এইচআরডব্লিউ’র বিবৃতি: এনজিও নিয়ন্ত্রণে আইন একদলীয় শাসনের নামান্তর

06/07/2014 4:59 pmViews: 4

 

ঢাকা, ৬ জুলাই  : বাংলাদেশের এনজিও সংস্থা নিয়ন্ত্রণ আইনের কঠোর সমালোচনা করেছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। আইনটিকে কঠোর মন্তব্য করে সংস্থাটির এশিয়ার ডেপুটি ডিরেক্টর পিল রবার্টসন বলেছেন, এ ধরণের নিয়ন্ত্রণ আইন একদলীয় শাসন বা একক কতৃত্ববাদী শাসনের নামান্তর। যেটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সাথে খাপ খায়না।

রবিবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।

এনজিও সংস্থা নিয়ন্ত্রণে করা আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, এ আইনটি অবশ্যই বাতিল হওয়া উচিত। বাংলাদেশের দাতাদের উচিত এ আইনের বিষয়ে প্রকাশ্যে তাদের উদ্বেগ জানানো। আর এটি সরকারের এক ধরণের নীরব অবজ্ঞা।

দেশের বেসরকারি সংস্থাগুলো অবরুদ্ধ হয়ে গেছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এ আইনের মাধ্যমে খুব সহজেই এনজিওগুলোর বৈধ কাজের বিরুদ্ধে অপব্যবহার করা যাবে।

পিল রবার্টসন বলেন, বাংলাদেশের সরকারী ও ব্যাক্তিগত খাতে দুর্নীতির ছড়াছড়ি রয়েছে। এটা খুবি দৃষ্টি কটু যে সরকার সেদিকে নজর না দিয়ে এনজিও গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে কঠোর আইন করছে ও সময় ব্যয় করছে। তিনি বলেন, এ আইন বহাল থাকলে তা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও মানবাধিকার রক্ষার কাজে দাতাদের অর্থায়নকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্থ করবে।

পিল রবার্টসন বলেন, কোন প্রজেক্ট কি রকম এটা সিদ্ধান্ত নেয়া সরকারের কাজ নয়। একি সাথে দেশের বাইরে কারা ভ্রমণ করতে পারবে তাও সিদ্ধান্ত নেয়া তাদের কাজ নয়।

বিৃবতিতে এনজিও তত্ত্বাবধানের জন্য ‘এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো’রও সমালোচনা করা হয়। এর বিভিন্ন দুর্বলতা ও অস্বচ্ছতার দিক তুলে ধরে আপিলের জন্য একটি নিরপেক্ষ ক্ষেত্র তৈরির আহবান জানান রবার্টসন।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার বলছে আর্থিক অনিয়ম, অপব্যবহার রোধ করতে বেসরকারি সংস্থাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। ব্যক্তি বা কোন গ্রুপ ধারা সন্ত্রাসী, অবৈধ কর্মকান্ড রোধে দেশটিতে আইন করাই রয়েছে। সন্ত্রাসী আইন, সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইন, রাজস্ব আইন এবং বেসরকারি সংস্থা বা ব্যক্তির অবৈধ কর্মকান্ড রোধের আইন রয়েছে।

এতে বলা হয়, আইনে বলা হয়েছে, বেসরকারি সংস্থা বা কোন ব্যক্তি অনিয়মের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন জানাতে পারবে। এর দ্বারা বোঝা যায়, সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। যেটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটি সরকারের মন্ত্রণালয়কে কোন বেসরকারি সংস্থার প্রজেক্ট পুন:বিবেচনা বা বাতিল করার ক্ষমতা প্রদান করেছে। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবীদের তাদের প্রজেক্টের কাজে বিদেশ ভ্রমণের পূর্বে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আর্টিকেল ১২ এর নাগরিকের ব্যক্তি ও রাজনৈতিক অধিকারের লংঘন।

‘এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো’র সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো পূর্বে অনেক গ্রুপ পরিচালনা বন্ধ করে দিয়েছে। এটি রাজনৈতিক ছত্র-ছায়ায় তদন্ত চালিয়েছে। সরকারের সমালোচনার জন্য এটি প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর অর্থায়ন বন্ধ করেছে। সংস্থাটির কর্মকর্তা আদিলুর রহমান খান ও এএসএম নাসিরউদ্দিন এলানকে গ্রেফতার ও হয়রানি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, অপর এক প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উপরও নজরদাড়ি বাড়ানো হয়েছে। গত মে মাসে সংস্থাটির পরিচালক (তদন্ত) মোহাম্মদ নূর খানকে অপহরণের চেষ্টা চালানো হয়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দ্বারা বিচার-বর্হিভূত হত্যাকান্ডের সমালোচনার জন্য তাকে হুমকি শুনতে হচ্ছে।

বাংলাদেশের দাতাদের উদ্দেশ্যে বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক দাতাদের উচিত আওয়ামী লীগ সরকারকে চাপ দেয়া, যাতে করে এনজিও গ্রুপগুলো তাদের অর্থায়ন গ্রহণ করতে পারে। এবং সরকারের বাধা ছাড়াই তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে। সরকারের উচিত এই বিল প্রত্যাহার করা এবং এনজিও নিয়ন্ত্রণে বাস্তবসম্মত আইন করা।

বিবৃতিতে এ আইন বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলা হয়, এ আইন অবশ্যই প্রত্যাহার করা উচিত। আর এটা যদি সংসদের মাধ্যমে করতে হয়, স্থায়ী কমিটির উচিত সমস্যাপূর্ণ এ আইনকে সংশোধন করা। যাতে করে সংস্থাগুলো অর্থায়নের সংকট ও নিয়মের জটলা থেকে মুক্তি পায়।

Leave a Reply