এবারের মন্ত্রিসভা সম্ভাব্য যারা
ঢাকা: দশম জাতীয় সংসদের সরকারে মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার জন্য জোর তদবির শুরু হয়ে গেছে। যদিও নতুন সরকারের স্থায়ীত্ব নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করছেন। তবু এ সরকারের মন্ত্রিসভার অংশীদার হতে তদবির শুরু করে দিয়েছে আওয়ামী লীগের প্রবীণ থেকে তরুণ সংসদ সদস্যরা। এ দলে আছেন আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতারাও। তারা নিয়মিত গণভবনে ঢুঁ মারছেন।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টি নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় তাদের কমপক্ষে ১০ জনকে রাখতে চান। গত বৃহস্পতিবার দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ দাবি তুলেও ধরেছেন বলে জানা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, এবারের মন্ত্রিসভায় সাত বিভাগেরই প্রতিনিধি রাখতে চান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া নবম সংসদে জ্যেষ্ঠ নেতাদের যারা বঞ্চিত হয়েছিলেন তাদেরও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। ফলে অনেক বর্তমান মন্ত্রী পদ হারাবেন আবার অনেকে পদে বহাল থাকবেন অথবা নতুন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাবেন।
নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা আগামী রোববার শপথ নেবেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে তাদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
গণভবন সূত্রে জানা যায়, নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর নামের তালিকা চূড়ান্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার রাতেই বা রোববার সকালে সংশ্লিষ্টদের তা অবহিত করা হবে। শপথ গ্রহণের পর সেদিনই দপ্তর বণ্টন করা হতে পারে।
এদিকে নবম সংসদের মন্ত্রিসভায় অভিজ্ঞ ও বর্ষীয়ান রাজনীতিকরা বাদ পড়লেও এবার তা হচ্ছে না। কয়েকজন অভিজ্ঞের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নতুন এমপিও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন। এবার মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা হবে ৪৫। আর জাতীয় পার্টির আবদার রক্ষা করলে মন্ত্রিসভার আকার ৫০ জন পর্যন্ত হতে পারে। যেখানে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন ২৯ জন। আর নবম জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভা ছিল ৫১ সদস্য বিশিষ্ট।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র সাত দিনের মাথায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এক এগারোর পর সেনা হস্তক্ষেপসহ নানা ঘটনার পর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি গঠিত সেই মন্ত্রিসভায় নতুনদের চমক ছিল। এবারের মন্ত্রিসভা গঠনের বেলায়ও তেমন চমক দেখাতে পারেন শেখ হাসিনা।
বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে সম্ভাব্য মন্ত্রীদের তালিকায় যারা রয়েছেন:
আবুল মাল আবদুল মুহিত আবারো অর্থমন্ত্রণালয় পেতে যাচ্ছেন। তবে এমনও শুনা যাচ্ছে, কিছুদিন পর মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করা হতে পারে। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদ এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাবেন।
ব্যারিস্টার শফিক আহমেদকে আবারো আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। মহাজোট সরকারের পাঁচ বছর বেশ দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তার ইমেজও বেশ ভালো। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে প্রধানমন্ত্রীর আইন উপদেষ্টা থাকলেও দশম সংসদে আবারো মন্ত্রী করা হবে তাকে। তবে আইনমন্ত্রী হিসেবে নতুন এমপি অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর নামও শুনা যাচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেতে যাচ্ছেন ছিয়ানব্বইয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তবে এ মন্ত্রণালয় মহাজোট সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদেরের জন্য বরাদ্দ পেতে এরশাদ দর কষাকষি করছেন বলে জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা যায়।
মহাজোট আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী না দিলেও এবার জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর ভাগ্যে শিকে ছিঁড়তে পারে।
গত কয়েক বছরে বহুবিতর্কিত মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেয়া হবে বলে শুনা যাচ্ছে। এটি এবার পাবেন আমির হোসেন আমু অথবা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
ডা. দীপু মনি বিদেশ সফরে রেকর্ড করলেও তেমন কোনো অর্জন দেখাতে পারেননি। সরকারি টাকা খরচ করে ঘন ঘন বিদেশ সফর নিয়ে সামলোচনার মুখেও পড়েছেন তিনি। তাই এবার তাকে কোনো মন্ত্রণালয় না দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। শুনা যায়, গতবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় না পাওয়ায় মনক্ষুণ্ণ ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাই এবার তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিয়ে খুশি করা হতে পারে। এছাড়া হেফাজতকে নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট সামাল দেয়া এবং দলের নাজুক সময়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাই তার ইচ্ছে পূরণ হতেই পারে।
এদিকে তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নির্বাচনী অঙ্গীকার আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে এবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ে একেবারে তরুণ মুখ আনার কথা চিন্তা করছেন প্রধানমন্ত্রী। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির প্রধান মন্ত্রণাদাতা প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তাই তার মতোই তরুণ সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলকই হতে পারেন আইসিটি মন্ত্রী।
মহাজোট সরকারের সবচেয়ে দৃষ্টিগ্রাহ্য সাফল্য হয়েছে শিক্ষায়। বিশেষ করে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে একটি গতিশীলতা এনেছেন তিনি। তাই এই মুহূর্তে নুরুল ইসলাম নাহিদের বিকল্প খুঁজছেন না শেখ হাসিনা।
আর স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় পেতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ দিনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান মিল্লাত।
এছাড়া টেকনোক্র্যাট কোটার মন্ত্রী তালিকায় সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবীদ আবুল বারকাত (তিনি অবশ্য অর্থ উপদেষ্টাও হতে পারেন), আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিনের নাম শুনা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মতিয়া চৌধুরী, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ওবায়দুল কাদের এবারো মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন।এছাড়া ১৪ দলীয় জোটের শরিক থেকে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
আর জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন বাবলু, কাজী ফিরোজ রশীদ, অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু ও অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামকে মন্ত্রিত্ব দেয়া হতে পারেন। যদিও জাতীয় পার্টিকে মন্ত্রিত্ব দেয়া হবে নাকি সংসদে প্রধান বিরোধী দল করে রাখা হবে তা নিয়ে আওয়ামী লীগ গভীরভাবে পর্যালোচনা করছে।
এছাড়া আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আন্তর্জাতিক সম্পাদক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান, কৃষি সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মুজিবুল হক, রমেশ চন্দ্র সেন, শাজাহান খান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম মন্ত্রিসভায় জায়গা পেতে পারেন।
মহাজোট ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের যারা বাদ পড়তে পারেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- পরিকল্পনা মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) একে খন্দকার বীরউত্তম, শ্রম ও কর্মংস্থানমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের, স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, পানিসম্পদ মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস, আইসিটি মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, পার্বত্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার, যুব ও ক্রিড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এনামুল হক ও ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা, সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, ভূমি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, আবদুল হাই ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।
নতুন মুখ
মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন বেশ কয়েকজন নতুন মুখ। তাদের মধ্যে থাকতে পারেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাদারীপুর-৩ আসনের এমপি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, জয়পুরহাট-২ আসনের এমপি আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, দিনাজপুর-২ আসনের এমপি খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ফরিদপুর-১ আসনের এমপি আবদুর রহমান, জামালপুর-৩ আসনের এমপি মির্জা আজম, চাঁদপুর-২ আসনের এমপি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীরবিক্রম), নীলফামারী-২ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান নূর, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের এমপি নাজমুল হাসান পাপন, নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী, রাজশাহী-৬ আসনের এমপি শাহরিয়ার আলম, ঢাকা-৩ আসনের এমপি নসরুল হামিদ বিপু, নাটোর-৩ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক, বান্দরবানের এমপি বীর বাহাদুর উশৈ সিং, কুমিল্লা-১০ আসনের এমপি আ হ ম মোস্তফা কামাল।
এছাড়া মহাজোট শিল্পমন্ত্রী সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়াকে কোনো মন্ত্রণালয় না দিলেও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা করা হতে পারে বলে শুনা যাচ্ছে।