ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার আহ্বান সৌদি বাদশাহর
ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার আহ্বান সৌদি বাদশাহর
পরমাণু অস্ত্র অর্জন এবং ব্যালিস্টিক মিসাইল কর্মসূচি থেকে বিরত রাখতে ইরানের বিরুদ্ধে ‘কড়া অবস্থান’ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। সরকারের শীর্ষ উপদেষ্টা বোর্ডে বার্ষিক বক্তৃতায় বুধবার তিনি এ আহ্বান জানান।
সৌদি বাদশাহ বলেন, ‘ইরানের আঞ্চলিক কর্মপরিকল্পনা, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ, সন্ত্রাসবাদে মদদ এবং গোষ্ঠীগত বিভাজনে উসকানির বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়েছে সৌদি।’
‘ইরানের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে দেশটির ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র অর্জন এবং ব্যালিস্টিক মিসাইল কর্মসূচি কঠোর হস্তে মোকাবেলা নিশ্চিত করে’ যোগ করেন তিনি।
৮৪ বছর বয়সী এই শাসককে সেপ্টেম্বরে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনে ভার্চুয়ালি ভাষণ দেয়ার এই প্রথম কোনো সভায় বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। ওই ভাষণে তিনি ইরানের ‘সম্প্রসারণবাদের’ নিন্দা জানান।
সৌদি বাদশাহর সর্বশেষ বক্তৃতার প্রতিক্রিয়ায় এখনো কোনো মন্তব্য করেনি ইরান। জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাদশাহর দেয়া বক্তব্যকে ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’ বলে নাকচ করে দেয় তেহরান।
যুক্তরাষ্ট্রের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে হেরে গেছেন সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন খড়গহস্ত। তবে মানবাধিকার ইস্যু ও সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাসহ নীতিগত কিছু কারণে নবনির্বাচিত ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদির সেই উষ্ণ সম্পর্ক অব্যাহত থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
এ দিকে এএফপি খবরে বলা হয়, আন্তর্জাতিক একটি চুক্তির আওতায় ইউরেনিয়ামের মজুদ ১২ গুণের বেশি বৃদ্ধি করেছে ইরান। গ্লোবাল ওয়াচডগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) বলছে, এখন ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুদের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৪৪৩ কেজি।
মূলত পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। তবে ইরান সব সময়ই দাবি করে আসছে যে, তারা শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ইউরেনিয়ামের মজুদ ১০ গুণ বৃদ্ধি করেছিল ইরান। সে সময় ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুদের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১০৫ কেজি।
আইএইএ বলছে, অঘোষিত স্থানে পারমাণবিক উপাদানের উপস্থিতির পক্ষে ইরানের ব্যাখ্যা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এক টুইট বার্তায় ইরানে আইএইএর দূত গারিব আবাদি বলেন, এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করা উচিত নয়। তিনি বলেন, এই বিষয়টি সমাধানের জন্য ইরানের সাথে আলোচনা চলছে।
আইএইএর সর্বশেষ রিপোর্টে ইরানে পারমাণবিক উপাদান পাওয়ার কথা জানালেও দেশটির কোন অঞ্চলে বা পরমাণু কেন্দ্রে এসব উপাদান পাওয়া গেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। একটি সূত্র জানিয়েছে যে, এগুলো ইউরেনিয়াম প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে এসব উপাদান হয়তো সংরক্ষণের জন্য রাখা হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী পরমাণু অস্ত্র বানাতে প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়ামের চেয়ে অনেক কম মাত্রায় ইউরেনিয়াম ইরানের উৎপাদন করার কথা। আইএইএ জানিয়েছে, ইরান ক্রমাগত তাদের পরমাণু সমৃদ্ধি বাড়িয়ে যাচ্ছে। ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী, ৩.৬৭ শতাংশ পরমাণুর মজুদ থাকার কথা থাকলেও এর চেয়ে অনেক বাড়ানো হয়েছে। চুক্তির বাইরে পরমাণুর মজুদ বাড়িয়ে চলেছে দেশটি। আলজাজিরা