ইতিকাফের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

16/06/2017 10:59 amViews: 152
ইতিকাফের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
 
ইতিকাফের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
মাহে রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদে অবস্থান করা বা ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। আরবি ইতিকাফ শব্দের আভিধানিক অর্থ অবস্থান করা, স্থির থাকা, কোনো স্থানে আটকে পড়া বা আবদ্ধ হয়ে থাকা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় রমজান মাসের শেষ দশ দিন অথবা অন্য কোনো দিন জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইবাদতের নিয়তে মসজিদে বা ঘরে নামাজের স্থানে অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে ইতিকাফ বলে। ইতিকাফ করার মূল উদ্দেশ্য হলো— মসজিদে বসে আল্লাহর আনুগত্য করা এবং সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ লাভ, সওয়াব অর্জন ও লাইলাতুল কদর লাভ করার আশা করা। আর এজন্য প্রত্যেক ইতিকাফকারীর আল্লাহর জিকির, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, নামাজ-রোজা, জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ, মোরাকাবা-মোশাহেদা ও অন্যান্য ইবাদতে ব্যস্ত থাকা এবং পার্থিব বিষয়ে কথাবার্তা ও আলাপ-আলোচনা থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।
রাসূলুল্লাহ (স) নিয়মিতভাবে প্রতি বছর রমজান মাসের শেষ দশ দিন মসজিদে ইতিকাফ করতেন এবং সাহাবায়ে কিরামও ইতিকাফ করতেন। নবী করিম (স) ইতিকাফের এত বেশি গুরুত্ব দিতেন যে, কখনো তা ছুটে গেলে ঈদের মাসে আদায় করতেন। উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা)-এর হাদীস সূত্রে জানা যায়, ‘রাসূলুল্লাহ (স) প্রতি রমজানের শেষ দশ দিন (মসজিদে) ইতিকাফ করতেন। এ আমল তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত কায়েম ছিল। নবী করিম (স)-এর ওফাতের পর তাঁর বিবিগণও এ নিয়ম পালন করেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
ইতিকাফের বিধিসম্মত সময় মাহে রমজানের ২০ তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার কিছু আগে থেকে শুরু হয় এবং ঈদের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই তা শেষ হয়ে যায়। ইতিকাফকারী পুরুষ রমজান মাসের ২০ তারিখ আছরের নামাজের পর সূর্যাস্তের আগে মসজিদে পৌঁছবেন এবং মসজিদের কোণে একটি ঘরের মতো পর্দা দিয়ে ঘেরাও করে অবস্থান নেবেন। ঘেরাওকৃত কক্ষে পর্দা এমনভাবে স্থাপন করবেন, যেন প্রয়োজনে জামাতের সময় তা খুলে মুসল্লিদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা করা যায়। এ স্থানে পানাহার ও শয়ন করবেন এবং নিষ্প্রয়োজনে এখান থেকে বের হবেন না। তবে প্রাকৃতিক প্রয়োজনে অথবা ফরজ গোসল প্রভৃতি কাজে অথবা শরিয়তের প্রয়োজনে যেমন জুমার নামাজ প্রভৃতির জন্য বের হওয়া জায়েজ। কিন্তু প্রয়োজন পূরণের সঙ্গে সঙ্গেই ইতিকাফের স্থানে ফিরে যেতে হবে। ঈদের চাঁদ দেখা গেলে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসবেন।  পার্থিব কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে মহান আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগের জন্য পুরুষদের মসজিদে এবং নারীদের জন্য গৃহে অবস্থান করাই ইতিকাফ। স্ত্রীলোকের মসজিদে ইতিকাফ করা মাকরূহ। ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে, যেখানে তিনি নামাজ আদায় করেন সেখানেই ইতিকাফ করবেন। বাড়ির নির্দিষ্ট স্থান না থাকলে যেকোনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে ইতিকাফ করবেন এবং ঈদের চাঁদ উদয় না হওয়া পর্যন্ত ইতিকাফের স্থান ত্যাগ করবেন না। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া ও ফরজ গোসল ব্যতীত অন্য কোনো কারণে মসজিদের বাইরে গেলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে যে কেউ ইতিকাফ করলে সুন্নতে কিফায়া আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু গ্রামের বা পাড়া-মহল্লার কেউ ইতিকাফ না করলে সবাই গুনাহগার হবে। হাদীস শরিফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, ‘ইতিকাফকারী রোগী দেখতে যাবে না, জানাজায় উপস্থিত হবে না, স্ত্রী স্পর্শ করবে না। বিশেষ জরুরি কাজ ব্যতীত বাইরে যাবে না।’ (বুখারী, মুসলিম ও আবু দাউদ)
নবী করিম (স) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করবে, তার জন্য দুই হজ ও দুই ওমরার সওয়াব রয়েছে।’ (বায়হাকী) ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিনের ইতিকাফ করল, আল্লাহ পাক তার ও দোজখের মধ্যখানে এমন তিনটি পরিখা তৈরি করে দেবেন, যার একটি থেকে অপরটির দূরত্ব হবে পূর্ব ও পশ্চিমেরও বেশি।’ (তিরমিযি ও বায়হাকী)

Leave a Reply