করোনা থেকে দেশবাসীকে মুক্ত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি : প্রধানমন্ত্রী
করোনা থেকে দেশবাসীকে মুক্ত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সঠিকভাবে নির্দেশনা অনুসরণের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সরকার দেশকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা ভাইরাস এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে এখানে হয়তো মৃতের সংখ্যা তেমন না কিন্তু আতঙ্ক অনেক বেশি। কাজেই এই প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে এই সংক্রান্ত নির্দেশনা সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে।’ প্রায় ১১৪টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সরকার সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুজিব বর্ষ, ২০২০ উদযাপন উপলক্ষ্যে ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম-পরিচ্ছন্ন শহর’ কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে তিনি এ সব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে বলবো, সচেতন থাকা দরকার। আমরা সব সময় বুলেটিন দিয়ে যাচ্ছি। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) এর মাধ্যমে সব সময় জানানো হচ্ছে-সেগুলো অনুসরণ করবেন। নিজেরা সচেতন থাকবো, অপরকে সচেতন করবো।
তিনি বলেন, ‘এই সচেতনতামূলক যে সমস্ত নির্দেশনা আসছে সেটা সবাইকে মেনে চলতে হবে। তাহলেই আমরা কিন্তু আমাদের দেশকে ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারব।’
করোনা ভাইরাস বিষয়ে কারও যদি কোনো উপসর্গ দেখা দেয় সেটা লুকিয়ে না রেখে অবিলম্বে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘যদি কেউ কখনো মনে করেন যে কেউ এ ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বা তার কোনরকম নমুনা দেখা দিচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বিদেশ থেকে আগতদের নিজস্ব উদ্যোগেই নিজেদের ‘কোয়ারেনন্টাইনে’থাকারও পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘যারা বিদেশ থেকে আসবেন তারা নিজেরা অন্তত, বাইরের কারো সঙ্গে মিশবেন না এবং কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখবেন এই ধরনের রোগের কোনরকম লক্ষণ দেখা যায় কি-না, খেয়াল করবেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হবেন।’
শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে আগত এবং প্রবাস থেকে ফিরে আসাদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বিদেশ থেকে কেউ আসলে তার সঙ্গে মিশবেন না। তাকে অন্তত কিছুদিন আলাদা থাকতে দেবেন।’
দেশে ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত এবং চিকিৎসাধীনদের স্বাস্থ্যের উন্নতির তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা বিদেশ থেকে আসা আমাদের দুইজন নাগরিককে শনাক্ত করেছি (করোনা ভাইরাস আক্রান্ত)। তাদের চিকিৎসা করা হয়েছে, তারা মোটামুটি ভালো এবং একজন সংক্রমিত হয়েছিল। এছাড়া বাকি সবাই ভালো আছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ খুব অসচেতন। তারা যেখানে সেখানে থুতু ফেলছে। টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করে যেখানে সেখানে ছুঁড়ে ফেলছে। বাইরে থেকে ঘরে এসে হাত না ধুয়ে ছেলেমেয়েকে স্পর্শ করছে, বিভিন্ন কিছু করছে।’
তিনি বলেন, ‘যে যে কাজগুলো করলে তার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায় সে কাজগুলো করবেন না। যেখানে সেখানে কফ, থুতু ফেলবেন না। হাঁচি কাশি দিলে রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করবেন। নিজে ভালো থাকবেন, অপরকে ভালো রাখবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে অনুরোধ করবো, হাঁচি-কাশি আসলে আপনারা হাতের তালুতে না নিয়ে কনুয়ের মাধ্যমে করেন। হাত মেলানো, কোলাকুলি করা, বা কাউকে জড়িতে ধরা এগুলো সব বন্ধ রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে সাবান দিয়ে হাত ধুবেন। কখন কার মধ্যে যে এই রোগ আছে, কার মাধ্যমে চলে আসে এটা কেউ বলতে পারে না।’যানবাহনে ময়লা রাখার জন্য ঝুড়ি বা থলে রাখার পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘আমাদের সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। নিজেরা যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকি তাহলে আমরা রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারব। আর আমাদের পবিত্র ধর্মেও রয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার কথা।’
তিনি বলেন, ‘নিজেরা যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকেন তাহলে আশপাশের মানুষগুলো ভালো থাকতে পারবে না। রোগ-শোক, বালাই এগুলো সবসময় দেখা দেবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিজে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করব, এবং অপরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখব। ছাত্রছাত্রীরা তাদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখবে। নিজের কাজ নিজে করতে কোনো লজ্জা নেই।’
তিনি বলেন বিদেশে কাজের কোনো লোক নেই এবং তারা অনেক উন্নত দেশ হলেও নিজের কাজ নিজেরাই করে থাকেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে সম্মানের সাথে চলতে চাই। আর সেটা করতে গেলে আমাদের দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে । যে কারণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আমাদের সকলের জন্য প্রয়োজন। বাসস