উপ-প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন আনোয়ার ইব্রাহিমের সহধর্মিণী আজিজাহ
উপ-প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন আনোয়ার ইব্রাহিমের সহধর্মিণী আজিজাহ
বিজয়ী জোটের পরিকল্পনা অনুযায়ী ড. মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। আর উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন পিকেআর দলের প্রধান ডা. আজিজাহ। এই নারী রাজনীতিক হলেন মাহাথিরের এক সময়ে সহযোগী ও সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সহধর্মিণী।
আনোয়ার ইব্রাহীমের নির্বাচনে লড়াইয়ে বাধা আসার কারণে, অবধারিতভাবেই তার স্ত্রী দলের হাল ধরেন। ২০১৮ সালের আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আনোয়ার পত্নী ওয়ান আজিজাহ বেশ ভালোভাবেই তার দল ও জোটকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
একবার ওয়ান আজিজাহকে জিজ্ঞাস করা হয়েছিল, কেন তারা সেই লোকের সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন, যেই লোক আনোয়ারকে সমকামিতার অপবাদ দিয়ে জেল খাটিয়েছে? তিনি কি প্রকারান্তরে শয়তানের সাথেই হাত মেলান নাই?
উত্তরে আনোয়ার পত্নী বলেছিলেন- ‘উই হ্যাভটু গো বিয়ন্ড দ্যাট’ অর্থাৎ ব্যক্তি রেষারেষির ঊর্ধ্বে ওঠার কথা। ঘৃণার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশের জন্য চিন্তা করার কথা। তিনি বলেছিলেন- ‘মাহাথিরকে আমরা ডাকি নাই, বরং সে আমাদের কাছে এসেছে’। তিনি মাহাথিরের দেয়া অপবাদের প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘এটা শয়তানের সাথে জোট নয়। যদি আনোয়ার নিজে তাকে (মাহাথিরকে) ক্ষমা করতে পারেন, যেটা বলা হয়, মানুষকে ক্ষমা করা হল ঐশ্বরিক ব্যাপার’।
আজিজাহকে বলা হয়েছিল, আপনি যোগ্য নেত্রী, সফলতার সাথে বিভিন্ন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আনোয়ারের অনুপস্থিতিতে তার দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শ্রুতি আছে যে, যদি আপনার দল জিতে তাহলে আপনি অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং আনোয়ার জেল থেকে বের হলে তার হাতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব তুলে দেবেন। কেন আপনি এটা করছেন, বিজয়ের নেতৃত্ব আপনি দিচ্ছেন। বিজয়টা আপনার। অনেক ইয়াং মেয়েরা হয়তো ভাবছে এটা অযৌক্তিক যে, আপনার সফলতা ও যোগ্যতার ফসল আপনার স্বামী নিয়ে নিচ্ছেন? আপনি কেন প্রক্সি দিচ্ছেন?
জবাবে ওয়ান আজিজাহ বলেছিলেন- প্রাইম মিনিস্টার তিনিই হবেন যাকে জনগণ চাইবে। তবে আমি সততার সাথে বলতে চাই, এটাই প্ল্যান যে সাজা থেকে মুক্তি পেলে আনোয়ার দায়িত্ব নেবেন। একাজ করতে আমার কোনো আপত্তি নাই। কারণ আনোয়ার আমার চেয়ে ভালো লিডার। তার আমলাতান্ত্রিক যোগ্যতা আমার চেয়ে বেশি। একজন মুসলিম হিসেবে আমাকে অবশ্যই কুরআনের আইনকে শ্রদ্ধা করতে হবে, স্বীকার করতে হবে।
মালয়েশিয়ার ক্ষমতার রাজনীতিতে প্রধানত দুইটা জোটের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। একটি হল বারিসান ন্যাশনাল (BN), যেটি আমনো (UMNO) নামক একটি দলের নেতৃত্বে গঠিত জোট। এ জোটে তেরটি দল রয়েছে। এই দলটি গত কয়েক যুগ ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। জোটের আওতায় মাহাথির মুহাম্মদ দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন দীর্ঘকাল। আনোয়ার ইব্রাহীম ছিলেন তাঁর ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার।
পরে আনোয়ারের সাথে মাহাথিরের দ্বন্দ্বের জের ধরে, আনোয়ারকে তার পদ ও দল থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় এবং আনোয়ারকে সমকামিতার অভিযোগে কারাদণ্ডও দেওয়া হয়। তিনি পরবর্তীতে এই মামলার শাস্তি থেকে অব্যাহতি পান। কিন্তু বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নাজিব তুন রাজ্জাক এমন এক মুহূর্তে আনোয়ারকে আবারও নতুন সমকামিতার মামলায় জেলে পাঠান, যখন আনোয়ারের দল বিরোধী শক্তি হিসেবে বেশ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছিল।