এমপি লিটন কারাগারে, আদালতের বাইরে সংঘর্ষ
এদিকে লিটনের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করে লিটনের সমর্থকরা। পরে পুলিশের দায়িত্বকাজে বাধা দিলে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এদে দুইজন লিটন সমর্থক আহত হন বলে জানা গেছে।
এর আগে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে লিটনকে নিয়ে ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় পৌঁছায় পুলিশের একটি দল।
বুধবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তরা থেকে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম। রাত সাড়ে ১০টায় তিনি বলেন, তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়।
এর আগে দুপুরে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্টের আদেশ বুধবার স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সে সময় জানিয়েছিলেন, এর ফলে এ সংসদ সদস্যকে গ্রেফতারে আর কোনো বাধা রইল না। একই সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, কেউ বিচারের ঊর্ধ্বে নয়, বিচারকরা যেভাবে নির্দেশনা দেন আমাদের প্রশাসন ঠিক সেভাবেই কাজ করে। যেই নির্দেশনা (আদালত) দিয়েছেন তা আমাদের কাছে এলে প্রশাসন সে অনুযায়ীই কাজ করবে।’ বিকালে তিনি আরেক অনুষ্ঠানে বলেন, এমপি লিটনকে গ্রেফতার করতে স্পিকারের অনুমতি লাগবে না।
শিশুকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা এবং বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে করা দুই মামলায় ১২ অক্টোবর হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিন চান ঘটনার পর থেকে পলাতক লিটন। হাইকোর্ট তার জামিন আবেদন খারিজ করে তাকে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে গাইবান্ধার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এতে তাকে গ্রেফতার নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়।
তা দূর করে তাকে যাতে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে সে জন্য পরদিন রাষ্ট্রপক্ষ আত্মসমর্পণের নির্দেশনা স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন জানায়। বুধবার আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদালতে ওই আবেদনের ওপর শুনানি হয়। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং এমপি লিটনের পক্ষে ব্যারিস্টার মকসুদুল ইসলাম।
আত্মসমর্পণের আদেশ স্থগিতের পর মাহবুবে আলম বলেন, এ মুহূর্তে তাকে যেখানেই পাওয়া যাক না কেন, পুলিশ গ্রেফতার করতে পারবে। অবশ্য থানায় গিয়ে বা সংশ্লিষ্ট আদালতে তার আত্মসমর্পণের সুযোগ রয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ ধরনের অপরাধ যে করেছে, তার অবিলম্বে গ্রেফতার হওয়া উচিত।
ব্যারিস্টার মকসুদুল ইসলাম বলেন, এখনও আপিল বিভাগের নির্দেশনার কপি হাতে পাইনি। পেতে সময় লাগবে। আমার বিশ্বাস আমার মক্কেল আদেশের কপি হাতে পাওয়ার আগেই আত্মসমর্পণ করে ফেলবেন। আর পুলিশ আদেশের কপি হাতে না পেয়ে তাকে গ্রেফতারের কোনো উদ্যোগ নেবে না। তাকে গ্রেফতারে কোনো বাধা আছে কিনা- জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, হাইকোর্ট তাকে আত্মসমর্পণের একটি আদেশ দিয়েছিলেন। এ অবস্থায় গ্রেফতার করা হলে আইনের ব্যত্যয় ঘটত। কিন্তু ওই আদেশের আগেও তাকে গ্রেফতারে কোনো বাধা ছিল না।
২ অক্টোবর লিটনের ছোড়া গুলিতে ৯ বছর বয়সী সৌরভ আহত হয়। চতুর্থ শ্রেণীর এ শিক্ষার্থী এখনও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শিশুটির বাবা সুন্দরগঞ্জের গোপালচরণ গ্রামের সাজু মিয়া পরদিন লিটনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পরে ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন হাফিজার রহমান নামে উত্তর শাহাবাজ গ্রামের এক বাসিন্দা। মামলার পর থেকে লিটন ও পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে ছিলেন।
১১ অক্টোবর হাইকোর্টে লিটনের পক্ষে আইনজীবী এসএম আরিফুল ইসলাম আগাম জামিনের আবেদন করেন। পরদিন তার পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার মকসুদুল ইসলাম আবেদনটি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির জন্য উত্থাপন করেন। লিটনকে আদালতে উপস্থাপনের পর আবেদন খারিজ করে আত্মসমর্পণের আদেশ দেন হাইকোর্ট।
গাইবান্ধায় আত্মসমর্পণের গুঞ্জন : গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা স্থগিত হওয়ার পরপর বুধবার দুপুরে লিটন চিফ জুডিশিয়াল আদালতে আÍসমর্পণ করছেন এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে গাইবান্ধায়। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সাংবাদিকসহ সব শ্রেণীর উৎসুক মানুষ ভিড় জমান আদালতপাড়ায়। তিনি গ্রেফতার হবেন, নাকি আÍসমর্পণ করবেন- এটিই হয়ে ওঠে সুন্দরগঞ্জের সর্বত্র আলোচনার বিষয়। লিটনের অনুসারী এবং ক্যাডার বাহিনীর তৎপরতায় যে শংকা তৈরি হয়েছিল তা থেকে স্বস্তি অনুভব করছেন এখন অনেকে। আদালতের নির্দেশনার পর কর্মসূচি স্থগিত করেন লিটনের গ্রেফতার দাবিতে আন্দোলনকারীরা।
পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্যাহ্ আল মামুন বলেন, লিটন এখন বিচারের সম্মুখীন হবেন এটাই আমরা দেখতে চাই। পৌর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মাসুদ উল ইসলাম চঞ্চল বলেন, আদালতের দিকে তাকিয়ে আছি। সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি ইসরাইল হোসেন বলেন, আমরা এমপি লিটনকে গ্রেফতারের ব্যাপারে তৎপর রয়েছি। পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।