‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা স্থগিত
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের পরীক্ষা স্থগিত করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। পরীক্ষা দুটি সোমবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বিরোধী দলের ডাকা টানা ৬০ ঘণ্টা হরতালের কারণে পরীক্ষা স্থগিতের এই সিদ্ধান্ত নিল ব্রিটিশ কাউন্সিল। বিএনপি এ পরীক্ষাকে হরতালের আওতামুক্ত ঘোষণা করলেও আমলে নেয়নি কাউন্সিল।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের ব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) শাকিলা আজিম বলেন, আমার জানা মতে এই প্রথম দেশে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত পরীক্ষা নতুন সূচি পরে জানানো হবে। তিনি বলেন, আমার মনে হচ্ছে হরতালের কারণেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া রবিবার হরতালের প্রথম দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথমবর্ষ এবং এলএলবি শেষবর্ষের পরীক্ষা হয়নি। এ পরীক্ষাগুলো আগামী ২ নভেম্বর ও ২০ ডিসেম্বর নেয়া হবে। এ অবস্থায় আগামী ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নিয়ে উত্কণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন অভিভাবকরা। এ পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ২০ নভেম্বর থেকে শুরু হবে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। একইসঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও শুরু হচ্ছে সম্মান প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ১ নভেম্বর ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে অনার্স ভর্তি পরীক্ষা। পাঁচটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হবে ২৩ নভেম্বর। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাও হবে নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মধ্যে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভর্তি পরীক্ষার্থীরাও চিন্তিত।
রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে পরীক্ষাগুলো নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে না। এর ফলে একদিকে যেমন শিক্ষাপঞ্জি হুমকির মুখে পড়বে, অন্যদিকে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা নিতে না পারলে পরীক্ষার্থীরাও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।
জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রবিবার বর্তমানকে বলেন, পরীক্ষার সময় এমন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আমি নিজেই উদ্বিগ্ন, চিন্তিত। সারাক্ষণ শুধু ভাবি, ভবিষ্যত্ প্রজন্মের কী হবে? তিনি বলেন, আগামী দু’মাস পরীক্ষার মৌসুম। এ সময় কোনো কর্মসূচি না দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তবুও বিরোধী দল কর্মসূচি দিয়েছে। এতে কী লাভ হয়েছে? শুধু মানুষ মরেছে। তিনি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে এমন কোনো দায়িত্বজ্ঞানহীন রাজনৈতিক কর্মসূচি দেবেন না, যাতে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
স্থগিত হলো ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা : ইংরেজি মাধ্যমের এ দুটি পরীক্ষা সোমবার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হরতালের কারণে পরীক্ষা স্থগিত করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। রবিবার সন্ধ্যায় তারা স্থগিতের এ সিদ্ধান্ত ‘ফেসবুক’ ও ‘মোবাইল ফোনে’ ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিয়েছে। পরীক্ষা দুটিতে প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীর অংশ নেয়ার কথা ছিল।
এর আগে রবিবার বিকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের পরীক্ষা হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরীক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের ওপর কোনো ধরনের আক্রমণ হলে এর দায়ভার সরকারকে বহন করতে হবে।
বিএনপি হরতালের আওতামুক্ত করার পরও কেন পরীক্ষা স্থগিত করা হলো— এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় ব্রিটিশ কাউন্সিলের ব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) শাকিলা আজিম রবিবার বর্তমানকে বলেন, রাস্তায় পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কেউ আক্রান্ত হলে এর দায়ভার কে নেবে?
কয়েকটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা সারা পৃথিবীতে একই প্রশ্নে একই সময়সূচি অনুযায়ী হয়। বাংলাদেশে হরতালের কারণে দীর্ঘদিন সময়মতো পরীক্ষাগুলো নেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। এতে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম হতাশা নেমে এসেছে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, বাংলাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল হলে ব্রিটিশ কাউন্সিল হরতাল শেষে রাতে পরীক্ষা নেয়। কিন্তু এবার রাতেও হরতাল হওয়ায় পরীক্ষা স্থগিত করে ব্রিটিশ কাউন্সিল। এ ধরনের স্থগিতের ঘটনা এই প্রথম।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাও স্থগিত :
হরতালের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন রবিবারের ২০১২ সালের অনার্স প্রথমবর্ষের পরীক্ষা হয়নি। নতুন সূচি অনুযায়ী আগামী ২ নভেম্বর স্থগিত পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল ২০১২ সালের অনার্স প্রথমবর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, সমাজবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, ভূগোল ও পরিবেশ, নৃবিজ্ঞান এবং অর্থনীতি বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
এছাড়া ২০১২ সালের এলএলবি শেষ পর্বের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ১ নভেম্বর পরীক্ষাটি হওয়ার কথা ছিল। নতুন সূচি অনুযায়ী আগামী ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার এ পরীক্ষা হবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বদরুজ্জামান বলেন, পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে রয়েছে। অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা শুধু উদ্বিগ্নই নন, আদৌ পরীক্ষা হবে কি না, সেটাই এখন তাদের চিন্তার কারণ হয়ে গেছে। এর আগে গত এপ্রিল ও মে মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতায় শিক্ষা ব্যবস্থায় স্থবিরতা নেমে এসেছিল। এবারও হয়তো তারই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য আমরা দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে তারা যেন পরীক্ষার ক্ষতি হয় এমন কোনো কর্মসূচি না দেন। তিনি বলেন, এখন আমরা জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা করছি। এরপর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নিয়ে কাজ শুরু করব।