এক দিনেই ‘নায়ক’ কেজরিওয়াল!
ক্ষমতা যদি এক দিনের জন্যও হাতে আসে কী করা যেতে পারে—তা দেখিয়ে দিলেন আম আদমির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এত দিন বলিউডের ‘নায়ক’ চলচ্চিত্রের অনিল কাপুরকে দেখে এসেছিলেন এক দিনের মুখ্যমন্ত্রীর চরিত্রে। কিন্তু চলচ্চিত্র আর বাস্তব এক নয়। তবুও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার এক দিনের মধ্যেই অরবিন্দ কেজরিওয়াল যা করে দেখিয়েছেন তা চলচ্চিত্রকেও হার মানায়। কী করেছেন তিনি? টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, কাজ শুরুর প্রথম ঘণ্টায় তোলপাড় করে দিয়েছেন প্রশাসনযন্ত্রকে। প্রথম দিনের ছয় ঘণ্টার মধ্যেই নয়জন বর্ষীয়ান আমলাকে বদলি করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন দিল্লি জল বোর্ডের প্রধান নির্বাহী৷ প্রথম দিন টানা ছয় ঘণ্টা কাজ করেছেন৷ অনেকগুলো বৈঠক করেছেন। মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নেতা-মন্ত্রী-আমলা কেউই লালবাতি লাগানো গাড়ি নিয়ে ঘুরতে পারবেন না৷ মন্ত্রী-আমলারা অযথা কোনও নিরাপত্তা নিতে পারবেন না৷ গাড়ির সামনে কোনও পুলিশের টহল থাকবে না৷ সবচেয়ে বড় কথা, অরবিন্দ কেজরিওয়াল ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি মাত্র ১০ দিনেই দিল্লির সমস্যার সমাধান করার পথ বের করে ফেলবেন! এর পরই কেবল সমস্যা সমাধানের জন্য জনগণের কাছ থেকে অভিযোগ শুনবেন। কেজরিওয়াল বলেছেন, ‘আমি আপনাদের কোনো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না। আমি সমস্যা সমাধানের একটি পদ্ধতি বের করতে পারলেই সব অভিযোগ শুনব।’ এ জন্য সাধারণ মানুষের সমর্থন চান তিনি। কেজরিওয়াল বলেন, ‘আমরা কেবল ক্ষমতায় এসেছি। আমাদের থিতু হতে কিছুটা সময় দরকার। সমস্যা সমাধান করতে এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত লাগতে পারে।’ আম আদমির নেতা আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার এক দিনের মধ্যেই আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তোলপাড় তুলে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। রামলীলা ময়দানে আমলাদের উদ্দেশে কেজরিওয়াল ঘোষণা দিয়েছেন, এখন থেকে আম আদমির দিন শুরু। আমলাদের মধ্যে সততা থাকলে তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’ কেজরিওয়ালের সরকারে সচিব হিসেবে যোগ দিয়েছেন ১৯৮৯ সালের ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের রাজেন্দ্র কুমার। তিনি কংগ্রেস আমলের প্রধান সচিব এম এম কুট্টির স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। গতকাল শনিবার দুপুরের পর মুখ্যমন্ত্রীর সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন রাজেন্দ্র কুমার। দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শিলা দীক্ষিতের প্রধান সচিব ছিলেন এম এম কুট্টি। তাঁকে সরিয়ে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের পরিচালক করা হয়েছে। নয়াদিল্লির মিনিউসিপ্যাল কাউন্সিলরের চেয়ারম্যান অর্চনা অরোরার ওপর ভরসা রেখেছেন কেজরিওয়াল। তাঁকে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে দিল্লির সর্বকনিষ্ঠ ও সপ্তম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় ভারতের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এল। এরপর দুপুর ১২টা ১৪ মিনিটে দলটির ছয় মন্ত্রী শপথ নেওয়ার পরই শুরু হলো দিল্লিতে আম আদমির শাসন। তবে ১২টা ১৫ মিনিটে জনতার উদ্দেশে ভাষণে কেজরিওয়াল যখন বললেন, ‘দিল্লির সাধারণ মানুষের মুখ্যমন্ত্রী তিনি। আজ সাধারণ মানুষের জয় হলো।’ কেজরিওয়ালের ভাষণ শুনে আমলাদের ভয় পাওয়ার কথা। তবে তাঁদেরও অভয় দিয়েছেন তিনি। সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে কেজরিওয়াল সবার কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। কেজরিওয়াল বলেন, ‘সব সমস্যা সমাধানে আমাদের কাছে জাদুর কাঠি নেই। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সমস্যা সমাধানে আমরা এক হয়ে কাজ করতে পারি। কিছু লোক কোনোকিছু করতে পারে না। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দরকার এবং একসঙ্গে লড়াই করা দরকার।’ এর আগে সাধারণ মানুষের মতো মেট্রোরেলে চড়ে রামলীলা ময়দানের উদ্দেশে রওনা দেন কেজরিওয়াল। আম আদমি কী ভারতে পরিবর্তন আনতে পারবে? দিল্লির মানুষের যে ব্যাপক প্রত্যাশার চাপ নিয়ে আম আদমি সরকার গঠন করেছে তা কত দিন টিকবে, তা নিয়ে কেজরিওয়ালও চাপে রয়েছেন। কংগ্রেসের যে শক্ত ঘাঁটিকে কেজরিওয়াল দখল নিয়েছেন, তিনি জানেন তাঁর সরকারের সামান্য ভুল-ভ্রান্তিও বিজেপি-কংগ্রেস লুফে নেবে। তবে কেজরিওয়ালের ওপর বড় চাপ হচ্ছে, আম আদমির যে প্রত্যাশার বেলুন দিল্লিতে উড়িয়েছেন তা এখন পুরো ভারতে উড়তে শুরু করেছে। এখন লক্ষ্য ভারতের লোকসভা নির্বাচন আর রাজ্যে রাজ্যে আম আদমির যোগ্য প্রার্থীকে তুলে আনা। কেজরিওয়াল এখন তাঁর কাজের জন্য ‘নায়ক’। কিন্তু কত দিন মানুষের প্রত্যাশা মিটিয়ে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন, তা এখন দেখার বিষয়। প্রখস আলো |