ইসালে সওয়াব ও বিনিময় মাওলানা মাহ্মূদুল হাসান
ইসালে সওয়াব ও বিনিময়
মাওলানা মাহ্মূদুল হাসান
কোরআনে কারিম এমন একটি গ্রন্থ, যা স্পর্শ করলে, দেখলে কিংবা তেলাওয়াত করলে সওয়াব পাওয়া যায়। বুঝলে এবং আমল করলেও সওয়াব পাওয়া যায়। শুধু সওয়াবই সওয়াব, বরকতই বরকত। রহমতে আলম হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন কোনো মুসলমান মৃত্যুবরণ করে, তখন তোমরা তার জন্য ইসালে সওয়াব করবে। ইসালে সওয়াবের জন্য অগণিত আমল রয়েছে, তন্মধ্যে তেলাওয়াতে কোরআন সর্বোত্তম আমল। কারও জন্য কোরআন তেলাওয়াত করত ইসালে সওয়াব করলে আশা করা যায় যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে ক্ষমা করে দেবেন। তবে সওয়াব পাওয়ার শর্ত রয়েছে। তাহলো মৃত ব্যক্তির প্রতি ইসালে সওয়াবের জন্য কোরআনখানি করে টাকা-পয়সা দেওয়া কিংবা নেওয়া যাবে না। শুধু সওয়াবের নিয়তে পড়তে হবে। অন্যথায় সওয়াবের পরিবর্তে আরও গোনাহ হবে। তেলাওয়াতকারীকে মনে করতে হবে, আমাকেও একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে, আমারও সওয়াবের প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া একজন মুসলমান মৃত্যুবরণ করলে তো এমনিতেই মন খারাপ হয়ে যায়। কাজেই তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা এবং মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা ইমানি দায়িত্ব। মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফিরাতের জন্য কোরআনখানি করে টাকা-পয়সা দেওয়া এবং নেওয়া উভয়ই হারাম। যারা দেয়, তারাও গোনাহগার এবং যারা নেয়, তারাও গোনাহগার। এ ধরনের তেলাওয়াত দ্বারা মৃত ব্যক্তির কোনো উপকার হবে না। তবে যারা মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফিরাতের জন্য শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরআনখানি করে, তাদের কোরআনখানির দ্বারা মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফিরাত হয়। শাফেয়ি মাজহাবের শীর্ষস্থানীয় একজন আলেম হলেন মুহাম্মদ বিন সালাম। তিনি অনেক কিতাবাদি লিখেছেন, যার মধ্যে ‘সুবুলুস সালাম’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কথায় বলে, যে যত বড় হয়, তার ভুলও তত বড় হয়। কোনো ব্যক্তি যদি ১০০ তলা উপরে উঠে পড়ে যায়, তাহলে তার বাঁচার আশা করা যায় না। পক্ষান্তরে কোনো ব্যক্তি যদি একতলা উপর থেকে পড়ে যায়, তাহলে তার হাড্ডি ভেঙে যাবে, কিন্তু তার বাঁচার সম্ভাবনা আছে। বড় আলেম-উলামারা ভালো কাজ করেন। আর যদি ভুল করে বসেন, তবে গোটা জাতিকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রষ্টতার অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হন। যাই হোক মুহাম্মদ বিন সালামের ব্যক্তিগত একটি ফতওয়া ছিল। তিনি বলতেন, মৃত ব্যক্তির জন্য কোরআনখানি করে ইসালে সওয়াব জায়েজ নেই। তার মৃত্যুর পর জনৈক ব্যক্তি তাকে স্বপ্নে সাক্ষাৎ পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হুজুর! আপনি কেমন আছেন? আল্লাহপাক আপনার সঙ্গে কেমন আচরণ করেছেন? তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহর শোকর তিনি আমাকে জান্নাত দান করেছেন। তবে আশানুরূপ মর্যাদা পাচ্ছি না। আমার সাথীরা আমার চেয়ে অনেক বেশি মর্যাদার অধিকারী। কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, আমি দুনিয়ায় থাকা অবস্থায় একটি ফতওয়া দিয়েছিলাম যে, মৃত ব্যক্তির জন্য কোরআনখানি করে ইসালে সওয়াব জায়েজ নেই। ফলে আমার ভক্তরা ও আত্মীয়স্বজনের কেউ আমার নামে কোরআনখানি করে ইসালে সওয়াব করেনি। এ কারণে আমি সে সওয়াব থেকে বঞ্চিত। অন্যদিকে আমার সাথীদের ভক্তরা ও আত্মীয়স্বজন সবাই তাদের জন্য কোরআনখানি করে ইসালে সওয়াব করে, ফলে আমার তুলনায় তাদের মর্যাদা অনেক বেশি।
লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।