একাত্তরে দুষ্কর্মের দায় ফের অস্বীকার পাকিস্তানের

01/12/2015 11:54 amViews: 2
একাত্তরে দুষ্কর্মের দায় ফের অস্বীকার পাকিস্তানের

 

যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে সোমবার ইসলামাবাদে নিযুক্ত বাংলাদেশের কাউন্সিলর মৌসুমী রহমানকে তলব করে বাংলাদেশের বক্তব্যের জবাব দিয়েছে পাকিস্তান। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় নিযুক্ত পাক হাইকমিশনার সুজা আলমকে তলব করেছিল বাংলাদেশ। তাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ করেছে পাকিস্তান। এটা দুঃখজনক। বাংলাদেশের কড়া এ প্রতিবাদের জবাবে মূলত পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশের কাউন্সিলরকে তলব করে পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ সময় পকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বাংলাদেশের দাবি ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘অমূলক’। শুধু তাই নয়, একাত্তরে বাংলাদেশে তাদের দুষ্কর্ম তথা গণহত্যার দায়ও অস্বীকার করেছে দেশটি। তবে পাকিস্তানের এ মন্তব্যকে ফের ইতিহাসের বিকৃতি উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ।

পাকিস্তানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সোহরাব হোসেন অসুস্থ। তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছেন। মৌসুমী রহমান একজন জুনিয়র কর্মকর্তা। মৌসুমী রহমানের মূল পদ কাউন্সিলর। ঢাকায় কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, মৌসুমী রহমানের কাছে পাকিস্তান যেসব বক্তব্য দিয়েছে, বাংলাদেশ তার সঙ্গে একমত নয়। বাংলাদেশ এসব বক্তব্যের একটা জবাব পাকিস্তানের কাছে পাঠাবে। যদিও ঢাকার কূটনীতিকরা মনে করেন, পাকিস্তান এবার খুব কড়া কিংবা কঠিন ভাষায় কোনো বক্তব্য দেয়নি।

এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সোমবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, পাকিস্তান তাদের জবাবে দুটি পয়েন্ট উত্থাপন করে ফের ইতিহাস বিকৃত করেছে। প্রথমত, এটা সম্পূর্ণ অসত্য যে, ১৯৭১ সালে বর্বরতার জন্য পাকিস্তানের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। এটা সবাই জানে। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তান ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির বিকৃত ব্যাখ্যা দিচ্ছে যা সম্পূর্ণ দুর্ভাগ্যজনক।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর পাকিস্তান এ ঘটনাকে ‘বিরক্তিকর’ ও ‘দুর্ভাগ্যজনক’ হিসেবে অভিহিত করেছিল। তারা যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির চেতনা পরিপন্থী হিসেবেও অভিহিত করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ নভেম্বর ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সুজা আলমকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। বাংলাদেশের কাউন্সিলর মৌসুমী রহমানের কাছে তারই জবাব তুলে দিয়েছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ‘বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব’ শিরোনামে এ বিষয়টি প্রকাশ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বিষয়টি কোনো তলব নয়। বাংলাদেশের কড়া প্রতিবাদের একটা জবাব মৌসুমী রহমানের কাছে দিয়েছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া ও সার্ক) বাংলাদেশের কাউন্সিলরকে তলব করে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ২৩ নভেম্বর যে বক্তব্য পাকিস্তানকে অবহিত করেছে তা ভিত্তিহীন ও অমূলক বিধায় পাকিস্তান তা প্রত্যাখ্যান করছে। একাত্তরে নৃশংসতা তথা দুষ্কর্মে সহযোগিতার যে পরোক্ষ ইঙ্গিত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে করা হয়েছে পাকিস্তান তাও প্রত্যাখ্যান করছে। কারণ সত্যের বাইরে কোনো কিছুই হতে পারে না।’

বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলবের পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কের উন্নয়নে পাকিস্তানের আন্তরিক ইচ্ছা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানের জন্য হানিকর যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা দুঃখজনক।

পাকিস্তান বিশ্বাস করে যে, দু’দেশের জনগণ সুসম্পর্ক বজায় রাখা শুধু নয়, বরং বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরও জোরদার করতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এ সেন্টিমেন্টকে শ্রদ্ধা জানায় না বলেই মনে হচ্ছে।’

পাকিস্তানের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘দু’দেশের সম্পর্কের ভিত্তি হল ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার যুক্তি দেখাচ্ছে যে, পাকিস্তান সরকার ১৯৭৪ সালের চুক্তির বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দিয়েছে। এ বিষয়ে জোর দিতে হবে যে, এ চুক্তির আওতাতেই বাংলাদেশ সরকার বিচারের দিকে অগ্রসর না হয়ে ক্ষমা প্রদর্শন করেছিল।’

বাংলাদেশ ইতিপূর্বে পাকিস্তানের কাছে যে প্রতিবাদপত্র দিয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার মূল হোতা ও অপরাধীদের দায়মুক্তি দেয়া হয়নি।

পাকিস্তানের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের কথা পুনর্ব্যক্ত করছে। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, পাকিস্তানের জনগণের হৃদয় বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ঐকতানে স্পন্দিত হয়। এটা উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে, দক্ষিণ-এশীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক আবাসভূমি প্রতিষ্ঠায় উভয় দেশের জনগণ যে লড়াই করেছে সেটা ভুলে গেলে চলবে না। ফলে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জনগণের ভালোর জন্য শুভেচ্ছা, বন্ধুত্ব ও সহাবস্থানের চেতনায় সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই হবে ইতিবাচক।’

Leave a Reply