কংগ্রেসের দালালি করে কিছুই আনতে পারেনি আ’লীগ : খালেদা জিয়া
কংগ্রেসের দালালি করে কিছুই আনতে পারেনি আ’লীগ : খালেদা জিয়া
১০ মে ২০১৫,রবিবার,
ভারতের লোকসভায় সীমান্ত চুক্তি পাস হওয়ায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, কংগ্রেস সরকারের সাথে অনেক দালালি করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু কংগ্রেসের কাছ থেকে কিছুই আনতে পারেনি। শুধু দিয়েছে। তবে ৪০ বছর ধরে ঝুলে থাকার পর এবার ভারতের লোকসভায় সীমান্ত চুক্তি পাস হওয়ায় মোদি সরকারকে ধন্যবাদ। আর নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি করতেই তিনি এটি করেছেন। তিনি (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) আরো বলেছেন, কোনো দলের সাথে নয়, বাংলাদেশের জনগণের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান। বিএনপিও এটাই চায়।
গুলশান কাযার্লয়ে গত রাতে ঢাকা কর আইনজীবী সমিতির নতুন নির্বাচিত নেতাদের সাথে মতবিনিময়ের সময় এ কথা বলেন তিনি।
সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাজম আলী খান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাফর উল্লাহর নেতৃত্বে ১৭ জন নির্বাচিত কর্মকর্তাসহ জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা কর আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ২২ সদস্যের কার্যকরী কমিটির মধ্যে জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের ১৭ প্রার্থী বিজয়ী হন।
বক্তব্যের শুরুতে দলের পুনর্গঠনের ইঙ্গিত দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের দল পুনর্গঠনে যেতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা প্রক্রিয়াও শুরু করেছি। যারা ত্যাগী-পরীতি, যারা দলের বিপদের সময় কাজ করেছেন, তাদের কমিটিতে আনা হবে। তাদের মূল্যায়ন করা হবে।
কমিটি পুনর্গঠনের সময়ে কর আইনজীবীদের মধ্য থেকে প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে কাজ করার সুযোগ দেয়ার কথাও বলেন তিনি।
এ সময় খালেদা জিয়া বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদকে র্যাবের লোকজন তুলে নিয়ে গেছে। সে র্যাবের কাছেই আছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এখনো বলছি, সালাহউদ্দিনকে দ্রুত তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিন। সালাহউদ্দিনের কিছু হলে পরিণতি ভালো হবে না। তিনি বলেন, আমি বলতে চাই, বন্দুক দিয়ে সব কিছু হয় না।
১০ মার্চ উত্তরার একটি বাসা থেকে বিনএপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে।
র্যাবের তৎপরতায় ােভ প্রকাশ করে খালেদা জিয়া আরো বলেন, এরা মানুষ খুন করে। নারায়ণগঞ্জের ঘটনা দেশবাসী জানেন। তাই এ র্যাবকে নিষিদ্ধ করা দরকার।
নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় জড়িত র্যাব সদস্যদের কারাগারে ‘জামাই আদরে’ রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।
তিন সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, আজ দেশে গণতন্ত্র নেই। আইনের শাসন নেই। দেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নেই। একে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা যায় না। এটি একটি পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে গেছে। পুলিশই বলছে, তারাই এ সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে। তারা (পুলিশ) যত দিন চাইবে, তত দিন তাদের রাখবে।
তিনি বলেন, সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। সিটি নির্বাচনে তারা ভোট ডাকাতি করেছে। পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে নির্বাচন করেছে, জিতেছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ভোট কারচুপির ঘটনা গণমাধ্যম সঠিকভাবে উপস্থাপন করায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের নির্বাচিত মেয়রদের বিষয়ে তিনি বলেন, ভোট ডাকাতি করে তারা তিন সিটি দখল করেছেন। এখন কাজের কাজ কিছুই হবে না। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি হবে। সবখানে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য চলছে।
যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত নি¤œ ক হাউজ অব কমন্সের নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সেখানে কী সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। এটা চিন্তাই করা যায় না। ভারতেও সুষ্ঠু নিবার্চন হয়েছে। ওইসব নিবার্চনে নির্বাচন কমিশন কোনো প নেয় না। আমরা কি ওই সব নির্বাচন দেখে কিছু শিখতে পারি না?
যাত্রাবাড়ীর মামলা প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, আমাকে তিন মাস অন্তরীণ রাখা হয়েছিল। টেলিফোন লাইন, বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়া হয়েছিল। গেটের বাইরে তালা, ভেতরে তালা দিয়ে রাখা হয়েছিল। বালুর ট্রাক এনে রাস্তা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। এ সময়ে তারা (সরকার) যাত্রাবাড়ীতে বোমা মেরে মামলা দিয়েছে আমার বিরুদ্ধে। ওই সব পেট্রলবোমা পুলিশের পাহারায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা মেরেছে।
পেট্রলবোমায় মানুষ হত্যার রেকর্ড আওয়ামী লীগের রয়েছে দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সব পেট্র্লবোমার সাথে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ জড়িত। অবরোধের সময়ে পুলিশ পাহারায় বাসে বোমা ছোড়া হয়েছে। কিন্তু একজনকেও গ্রেফতার করা হয়নি। জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের বিরুদ্ধে পেট্রল বোমা মারার অপপ্রচার চালাচ্ছে সরকার।
লগি-বৈঠার নামে মানুষ হত্যা, শাহবাগের কাছে দোতলা বাসে গানপাউডার দিয়ে মানুষ হত্যাসহ বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের মানুষ হত্যার নানা ঘটনাও তুলে ধরেন খালেদা জিয়া।
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এদের উন্নয়ন হচ্ছে বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করা আর তার কমিশন খাওয়া। অনেক বিদ্যুৎ প্রকল্প করা হয়েছে। তার পরও ঢাকা শহরে বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। মানুষজন গ্যাস পায় না।
খালেদা জিয়া আসন্ন বার কাউন্সিল নির্বাচনে আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয়তাবাদী প্যানেলের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ২০ মে বার কাউন্সিল নির্বাচন। এ নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে প্যানেল ভোট দেয়া চাই। আমরা কর আইনজীবী সমিতি, ঢাকা আইনজীবী সমিতি ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছি। অতীতের মতো এবার বার কাউন্সিল নির্বাচনেও আমাদের প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন।
মতবিনিময়ে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা কর আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি মাজম আলী খান ও জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের সভাপতি আবদুল মজিদ।
মতবিনিময়ে অন্যদের মধ্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, সহআইনবিষয়ক সম্পাদক নিতাই রায় চৌধুরী, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব হুমায়ুন কবীর, ঢাকা কর আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল গফুর মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
– See more at: http://dev.dailynayadiganta.com/detail/news/21407#sthash.9FLuBUjP.dpuf