ইনসুলিন-ছুঁচ থেকে মুক্তির দিশা দেখাল বিজ্ঞান
ইনসুলিন-ছুঁচ থেকে মুক্তির দিশা দেখাল বিজ্ঞান
ডায়াবেটিসের রোগীদের এ বার থেকে হয়তো আর যন্ত্রণাদায়ক ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিতেই হবে না। এন্ডোক্রিনোলজির নামী জার্নাল প্লস ওয়ান-য়ে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে একদল ভারতীয় গবেষকের দাবি, এমন একটি রাসায়নিক তাঁরা আবিষ্কার করেছেন যা শরীরে ইনসুলিনের মতোই কাজ করবে। ওই রাসায়নিকটি দুই ধরনের ডায়াবেটিসের (ডায়াবেটিস ১ এবং ডায়াবেটিস ২) ক্ষেত্রেই সমান কার্যকর। গবেষকদের দাবি, ওই রাসায়নিকটি অদূর ভবিষ্যতে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
রাসায়নিকটি তৈরির পিছনে অবদান রয়েছে দেশের আটটি প্রতিষ্ঠানের। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের ইন্সটিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগ এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুওলজি বিভাগের সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার এন্ডেক্রিনোলজি ল্যাবোরেটরির। গবেষণার অন্যতম বিজ্ঞানী বিশ্বভারতীর সমীর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ডিএমপি নামের এমন একটি রাসায়নিক আমরা তৈরি করেছি। ইঁদুরের উপরে তার প্রয়োগ সফল হয়েছে।’’ রাসায়নিকটি তৈরিতে অসমের তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রসায়নবিজ্ঞানী মিহির চৌধুরীর ভূমিকাই প্রধান বলে মন্তব্য করে এসএসকেএম-এর এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সতীনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানুষের উপরে ওই রাসায়নিকটির পরীক্ষা সফল হলে তা ওষুধ হিসেবে বাজারে আসতে পারে।’’
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কী ভাবে কাজ করবে ডিএমপি? ডায়াবেটিস ১-এর ক্ষেত্রে প্যানক্রিয়াসের বিটা সেলগুলি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ইনসুলিন তৈরিই হতে পারে না। এ সব ক্ষেত্রে রোগীকে বাইরে থেকে ইনসুলিন নিতে হয়। ডায়াবেটিস ২-এর ক্ষেত্রে শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয় বটে, কিন্তু তার পরিমাণ কম এবং ওই ইনসুলিন শরীরে ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, নতুন রাসায়নিকটি ডায়াবেটিস ১-এর ক্ষেত্রে ইনসুলিনের মতো কাজ করবে। আর ডায়াবেটিস ২-এর ক্ষেত্রে শরীরে চর্বির পরিমাণ কমিয়ে দেবে যা শরীরে যেটুকু ইনসুলিন থাকবে তাকে সক্রিয় করবে।এন্ডোক্রিনোলজিস্টেরা জানাচ্ছেন, ডায়াবেটিসের সময় শরীরে চর্বি থেকে শক্তি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তাই দেহে জমে থাকা বা খাবারের সঙ্গে ঢোকা চর্বি গ্লুকোজে ভাঙতে পারে না। শরীরের বিভিন্ন স্থানে জমে থাকে। ওই চর্বি যাতে শরীরে জমে থাকতে না পারে, তার জন্য বাজারে দু’টি ওষুধ এক সময় চালু ছিল। কিন্তু শরীরে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকায় আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলি সে ওষুধের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দেয়। সেই তুলনায় ডিএমপি একেবারেই নিরাপদ বলে গবেষণাপত্রে দাবি বিজ্ঞানীদের। সমীরবাবু বলেন, ‘‘ডিএমপি এক দিকে যেমন চর্বি থেকে শক্তি উৎপন্ন করার প্রক্রিয়াকে উজ্জীবিত করে, তেমনই ইনসুলিনের মতো কাজ করে। পাশাপাশি শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন প্রক্রিয়া নিষ্ক্রিয় থাকলে তাকেও সক্রিয় করে তোলে।’’ এসএসকেএম-এর সতীনাথবাবুও বললেন, ‘‘ডিএমপি-র বৈশিষ্ট্য হল এই ওষুধ ডায়াবেটিস ১ এবং ডায়াবেটিস ২, দু’টি ক্ষেত্রেই সমান সক্রিয়।’’
অন্য এন্ডোক্রিনোলজিস্টরা এই আবিষ্কার নিয়ে কী বলছেন? বিশ্বজিৎ ঘোষ দস্তিদার বলেন, ‘‘নানা ধরনের মলিকিউলের অস্তিত্ব সামনে আসছে, ডায়াবেটিসের সঙ্গে লড়ার ক্ষেত্রে যাদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জিএলপি ওয়ান অ্যানালগ-এর কথা আগে জানা গিয়েছে যা ডায়াবেটিসের পাশাপাশি ওজন কমাতেও সাহায্য করে। ডিএমপি-ও হয়তো তেমনই কোনও রাসায়নিক।’’