একই ভুল, একই ফল

17/06/2015 11:05 amViews: 9

একই ভুল, একই ফল

 

এগিয়ে যাওয়ার পর তা ধরে রাখা। শেষ মুহূর্তে বক্সের আশপাশে ফাউলের বদৌলতে প্রতিপক্ষকে ফ্রিকিক দেয়া। আর তাতেই গোলহজম। নিশ্চিত জয়ের ম্যাচ ড্র কিংবা হার নিয়ে মাঠ ছাড়া। এটাই যেন দেশের ফুটবলের নিয়মিত চিত্র হয়ে উঠেছে। বছর দুয়েক ধরে এগিয়ে গিয়েও জিততে পারছে না বাংলাদেশ। এ নিয়ে বিস্তর কাজ করার পরও নাকি কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না ডাচ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের বিপক্ষে দুটি হোম ম্যাচেও ফুটে উঠেছে একই রকম চিত্র। গতকাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে মামুনুলের কর্নারে হেমন্তের হেড, এমিলির টোকায় এগিয়ে যাওয়া তাজিকিস্তানের বিপক্ষে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। খেলা শেষ হওয়ার মিনিট চারেক আগে বক্সের বাইরে এমিলির ফাউল। ফ্রিকিকে তাজিকদের ম্যাচে সমতায় ফেরান ফাতিলুভ। আর এতেই কিরগিজস্তানের কাছে হারের পর, নিশ্চিত জয়ের ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
কিরগিজস্তান ম্যাচে কোচ যা চেয়েছিলেন তার কিছুই বাস্তবায়ন করতে পারেননি ফুটবলাররা। ফলাফল ৩-১ গোলে হার। প্রত্যাশা ছিল তাজিকিস্তানের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়াবে টিম বাংলাদেশ। তিন পরিবর্তনে শুরু থেকে এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছিল। এদিন ইনজুরি আক্রান্ত নাসির উদ্দিন চৌধুরীর জায়গায় একাদশে রায়হান হাসান। এনামুলের বদলে জুয়েল রানা আর ইয়ামিন মুন্নার জায়গায় নাসিরুল ইসলাম নাসিরকে সুযোগ দেন লোডভিক ডি ক্রুইফ। এতেই যেন দৃশ্যপট পাল্টে যায়। কিক অফের পর নিজেদের মধ্যে কমপক্ষে ১৫টি পাস আদান প্রদান করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় মিনিটে রায়হানের উঁচু করে দেয়া বলে জুয়েল রানার হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর মনে হচ্ছিল দিনটি মনে হয় বাংলাদেশের। প্রথমার্ধে ছয়টি কর্নার ও তিনটি ফ্রিকিক আদায় করে বাংলাদেশ। বল পজিশনেও ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ২৭ ধাপ এগিয়ে থাকা দলটির বিপক্ষে এগিয়েও ছিল স্বাগতিকরা। প্রথমার্ধে সবচেয়ে সহজ সুযোগও পেয়েছিল বাংলাদেশ। ম্যাচের ৪০ মিনিটে ইয়াসিনের পাস থেকে পাওয়া বল হেমন্ত দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে এমিলির উদ্দেশে বাড়ান। কিন্তু ফাঁকায় দাঁড়ানো এমিলি বলের নাগাল পাওয়ার আগেই তা ফিরিয়ে দেন এক তাজিক ডিফেন্ডার। ম্যাচের ৫১ মিনিটে কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায় বাংলাদেশ। মামুনুলের ফ্রিকিকে হেমন্তের হেড জালে জড়ানোর ঠিক আগ মুহূর্তে এমিলি টোকা দিয়ে গোল নিশ্চিত করেন (১-০)। বাংলাদেশের সর্বশেষ দশ গোলের  সাতটির যোগানদাতাই বাংলাদেশ অধিনায়ক। গোল হজমের পরই শক্তি প্রয়োগ করে খেলা শুরু করে তাজিকরা। যার ফলে ম্যাচের ৬৭ মিনিটে দশজনের দলে পরিণত হয় তাজিকিস্তান। ক্যাউন্টার অ্যাটাক থেকে একাই বল নিয়ে যাচ্ছিলেন হেমন্ত। বক্সে ঢোকার ঠিক আগমুহূর্তে তাকে ফেলে দেন আসরোরোভ। এতেই দ্বিতীয় হলুদ কার্ড লাল কার্ডে পরিণত হলে দশজন হয়ে যায় তাজিকিস্তান। এ সুযোগটাও কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। উল্টো দশজনের দলে পরিণত হওয়া তাজিকিস্তান খেলার কৌশলে পরিবর্তন এনে কাউন্টার অ্যাটাকে যেতে শুরু করে। এগিয়ে গিয়েও ডিফেন্সিভ ফুটবল শুরু করে বাংলাদেশ। মাঝে অবশ্য এমিলির দুটি হেড জাল খুঁজে না পেলে এগিয়ে যাওয়া হয়নি বাংলাদেশের, যার একটি ছিল ৭১ মিনিটে। ৮৫ মিনিটে আবারও সেই ভুল, বক্সের ঠিক বাইরে তাজিক এক ফরোয়ার্ডকে ফেলে দেন এমিলি। ফ্রিকিক পায় মধ্য এশিয়ার দেশটি। শারিপভ ফ্রিকিক নেয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে মামুনুল বেরিয়ে আসলে হলুদ কার্ড দেখান কোরিয়ান রেফারি লিং মন হুং। ওই ফ্রিকিক থেকেই তাজিকদের সমতায় ফেরান ফাতিলুভ। অতিরিক্ত সময়ে দলকে হারের হাত থেকে রক্ষা করেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক রাসেল মাহামুদ লিটন। কিরগিজস্তান ম্যাচেও তিন গোলের মধ্যে দুটি সেটপিস থেকে হজম করে বাংলাদেশ। সিঙ্গাপুর ও আফগানিস্তানের সঙ্গে খেলা দুটি প্রীতি ম্যাচেও একাধিক সেটপিস থেকে গোল খেয়েছে স্বাগতিকরা। সিঙ্গাপুরের কাছে ২-১ গোলে হারের ম্যাচে এগিয়ে গিয়েও শেষ মুহূর্তের ফ্রিকিকে গোল হজম করে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের ম্যাচেও ছিল একই চিত্র। ওই ম্যাচে চার মিনিটে এগিয়ে গিয়েও গোল ধরে রাখতে পারেনি মামুনুলরা। সেট পিচের দুরবস্থা নিয়েই ৩ সেপ্টেম্বর পার্থে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দল : লিটন  (গোলরক্ষক) ইয়াসিন, তপু, রায়হান, নাসিরুল ইসলাম নাসির, জামাল ভূঁইয়া, মামুনুল ইসলাম, হেমন্ত, জুয়েল রানা (এনামুল) সোহেল রানা ও এমিলি ।

Leave a Reply