করোনাভাইরাসে নাকাল ভারত, কমেনি মৃত্যুর হার
করোনাভাইরাসে নাকাল ভারত। দেশটিতে চলছে এ ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ। সংক্রমণের হার তুলনায় কমলেও মৃত্যুর সংখ্যা এখনো সেভাবে কমেনি সেখানে। ফলে লাশের সৎকারে শহরে স্থায়ী করোনা শ্মশান ও কবরস্থানের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি করোনায় সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের আগাম প্রস্তুতিতেও এই ব্যবস্থা সেরে রাখতে চাইছে দেশটির প্রশাসন।
মাসখানেক আগে কবরস্থানের জন্য কলকাতা পুরাসভা (পৌরসভা) বাসন্তী হাইওয়ের কাছে একটি জমি ঠিক করলেও জমিট খালপাড়ের হওয়ায় ওই জমিটি এখন পানিতে ভর্তি। ফলে জমিটিকে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা নিয়ে সংশয়ে পৌরসভা প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপারসন ফিরহাদ হাকিম।
রোববার ফিরহাদ বলেন, ‘সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ও ভরা কটালের জন্য দু’দিকের খালের মাঝে ওই জমি এখন পানিতে ভর্তি। কীভাবে ওই জায়গা ব্যবহারযোগ্য করে তোলা যায়, এ বিষয়ে পুরসভার (পৌরসভা) ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে কথা বলা হচ্ছে।’
একইভাবে কলকাতা পুরসভার (পৌরসভা) ৮০ নম্বর ওয়ার্ডের বন্দর এলাকার ভাটছালায় করোনা শ্মশান তৈরি করবে কলকাতা ‘পুরসভা’। সেখানে ছয়টি বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরি করা হবে বলে জানান ফিরহাদ। শ্মশান নির্মাণের জন্য বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট নগরোন্নয়ন (নগর উন্নয়ন) দফতরে দরপত্রের জন্য পাঠানো হয়েছে।
‘পুরসভা’ সূত্রে জানা যায়, শহরে বর্তমানে পাঁচটি শ্মশানে করোনায় মৃত লাশ সৎকার হয়। এর মধ্যে ধাপায় চারটি, গড়িয়ায় চারটি, সিরিটিতে দু’টি, বিরজুনালায় দু’টি এবং নিমতলা মহাশ্মশানে চারটি চুল্লি করোনায় মৃতদের জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে।
‘পুরসভা’ সূত্রে আরো জানা যায়, করোনায় মৃত লাশের সৎকারের জন্য সাধারণ লাশ সৎকারে বেগ পেতে হচ্ছে। গড়িয়া শ্মশানে রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত দাহ করা হয়।
‘পুরসভা’র স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভোর ৫টার পরে লাশ গেলে ওখানে আর নেয়া হয় না। রাতে দাহ করার সময়ে ধোঁয়া ওঠায় স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে একাধিকবার আপত্তি এসেছে। নতুন করোনার শ্মশান খুব প্রয়োজন।’
নিমতলা মহাশ্মশানে করোনার লাশ ছাড়াও অন্য রোগীর লাশ দাহ করা হয়। অভিযোগ, সাধারণ লাশ সেখানে নিয়ে গেলে বাড়ির লোকেদের যথেষ্ট হেনস্থার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়, বা পাশের কাশী মিত্র শ্মশান ঘাটে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
একইভাবে মুসলিম ধর্মাবলম্বী কেউ করোনায় মারা গেলে তার লাশ কবর দেয়ার জন্য রয়েছে শুধুমাত্র মানিকতলার বাগমারি কবরস্থানে। কিন্তু বাগমারিতেও জায়গার অভাব হচ্ছে।
কলকাতা ‘পুরসভা’র স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, শহরে করোনার লাশ কবর দেয়ার জন্য আলাদা একটি কবরস্থান জরুরি হয়ে পড়েছে। এর জন্য মাসখানেক আগে অম্বেডকর সেতুর কাছে কলকাতা ‘পুরসভা’ প্রায় ৯ বিঘা জমি ঠিক করেছিল। ওই জায়গায় বেশ কিছু ঝুপড়ি রয়েছে।
‘পুরসভা’র পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, জঞ্জাল অপসারণ বিভাগ ও স্থানীয় আনন্দপুর থানা পুলিশের সহায়তায় জায়গাটি পরিষ্কার করে ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের হাতে তুলে দেয়া হবে।
যদিও ওই চিহ্নিত জমির ফাইল এখনো ‘পুরসভা’র চিফ ভ্যালুয়ার অ্যান্ড সার্ভেয়ার বিভাগে পড়ে আছে। ‘পুরসভা’র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সবাই ঘূর্ণিঝড়ের দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যস্ত ছিলাম। এই বার দ্রুতগতিতে ওই কাজ যাতে এগোয়, তা দেখা হবে।’
‘পুরসভা’র এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘নিচু এলাকা বলে খাল থেকে পানি উঠে এসে জমেছে। এর জন্য ওই জমি বালিমাটি দিয়ে ভরাট করে দিলে সমস্যা মিটে যাবে। তবে এই কাজের জন্য খরচ একটু বেশি হবে।’
ফিরহাদ বলেন, ‘করোনার তৃতীয় ঢেউ আসার আগে আমাদের সব রকমভাবে প্রস্তুত থাকতেই হবে। করোনায় কবরস্থান এবং শ্মশান তৈরির কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।’
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা