ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সমর্থনে বিশাল সমাবেশ, গ্রেপ্তার ১০
ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সমর্থনে বিশাল সমাবেশ, গ্রেপ্তার ১০
উত্তেজনা থাকলেও বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে বিশাল সমাবেশ ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘মিলিয়ন মেগা মার্চ’ নামের এ সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাম্প সমর্থকেরা যোগ দেন। তাঁদের হাতে নির্বাচনে পরাজয় না মানার সমর্থনে প্ল্যাকার্ড ছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর গাড়িবহর নিয়ে সমাবেশকারীদের অভিবাদন জানিয়েছেন।
অন্যদিকে এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী জো বাইডেন ডেলাওয়ার রাজ্যে আছেন। ক্ষমতা গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন ‘ট্রানজিশন টিমের’ সঙ্গে। শনিবার এ টিমের সঙ্গে বৈঠকের আগে জো বাইডেন ও তাঁর স্ত্রী বাড়ির পাশের কেইপ হেনলোপেন স্টেট পার্ক এলাকায় সাইকেলে ঘুরে বেড়ান। তাঁদের ভিডিওতে দেখা যায়, মাস্ক ও হেলমেট পরা জো বাইডেন ও তাঁর স্ত্রী সাইকেল চালাচ্ছেন। পেছনে অবশ্য সিক্রেট সার্ভিসের একদল লোকজনও ছিলেন।
১৪ নভেম্বর শনিবার সকাল থেকেই ওয়াশিংটন ডিসির রাজপথে লোক জমতে শুরু করে। ‘স্টপ দ্য স্টিল’, ‘উই আর চ্যাম্পিয়ন’, ‘ফোর মোর ইয়ারস’, ‘বেস্ট প্রেসিডেন্ট এভার’ প্রভৃতি স্লোগান লেখা ব্যানার, ফেস্টুন ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা হাতে লোকজনের সমাবেশ ঘটতে থাকে। হোয়াইট হাউসের কাছেই ফ্রিডম প্লাজায় লোকজন প্রথম জড়ো হয়। পরে শোভাযাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের আশপাশের এলাকা প্রদক্ষিণ করে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউস থেকে গলফ ক্লাবের উদ্দেশে যাওয়ার পথে থামেন কিছুক্ষণের জন্য। এ সময় ট্রাম্পের সমর্থনে মুহুর্মুহু স্লোগান ওঠে। ডোনাল্ড ট্রাম্প সমাবেশকে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান।
এর আগে এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেছেন, ‘লাখো মানুষ তাদের সমর্থন জানাচ্ছে। এরা কারচুপি ও দুর্নীতির নির্বাচন মেনে নেবে না।’
সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্লোগানরত এক ট্রাম্প সমর্থক এনথনি উইটাকার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টকে সমর্থন জানাতে এখানে এসেছি। তাঁর মনোবল যেন অব্যাহত থাকে।’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পৃথক একটি টুইট বার্তায় ফক্স নিউজসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যমকে ‘ফেক নিউজ’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘যখন সমাবেশ বড় থাকে, তখন তারা দেখায় না।’
ভোট গণনার পর এখনো পরাজয় মেনে নেননি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি ও তাঁর সমর্থকেরা এখনো মনে করছেন, ভোট কারচুপি হয়েছে। অসংখ্য মামলা করলেও এখন পর্যন্ত ফলাফল পাল্টে দেওয়ার মতো কোনো মামলা ট্রাম্প শিবির থেকে আদালতে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা ছাড়াই নির্বাচনে বিজয়ী ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন আগামী ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শনিবার আবারও বলেছেন, ‘জর্জিয়া রাজ্যের ভোট গণনা যেন বন্ধ রাখা হয়।’ পৃথক টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘হাতে গণনার সময় জর্জিয়ায় ভোটারদের স্বাক্ষর মিলছে কি না, তা দেখানো হচ্ছে না।’ তিনি জর্জিয়ার ভোট গণনাকে সময়ের অপচয় বলে উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, রিপাবলিকান বলে পরিচিত জর্জিয়া রাজ্যে জো বাইডেন জয় পেয়েছেন। রিপাবলিকানদের আবেদনের পর সে রাজ্যে আবার হাতে ভোট গণনা করা হচ্ছে। ফলাফলের কোনো পার্থক্য হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নানা মহল থেকে এর মধ্যেই বলা হয়েছে, এবারের নির্বাচন নিয়ে কোথাও কোনো কারচুপি বা জালিয়াতি হয়নি। সবচেয়ে নিরাপদ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মত।
‘মেগা মার্চ’ আহ্বান নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো প্রচারে খুব বেশি আগ্রহ দেখায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিপাবলিকানরা ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে।
‘ফোর মোর ইয়ারস’ স্লোগানের মধ্যে জর্জিয়া থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান কংগ্রেস উম্যান মারজুরি টেইলার গ্রিনসহ রক্ষণশীল নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেন। এর মধ্যে ‘প্রাউড বয়েজ’–এর মতো শ্বেতাঙ্গ রক্ষণশীল গ্রুপগুলোও ব্যাপক লোকজনের বহর নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়। বক্তৃতায় তারা সবাই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে।
ব্যাপক উৎকণ্ঠা থাকলেও হোয়াইট হাউসের আশপাশে আগে থেকেই বিক্ষোভরত ট্রাম্পবিরোধী সমাবেশের মধ্যে কিছু সময়ের উত্তেজনা দেখা দেয়। ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের বিক্ষোভকারীরা সমাবেশ থেকে ‘ইউ লুজ’ স্লোগান দেন। এ সময় পুলিশ সক্রিয় থেকে উভয় দলকে নিজেদের এলাকায় আটকে রাখতে সক্ষম হয়।
ওয়াশিংটন ডিসি পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার বিকেল পর্যন্ত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজনকে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগে এবং অন্যদের সহিংস আচরণের জন্য আটক করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য নির্বাচনে জয়-পরাজয়ই শেষ কথা নয়। তাঁর জন্য আরও দুঃসংবাদ তাড়া করছে বলে মনে করা হচ্ছে। ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পরপরই তাঁকে বেশ কিছু মামলা মোকাবিলা করতে হবে। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে পাওয়া আইনগত সুবিধা হারানোর পর ট্রাম্পের নাজুক ভবিষ্যৎ নিয়ে এর মধ্যেই কথা উঠেছে।