চট্টগ্রাম থেকে চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শুক্রবার সকালে ঢাকায় আসেন মুনির হোসেন। সকাল ১০টায় মিরপুরে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপক (জেনারেল) পদের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) পদের নিয়োগ পরীক্ষার জন্যও আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সকাল ১০টায় খিলক্ষেতে একই সময়ে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় অংশ নিতে পারেননি তিনি।
মুনির বলেন, বিজ্ঞপ্তিতে তো পরীক্ষার সময় উল্লেখ থাকলে অনেকেই আবেদন করতেন না। একটি আবেদন করতে ৪০০-৫০০ টাকা লেগে যায়। যারা বেশি আবেদন করেছেন তাদের বেশি টাকা খরচ হয়েছে। এখন এই টাকা কে দেবে। আর এই সুযোগও তো আর পাওয়া যাবে না। এর দায় কে নেবে।
মনিরের মতো হাজার হাজার আবেদনকারী একই দিনে ও একই সময়ে একাধিক পরীক্ষা থাকায় বিপাকে পড়েন। কোনো কোনো প্রার্থীর চার-পাঁচটি পরীক্ষার অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলেও বেশিরভাগ প্রার্থীই দুটির বেশি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।
শুক্রবার এক দিনে ১৩টি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে লাখ লাখ চাকরিপ্রত্যাশী অংশগ্রহণ করে। তবে কোনো কোনো পরীক্ষা একই সময়ে হওয়ায় টাকা খরচ করে আবেদন করেও অংশ নিতে পারায় তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। গত ১৭ সেপ্টেম্বরও রাজধানীতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ২১টি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেদিনও অনেকে একাধিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। একইদিনে এবং একই সময়ে একাধিক পরীক্ষার বিষয়ে ফেসবুকে চাকরির বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আবেদনকারীরা।
চাকরিপ্রার্থী ইব্রাহিম খলিল শুক্রবার ৫টি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। তিনি ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘একইদিনে একাধিক পরীক্ষা বেকারদের সঙ্গে তামাশা করার নামান্তর।’
একাধিক পরীক্ষার্থী সময়ের আলোকে বলেন, এমন সমন্বয়হীনতা মেনে নেওয়া যায় না। দেশে বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। হন্যে হয়ে ঘুরছে চাকরিপ্রার্থীরা। করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিল বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়ের চাকরির পরীক্ষা। গত মাস পরীক্ষা নেওয়া শুরু হয়েছে। বেকাররা এমনিতেই অর্থকষ্টে থাকেন। তারপরও তারা নানাভাবে অর্থ যোগাড় করে আবেদন করেন। একজন একাধিক পদের জন্য আবেদন করেন। এখন একইদিনে এবং একই সময়ে একাধিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি সুযোগও হারাতে হলো। একটু সমন্বয় করলেই এই ভোগান্তি ও অর্থ অপচয় এড়ানো যেত।
চাকরির বয়স ৩২ আন্দোলনের সমন্বয়কারী মানিক হোসেন রিপন সময়ের আলোকে বলেন, একই সময় হওয়ায় আমার রুমমেট পরীক্ষা দিতে পারেননি। আমার পরিচিত এমন অসংখ্য প্রার্থী আছে যারা অংশ নিতে পারেননি। একদিকে আমাদের চাকরির বয়স চলে যাচ্ছে, আরেকদিকে টাকা খরচ করেও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছি না। একটা আবেদন করতে প্রায় শ’ টাকা খরচ হয়ে যায়। এখন আমরা আবেদন করেও যদি পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারি তা হলে বেকারদের মধ্যে হতাশা আরও বাড়বে। তিনি বলেন, আগামীতে আমাদের কর্মসূচিতে এই বিষয়টাও থাকবে। এক দিনে দুটির বেশি সরকারি চাকরির পরীক্ষা না রাখার দাবি জানান তিনি।
পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, সমন্বয় থাকলে সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলোর তারিখ কেন্দ্রীয়ভাবে ঠিক করা যেত। আর এখন এক দিনে একাধিক পরীক্ষার তারিখ পড়ে যাওয়ায় চাকরিপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
যেসব পরীক্ষা গতকাল অনুষ্ঠিত হয় সেগুলো হলোÑ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (বিসিএসআইআর), সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (সিএএবি), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল), সাধারণ বীমা করপোরেশন, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। তবে বিসিএস নন-ক্যাডারের পরীক্ষাটির নতুন সময় আগামী বৃহস্পতিবার নির্ধারণ করেছে পিএসসি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী (২০১৭), দেশের ৬ কোটি ৩৫ লাখ কর্মীর মধ্যে ৬ কোটি ৮ লাখ কর্মী বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত ছিল। যার অর্থ বেকারত্বের হার ছিল ৪.২ শতাংশ বা ২৭ লাখ। ২০২১ সালে একটি আইএলও রিপোর্টে দেখা গেছে, বাংলাদেশের বেকারত্বের হার গত বছর ৫.৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যা ২০১৯ সালে ৪.২ শতাংশ ছিল।