ইমরান এইচ সরকারকে ক্ষমা চাইতে হবে

18/04/2016 4:25 pmViews: 9

ইমরান এইচ সরকারকে ক্ষমা চাইতে হবে

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস আমাকে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্রে শফিক রেহমানের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা উদ্ঘাটন করেছে। তারা এ বিষয়ে প্রমাণাদি আমাদের সরকারের কাছে দিয়েছে। তাকে এই প্রমাণের ভিত্তিতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমি এর চেয়ে বেশি কিছু প্রকাশ করতে পারছি না, কিন্তু এই  প্রমাণ দ্ব্যর্থহীন এবং অখণ্ডনীয়।

আমি আশাই করেছিলাম বিএনপি এটা নিয়ে মিথ্যা বলার চেষ্টা করবে। যদিও, আমি আশ্চর্য হয়েছি ইমরান সরকারের বিষয়ে। সম্ভবত শেষ পর্যন্ত তার আসল চেহারাটা উন্মোচিত হলো। এটা দেখে মনে হচ্ছে সে আমাদের বেশির ভাগ সুশীলের মতোই, আরেকটা সুবিধাবাদী এবং মিথ্যাবাদী। হয়তো বিএনপি তাকে পয়সা দিয়েছে। কে জানে। যেভাবেই হোক, আমি তার প্রতি সব শ্রদ্ধা হারিয়েছি। তাকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে আমাদের সরকারের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আমি আমার সব বন্ধু এবং ভক্তদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, যারা তাকে অনুসরণ করেন তারা তাকে ফেসবুক থেকে আনফলো/আনফ্রেন্ড করুন। সে একজন অপরাধীর হয়ে কথা বলছে যে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল।

বায়বীয় অভিযোগে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার হতাশাজনক: ইমরান সরকার
এর আগে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানের গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। এক ফেসবুক প্রতিক্রিয়ায় তিনি লিখেছেন, প্রবীণ (৮১ বছর বয়সী) সাংবাদিক শফিক রেহমানের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। শফিক রেহমানের রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে আমি একমত নই। ভিন্নমতের হলেই তাকে দমন করার যে নোংরা রাজনৈতিক অপকৌশল, এর একটা অবসান চাই।

দেশে যখন একের পর এক মানুষ খুন হচ্ছে, লেখক-প্রকাশক-বিদেশি থেকে শুরু করে মসজিদ-মন্দিরে ঢুকে মুয়াজ্জিন-পুরোহিতকে হত্যা করা হচ্ছে তখন খুনিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে অপহরণের বায়বীয় অভিযোগে এমন একজন প্রবীণ সাংবাদিককে গ্রেপ্তার সত্যিই হতাশাজনক। আমি প্রত্যাশা করি সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং প্রতিপক্ষকে দমনের চেয়ে দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের দিকে সরকার মনোযোগী হবে।

দ্রুতগতির ডিজিটাইজেশন বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে আশা এবং কিছু বিপদ: জয়
নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের সাম্প্রতিক খবরগুলো পড়লে মনে এমন ধারণা হতে পারে যে বাংলাদেশে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে অদক্ষ একটি দেশ। এটা সত্য নয়। এই হ্যাকিংয়ের ঘটনা ছিল শোচনীয়। বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষ এই লোপাট হওয়া অর্থ উদ্ধার ও হ্যাকারদের গ্রেপ্তারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ হ্যাকারদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে কারণ বাংলাদেশ অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ও বিস্তৃত পরিসরে ডিজিটাল প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ৪৫ বছরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের আরও অনেক উন্নয়নের মতোই দেশে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার ঘটছে বিদ্যুৎ গতিতে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় প্রজন্মের ডিজিটাল সিস্টেমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যেগুলো দ্রুতগতির, সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং অধিকতর সুরক্ষা দিতে সক্ষম। এটা ভালো খবর। কিন্তু এর খারাপ দিকটি হলো অবশিষ্ট প্রথম প্রজন্মের ডিজিটাল সিস্টেমগুলো হ্যাকারদের সহজ লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। সেগুলোর আধুনিকায়ন চলমান কর্মকাণ্ডেরই অংশ।

বাংলাদেশের ডিজিটাইজেশন কত দ্রুত ঘটছে? ২০০৮ সালে বাংলাদেশের মাত্র ০.৩ শতাংশ নাগরিক ডিজিটাল উপায়ে সরকারি সেবা গ্রহণ করতেন। ওই সময়েই বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে ডিজিটাল উপায়ে সরকারি সেবা সরাসরি পৌঁছে দিতে ডিজিটাল বাংলাদেশ শীর্ষক এক সুদূরপ্রসারী কর্মসূচি চালু করা হয়। বর্তমানে এর ব্যবহার করছেন ৩৫ শতাংশ বাংলাদেশি এবং এর পরিমাণ বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চালু করা ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির লক্ষ্য দেশের প্রতিটি আর্থ-সামাজিক স্তরের নাগরিকের কাছে পৌঁছানো। বাংলাদেশে অনেকেরই ডেস্কটপ কম্পিউটার বা বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ নেই। কিন্তু এ দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষের হাতেই রয়েছে মোবাইল। ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া এবং সরকারি সেবাকে জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়া। এই প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ ও সরকারের স্বচ্ছতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

২০০৯ সালে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল দুই কোটি ৬০ লাখ ডলার। এই পরিমাণ এখন বছরে ৩০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখনও পোশাকশিল্পের প্রাধান্য রয়েছে। কিন্তু একটি মাত্র শিল্পের ওপর নির্ভর করা ঠিক নয়। তাই প্রযুক্তি খাতের বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে আগামী দুই বছরে দেশে ৭৫ হাজার তথ্যপ্রযুক্তি পেশাদারকে প্রশিক্ষিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের ডিজিটাইজেশনের চিহ্ন এখন সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। দেশব্যাপী সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি ডিজিটাল সার্ভিস সেন্টার গড়ে তুলেছে সরকার। প্রতিটি গ্রাম থেকে হাঁটা দূরত্বেই রয়েছে এমন একটি করে কেন্দ্র। উচ্চপর্যায়ের প্রযুক্তি ব্যবসায়কে উৎসাহিত করতে ঢাকার অদূরে ২৩১ একরের একটি বিজনেস পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। গত বছর ৬০ হাজার বর্গফুট আয়তনের একটি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক উন্মুক্ত করা হয়েছে। এমন আরও ছয়টি পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকার দেশব্যাপী ডিজিটাল ডাটা সেন্টার স্থাপন করছে এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতের জন্য ইনকিউবেটর প্রোগ্রাম চালু করেছে। দেশের এক লাখ ৭০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ও ডিজিটাল ক্লাসরুম ও কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের লক্ষ্যও রয়েছে সরকারের। দেশের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, আগামী ২০ বছরে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে ২০ লাখ প্রোগ্রামার প্রয়োজন হবে এবং কেবল বাংলাদেশেই প্রয়োজন হবে এমন কয়েক লাখ প্রোগ্রামার। ডিজিটাইজেশনের নতুন এসব কর্মসূচির লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে শ্রমিকনির্ভর অর্থনীতি থেকে ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তর ঘটানো। বাংলাদেশের বেসরখারি খাতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পও দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৩ সালে তৈরি করা ‘স্টার্টআপ ঢাকা’ তথ্যচিত্রে বাংলাদেশের উদ্যোক্তা ও দ্রুত এগিয়ে যাওয়া স্টার্টআপ খাতের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এমন উদাহরণ অসংখ্য।

বাংলাদেশে পর্যটকদের জন্য ‘ত্রিপুলি’ এখন সব ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। ‘লাইটক্যাসেলডাটা’র মাধ্যমে কোম্পানিগুলো রিয়েল টাইমে ভোক্তাদের নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করতে পারছে। রয়েছে রেস্টুরেন্ট ডিরেক্টরি ‘লেটস ইট!’। বাংলা চলচ্চিত্র ও ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের জন্য রয়েছে ‘বঙ্গোবিডি’। পরিবহন খাতের বেশ কয়েকটি স্টার্টআপের মধ্যে রয়েছে মোবাইলের মাধ্যমে গাড়ি সরবরাহের সেবা ‘চলো’। বাংলাদেশের সবচেয়ে সুপরিচিত স্টার্টআপটি সম্ভবত ‘চালডাল’। খাবার সরবরাহের এই সেবাটিতে অর্থায়ন রয়েছে বিখ্যাত মার্কিন বিনিয়োগকারী সংস্থা ওয়াই কম্বিনেটরের। অনেক স্টার্টআপের উদ্যোক্তা রয়েছেন নারীরাও। এর মধ্যে মাতৃস্বাস্থ্য ও মেয়েদের আগ্রহের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর নিয়ে রয়েছে স্টার্টআপ ‘মায়া’।

বাংলাদেশের সাফল্যই হ্যাকারদের কাছে একে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। কিন্তু এই সাফল্য বিদেশি বিনিয়োগের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যেও পরিণত করেছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ তাই উৎকৃষ্ট মননের আকর্ষণের স্থান ও একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তি খাতের না বলা সেরা গল্পগুলোর একটি।
সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা। ওপরের লেখাটি গত ১৪ই এপ্রিল ওয়াশিংটন টাইমসে তার লেখার অনুবাদ

Leave a Reply