উন্নয়নের ধারা রক্ষায় প্রয়োজন সরকারের ধারাবাহিকতা
০ নৌকায় ফের ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
০ এমএ মান্নান ফ্লাইওভার উদ্বোধন- চট্টগ্রামবাসীর জন্য ঈদের উপহার
০ আরও ৩০ প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
হাসান নাসির, চট্টগ্রাম : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হলো চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে নির্মিত ‘এমএ মান্নান ফ্লাইওভার।’ উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে এটিকে চট্টগ্রামবাসীর জন্য বর্তমান সরকারের ঈদ উপহার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। ২০২১ সালে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে তিনি আবারও নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য চট্টগ্রামবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সকালে উদ্বোধন করেন চট্টগ্রামবাসীর বহুল প্রত্যাশার এমএ মান্নান ফ্লাইওভার। এদিন তিনি আরও ৩১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তন্মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছবিসংবলিত মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল। এখানে তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সে বিচার বন্ধ করে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতিতে ও সমাজে পুনর্বাসিত করেন। বর্তমান সরকার পুনরায় সেই বিচারকাজ শুরু করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ হবে এবং রায়ও কার্যকর হবে। শনিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী বহদ্দারহাটে এমএ মান্নান ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এসে উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার এলাকায় জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় জামে মসজিদ ময়দানে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে যোগ দেন। সেখানে তিনি উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন অবশিষ্ট প্রকল্পগুলোর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুধী সমাবেশে বলেন, ২০১০ সালের ২ জানুয়ারি আমি চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটসহ ৫টি জংশনে ২৬০ কোটি টাকার ৫টি ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম। পবিত্র ঈদ-উল-আযহার আগে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের উদ্বোধন চট্টগ্রাম মহানগরবাসীর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার। বক্তব্যে তিনি বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের নাম মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক মন্ত্রী এমএ মান্নানের নামে নামকরণ করেন। এ ছাড়া মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন যে ফ্লাইওভারটি হবে তার নাম মুক্তিযুদ্ধের আরেক সংগঠক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর নামে হবে বলে ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা এই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামগুলো স্মরণীয় করে রাখতে চাই। কেউ যেন তাঁদের ভুলে না যান।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উল্লেখ করে বলেন, আমরা চট্টগ্রামের উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি চট্টগ্রামে যতবার এসেছি, আমার টুঙ্গিপাড়ায়ও ততবার যাইনি। এতেই প্রমাণ হয় চট্টগ্রামের উন্নয়ন করতে বর্তমান সরকার কতটা আন্তরিক। এমএ মান্নান ফ্লাইওভার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি চট্টগ্রামের প্রবেশ তোরণ এবং পর্যটন শহর কক্সবাজারের গেটওয়ে হিসেবে কাজ করবে। এ প্রকল্প যানজট কমিয়ে বান্দরবান ও কক্সবাজার তথা দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এশিয়ান হাইওয়ের একটি রুট চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হয়ে মিয়ানমার ও চীনের দক্ষিণে কুনমিং শহরের সঙ্গে যেন যুক্ত হতে পারে, সে জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। বহদ্দারহাটের এই ফ্লাইওভার এই হাইওয়ের সংযোগ স্থাপনেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বক্তব্যে তিনি ফ্লাইওভার নির্মাণকালে একটি দুর্ঘটনায় ১৪ নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর দুঃখ ও শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। ফ্লাইওভার নির্মাণে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর সহযোগিতা ও ভূমিকা না থাকলে এত অল্প সময়ে এ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব ছিল না। দেশের আপদ-বিপদে সেনাবাহিনী যে ভূমিকা পালন করে থাকে সে জন্য সেনাবাহিনীর প্রতিও তিনি ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন বিশ্বমন্দা ছিল। সে মন্দা কাটিয়ে বর্তমানে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। দেশে বিনিয়োগ বেড়েছে। এই চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। এতে করে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান আরও বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, মন্দার মাঝেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের অধিক। মাথাপিছু আয় এখন ১০৪০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়ে ৪০ ভাগ থেকে ২৬ ভাগে নেমে এসেছে। নিম্ন আয়ের লোকরা মধ্যবিত্তে উন্নীত হয়েছেন। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলাম। সে অনুযায়ী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও চালু করেছি কম্পিউটার প্রযুক্তি। দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে।
দেশের খাদ্য পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকার চট্টগ্রামের সিএসডি গোডাউন মাত্র এক টাকার বিনিময়ে ইপিজেড করার জন্য বিক্রি করে দিয়েছিল। আমরা সরকারে এসে তা পুনরুদ্ধার করে সেখানে আধুনিক খাদ্যগুদাম নির্মাণ করেছি। এসব গুদাম এমনই যে, এখানে দুই-তিন বছরের জন্য খাদ্য মজুদ রাখা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, খাদ্য আমদানি করলেও গুদামের প্রয়োজন, আর নিজেরা উৎপাদন করে রফতানি করতে হলেও গুদামের দরকার হয়। সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সরকার খাদ্যগুদাম নির্মাণে গুরুত্ব দিয়েছে। দরিদ্র মানুষের জন্য আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর মাধ্যমে এ কাজ চলছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, ২০২১ সালে আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত অবস্থার মধ্যে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করতে চাই। সরকার পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় উন্নয়নকাজ শুরু করেছে। অনেক কাজ এর মধ্যেই শেষ হয়েছে। আবার অনেক কাজ এগিয়ে চলেছে। এ উন্নয়ন কর্মকা- অব্যাহত রাখার জন্য সরকারের ধারাবাহিকতার প্রয়োজন। বিশ্বসভায় বাংলাদেশ যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে এবং বাংলাদেশকে যেন পরমুখাপেক্ষী হতে না হয়, সে জন্য দরকার সরকারের ধারাবাহিকতা। আমরা যে কাজ এর আগের মেয়াদে শুরু করেছিলাম, বিএনপি-জামায়াত সরকার তা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত রেখে গিয়েছিলাম। বিএনপি সরকার তা নামিয়ে এনেছিল ৩ হাজার ২শ’ মেগাওয়াটে। বর্তমানে আমরা বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ৯ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি। এখন ৬ হাজার ১৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে। চট্টগ্রামে বিদ্যুতের কিছু সমস্যা হচ্ছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, সাঙ্গু থেকে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না বলে এ সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। তবে সঙ্কট যেন কেটে যায় সে জন্য বর্তমান সরকার সজাগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সব শেষে আবারও নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য সুধী সমাবেশে আহ্বান জানান।
জমিয়তুল ফালাহ মাঠে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, সেনাবাহিনী-প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, মইন উদ্দিন খান বাদল, নুরুল ইসলাম বিএসসি, শামসুল হক চৌধুরী, এমএ লতিফ, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চেমন আরা তৈয়ব, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এমএ সালাম এবং চট্টগ্রামের সরকারী আধা-সরকারী বিভিন্ন সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, চিটাগং চেম্বার, বিজিএমইএসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, বর্তমান সরকার চট্টগ্রামে যত উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা করেছে, বিগত ৫০ বছরেও একসঙ্গে এত উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়ন করেও যদি জনগণের রায় পাওয়া না যায়, তাহলে এ জাতির কপালে অনেক দুর্গতি থাকা স্বাভাবিক। তিনি বলেন, উন্নয়নের প্রতিদান যদি পাওয়া না যায় তাহলে ভবিষ্যতে আর কোন সরকার উন্নয়ন করবে না। তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন জানানোর জন্য সুধী সমাবেশে আহ্বান জানান।
সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্ক ডিভিশনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামসুল আলম খান। তিনি বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার নির্মাণে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ ফ্লাইওভার প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার সময়সীমা আগামী ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু জনদুর্ভোগ হ্রাস করতে এর আগেই এটিকে যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। ফ্লাইওভার নির্মাণে তদারকির জন্য সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখায় তিনিও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ধন্যবাদ জানান।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল ॥ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ-সংবলিত মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরালের পর্দা উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার সকালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এর ফলক উন্মোচন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আবারও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে সাংবাদিকদের সহায়তা কামনা করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা বরাবরই আন্দোলন সংগ্রামে এবং অধিকার আদায়ে সর্বদা অবদান রেখে চলেছেন।
ম্যুরালের পর্দা উন্মোচনের পর প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, জাতির কল্যাণে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়। আর পরাজিত শক্তির দোসররা ক্ষমতায় থাকলে যুদ্ধাপরাধীরা মন্ত্রী, উপদেষ্টা হয়ে গাড়িতে পতাকা ওড়ায়।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে সভাপতি আলহাজ আলী আব্বাস প্রধানমন্ত্রীকে প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ম্যুরালের একটি তৈলচিত্র হস্তান্তর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি এম এ মালেক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদ উল আলম। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে প্রেসক্লাবের ম্যুরালের উন্মোচন অনুষ্ঠানে যোগ দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী। সমাবেশে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মকর্তা, সিনিয়র সাংবাদিক এবং ক্লাবের স্থায়ী সদস্যরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই প্রথম আগমন। এ উপলক্ষে প্রেসক্লাব আঙ্গিনাকে মনোজ্ঞভাবে সাজানো হয়। উপস্থিত সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। বাংলাদেশের কোন প্রেসক্লাবে এ ধরনের ম্যুরাল স্থাপন এই প্রথম। প্রধানমন্ত্রী এ ম্যুরাল স্থাপনে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ম্যুরাল উন্মোচনের পর প্রেসক্লাব সভাপতি আলহাজ আলী আব্বাস মোনাজাত পরিচালনা করেন। প্রধানমন্ত্রী প্রায় ২০ মিনিট চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অনুষ্ঠানে অবস্থান করেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৬৯-এর গণ-আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ভোট ও ভাতের অধিকার রক্ষায় চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে বিচারকাজ বন্ধ করে দেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় এসে আবারও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে। ইতোমধ্যে কয়েকটির রায় হয়েছে। আমরা বিচার পেয়েছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করতেও সক্ষম হবো। এ জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, এদেশের পরাজিত শক্তির দোসররা স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বারবার মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। তরুণ প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস শিক্ষা দিতে হবে। তাহলে জাতির উন্নতি হবে। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল নির্মাণ করে নতুন প্রজন্মকে ইতিহাসের সঠিক শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। এ উদ্যোগ দেশের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গঠন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নিজস্ব অর্থায়নে এ ম্যুরাল স্থাপনের পর শনিবার থেকে সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ম্যুরালটি নির্মাণ করেছেন দেশের বরেণ্য শিল্পী সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ।
চট্টগ্রামে যেসব প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার চট্টগ্রামে যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেগুলো হল- বহদ্দারহাটে এমএ মান্নান ফ্লাইওভার, দেওয়ানহাট ওভারপাস ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল, চউকের অর্থায়নে অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়ক, সল্টগোলা কর্মজীবী মহিলা ডরমেটরি, অলঙ্কার-দেওয়ানহাট সড়ক, আরাকান সড়ক, অক্সিজেন-অলি খাঁ মসজিদ সড়ক (হাটহাজারী রোড), পাঠানটুলী রোড, কলেজ রোড (গণি বেকারি-অলি খাঁ মসজিদ), সিডিএ গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজ, বিপণিবিতান বি ব্লাক (দশম তলা) এবং ডবলমুরিং থানার সিডিএ আবাসিক এলাকায় শিক্ষা কমপ্লেক্স।
চউকের প্রকল্পগুলো ছাড়া অন্য যে প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় সেগুলো হচ্ছে- পটিয়া পৌরসভা ভবন, রাউজান উপজেলায় ২৫ মেগাওয়াট ডুয়েল-ফুয়েল বিদ্যুত প্লান্ট, রাউজানে মহাকবি নবীন সেন স্মৃতি কমপ্লেক্স, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় শেখ রাসেল এ্যাভিয়ারি এ্যান্ড ইকো পার্ক, সীতাকু-ের কুমিরা ফেরিঘাট জেটি, মীরসরাই উপজেলা অডিটরিয়াম-কাম-কমিউনিটি সেন্টার, ফটিকছড়ি উপজেলার ফতেপুর কমিউনিটি সেন্টার ও পটিয়ায় গোবিন্দরখালী সুপার মার্কেট কাম-কমিউনিটি-সেন্টার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ছাড়াও রিজভিয়া সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসা, বাঁশখালী বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, পশ্চিম বাঁশখালী উপকূলীয় ডিগ্রী কলেজ বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, পটিয়া পৌরসভা বাস টার্মিনাল ও পটিয়া পৌর অডিটরিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল পৌনে ১০টায় চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অবতরণ করেন। এরপর সড়কপথে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার উদ্বোধন শেষে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে আসেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে সুধী সমাবেশের পর চট্টগ্রাম সেনানিবাসে যান। সেখানে জোহরের নামাজ ও মধ্যাহ্ন বিরতির পর যাত্রা করেন সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীতে অবস্থিত মিলিটারি একাডেমীর (বিএমএ) উদ্দেশে। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স উদ্বোধন করেন। বিকেলে তিনি পতেঙ্গায় বাংলাদেশ নেভাল একাডেমীতে একটি অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। এরপর একাডেমীর হেলিপ্যাড থেকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন।