একতরফা প্রহসনের নির্বাচন গণহারে বর্জনের ডাক ইসলামী আন্দোলনের
বৃহস্পতিবার একতরফা প্রহসনের নির্বাচন বন্ধ, বিদ্যমান পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের দাবি এবং চলমান রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। এতে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মাওলা, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম, প্রকৌশলী আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ ও মাওলানা ইমতিয়াজ আলম প্রমূখ।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে হত্যা করা হয়েছে। দেশের সম্পদ লুটেপুটে খেয়ে নিয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলোকে হুমকির মুখে ফেলেছে এবং ইতিহাসের নিকৃষ্টতম শঠতায় প্রহসনমূলক নির্বাচনের অপচেষ্টা করছে। একইসঙ্গে শিক্ষা সিলেবাসের নামে জাতির ভবিষ্যত প্রজন্মকে শেষ করার পাঁয়তারা করছে।তিনি বলেন, এই নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিরোধীদলগুলো অংশ না নেয়ার প্রধান যুক্তি ছিল, প্রার্থীদের নিরাপত্তা এবং ভোটারদের স্বাধীন মত প্রকাশে বাধা দেয়ার আশঙ্কা। আমাদের আশঙ্কা যে, যৌক্তিক ও যথার্থ ছিল তা এই পাঁতানো ও শঠতাপূর্ণ নির্বাচনেও প্রমাণিত হয়েছে। এই নির্বাচন পাঁতানো। এখানে নৌকা, ঈগল, ট্রাক ইত্যাদি যা আছে সবই শেখ হাসিনার লোক। সবাই আওয়ামী লীগের। এমনকি লাঙ্গল, সোনালী আশ, নোঙ্গরও শেখ হাসিনার আশির্বাদপুষ্ট। তারপরেও এই নির্বাচনে নৌকায় ভোট না দিলে হাত-পা ভেঙে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে বহু জায়গায়। দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয় না, এমনকি পাঁতানো নির্বাচনও সুষ্ঠু ও অবাধ হয় না।
দেশবাসীকে আবারো আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই নির্বাচন আমার-আপনার মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়ার নির্বাচন। এই নির্বাচন আমার-আপনার ভোট জালিয়াতি করে ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন লুটতরাজ, জুলুম, খুন, গুম ও অনিয়ম জারি রাখার নির্বাচন। এই নির্বাচন দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা, ব্যাংকগুলো শূন্য করা, চুরি করে কোটিপতি হওয়ার অবৈধ পদ্ধতিকে অব্যাহত রাখার নির্বাচন। এই নির্বাচন হলো ক্ষমতাসীনদের পারস্পরিক ক্ষমতা ভাগাভাগির নির্লজ্জ খেলা। ফলে এই নির্বাচনে ভোট দেয়ার মানে হলো, ক্ষমতাসীনদের সকল অন্যায়, জুলুম ও দুর্নীতিকে বৈধতা দেয়া। যা কোনোভাবেই জায়েজ নয়। যাদের মধ্যে দেশপ্রেম আছে, যারা দুর্নীতি, জুলুম-লুটতরাজকে ঘৃণা করেন, যারা মানুষের অধিকারকে সম্মান করেন তারা কেউ ভোট কেন্দ্রে যাবেন না।
যারা আল্লাহকে ভয় করেন, যারা মাজলুমের বদদোয়াকে ভয় করেন, তারা কেউ ভোট দেবেন না। যারা ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করেন, যারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের সম্মান করেন তারা কেউ ৭ই জানুয়ারি ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।
তিনি বলেন, আমরা যদি গণহারে ভোট বর্জন করি তাহলে এই জালেম লুটেরারা বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা ভোট বর্জন করলে জাতি, দেশের অর্থনীতি রক্ষা পাবে। ভোট বর্জন করলে মানবতা রক্ষার পথ উন্মোচিত হবে। হতাশ হবেন না। জালেমদের বিদায় অবশ্যই হবে, ইনশাআল্লাহ। আমরা যদি জালিমের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ এবং সুদৃঢ় থাকতে পারি, তাহলে অচিরেই জনগণের বিজয় হবেই হবে, ইনশাআল্লাহ।
লিখিত বক্তব্যে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, আমরা এই জাতি, দেশ, অর্থনীতিকে বাঁচাতে চাই। লুটতরাজের অবসান চাই। আমরা একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান চাই। আমরা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন চাই। দেশের মানুষের অধিকার ফেরত পেতে চাই। সেজন্য আমাদের ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রাম চলবে। আমরা জনগণকে কর্তৃত্ববাদী এই জালিম সরকার বিরোধী গণ-আন্দোলনে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানাই। পাশাপাশি আমরা জনগণের অধিকার রক্ষার লক্ষে আন্দোলনরত সকল বিরোধী দলকে ধৈর্যের সঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাই।
আপনাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবারো অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনি সংবিধান অনুযায়ী অবিলম্বে বিদ্যমান কলঙ্কিত জাতীয় সংসদ ভেঙে দিন।
দেশবিরোধী প্রহসনের নির্বাচন বন্ধ করুন। বিরোধীদলের সম্মানিত নেতৃবৃন্দকে কারাগার থেকে মুক্তির উদ্যোগ নিন। সকল রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় সরকার গঠনের উদ্যোগ নিন। নয়তো সম্ভাব্য বিপর্যয়ের দায় থেকে আপনিও রক্ষা পাবেন না।
বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর দাবিসমূহ:
১। ৭ই জানুয়ারি একতরফা প্রহসনের নির্বাচন বন্ধ করতে হবে।
২। বিদ্যমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে।
৩। নিবন্ধিত এবং আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে, জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।
৪। বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিতে হবে এবং জাতীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পূণঃতফসিল ঘোষণা করবে।
৫। রাজনৈতিক কারণে বিরোধীদলের কারাবন্দী সকল নেতা-কর্মীর মুক্তি দিতে হবে।