কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা আইনের প্রস্তাব প্রত্যাহার

28/10/2013 4:21 pmViews: 13

প্রতিবেদক : কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা আইন-২০১৩ মন্ত্রিসভার আলোচ্যসূচি থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নির্ধারিত আলোচ্যসূচিতে থাকলেও সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইনটি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছে।

প্রসঙ্গত, গত রবিবার চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী হুমকি দিয়ে বলেছেন, কওমি শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন পাস করা হলে লাখ লাখ ‘লাশ’ পড়বে। হেফাজতের যুক্তি, সরকার আইন পাস করে কওমি শিক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এজন্য তারা ১ নভেম্বর সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়। উল্লেখ্য, ১৩ দফা দাবিতে ৫ মে ঢাকা অবরোধ করে আলোচনায় আসে হেফাজতে ইসলাম।

শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী সম্প্রতি বলেন, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার সনদের স্বীকৃতি দেয়ার জন্যই প্রস্তাবিত আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া মাদ্রাসার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও মূলধারার শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষাদানের জন্য আলেমদের সমন্বয়ে ‘কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’ গঠন করার বিধান রাখা হয়েছে আইনি খসড়ায়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আলাদা কারিকুলামে পাঁচটি বোর্ডের অধীন কওমি মাদ্রাসাগুলো পরিচালিত হলেও এসব প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সনদের স্বীকৃতি নেই সরকারের। ফলে তারা প্রচলিত শিক্ষায় ডিগ্রিধারীদের মতো চাকরিতে আবেদনের সুযোগ পান না। আরও জানা গেছে, দেশে বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার কওমি মাদ্রাসা আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কত শিক্ষার্থী আছে তার সঠিক তথ্য নেই। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নেয়া শিক্ষার্থীদের একটি অংশের দাবির মুখে বর্তমান সরকার কওমি শিক্ষা কমিশন গঠন করে। কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে আইনটি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়।

কওমি মাদ্রাসার শীর্ষস্থানীয় আলেমরা শুরু থেকেই সরকারি এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন। তারা বলছেন, কর্তৃপক্ষ গঠন হলে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে সরকার নিয়ন্ত্রণ নেবে। এর ফলে দেশে কওমি শিক্ষার স্বাধীন ধর্মীয় চর্চার পথ রুদ্ধ হবে।

কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ও এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে খসড়া আইনে মোট ২০টি ধারা ও বেশকিছু উপধারা রয়েছে। এ ছাড়া আলাদা কওমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত এই কর্তৃপক্ষ কওমি উচ্চশিক্ষার দুটি স্তর স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর দাওরা-ই-হাদিস পর্যায়ের মাদ্রাসাগুলোর অ্যাফিলিয়েটিং অথরিটি (অধিভুক্তি দেয়ার কর্তৃপক্ষ) হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। শিক্ষার মান উন্নয়নে কওমি মাদ্রাসা স্থাপন, প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা এবং এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে পাঠাবে। এছাড়া কর্তৃপক্ষের সভা, তহবিল গঠন, বাজেট, বার্ষিক প্রতিবেদন সম্পর্কে খসড়া আইনে বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে আরও বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ প্রতি দুই মাসে অন্তত একটি সভা করবে। প্রতিটি সভার কার্যবিবরণী ও গৃহীত সিদ্ধান্তের অনুলিপি সরকারের কাছে পাঠাতে হবে। গৃহীত সিদ্ধান্ত এ আইন বা ‘জাতীয় শিক্ষানীতির পরিপন্থী’ হলে তা বাতিল বা সংশোধন করার জন্য বা কার্যকর না করার জন্য সরকার নির্দেশনা দিতে পারবে এবং সে অনুসারে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

Leave a Reply