্রচার করে। তাভেল্লাকে আইএস সদস্যরা খুন করেছে বলে এ চক্রটি প্রচার চালায়। অথচ বাংলাদেশে কথিত আইএসর কোনো অস্তিত্ব নেই বলে নিশ্চিত করছে সরকার। মূলত ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্যই নাঈম ও আলাউদ্দিন চক্র এ ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছে। এ কাজে তারা নিজেদের অফিসের ইন্টারনেট লাইন ব্যবহার করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বার্তা আপলোড করার পরপরই আইডিগুলো তারা নিষ্ক্রিয় করে দেয়। টুইট করার সময় তারা নিজেদের উগ্রপন্থী দলের সদস্য হিসেবে দাবি করেছে। এ ধরনের দলের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, তাভেল্লা খুনের পর আন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে নাঈম ও আলাউদ্দিন। তাদের চক্রে থাকা অন্য সদস্যের গ্রেফতারেও অভিযান চলছে। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও আলোচনা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে ওই প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। দুই কর্মচারী আটকের পর গ্রুপ অব কোম্পানির পক্ষ থেকে বিভিন্ন মহলে তদবির চলছে। তারা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নানা মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে ।
সূত্র জানায়, আটককৃতদের মধ্যে নাঈম নিজেকে খিলাফতে রাশেদীন হিসেবে দাবি করেন। তার সহযোগী হলেন আলাউদ্দিন। ওই গ্রুপটির একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন নাঈম। আর আলাউদ্দিন একজন অপারেটর।
তাভেল্লা খুনের পর প্রযুক্তিগত তদন্তে গুলশান-২-এর ৪৪ নম্বর সড়কে ওই গ্রুপ অব কোম্পানির অফিসকে সন্দেহজনক পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেন গোয়েন্দারা। আর এ পয়েন্ট থেকে ব্লগের মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে যোগযোগ করেন চক্রের সদস্যরা। এখান থেকেই বিদেশী নাগরিক খুনের তথ্য ফেসবুক এবং পাঁচটি টুইটবার্তায় আপলোড করা হয়। এ কাজে ছয় থেকে সাতটি ফেসবুক আইডিও ব্যবহার করা হয়েছিল। কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা টুইটবার্তা এবং ফেসবুক আইডিগুলো নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এসব আইডিও শনাক্ত করা হয়েছে।