আসছে মালালার স্মৃতিকথা ‘আমিই মালালা’
ডেস্ক : আর বেশি অপেক্ষা করতে হচ্ছে না মালালা পাগল পাঠকদের। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে মালালার স্মৃতিকথা ‘আমিই মালালা’।
ইতোমধ্যে স্মৃতিকথা লেখার জন্য চুক্তিবদ্ধও হয়ে গেছে ১৫ বছরের পাকিস্তানি কিশোরী মালালা ইউসুফজাই। আর সেজন্য প্রকাশনা সংস্থাটি তাকে ২০ লক্ষ পাউন্ড দেওয়ার অঙ্গীকারও করেছে।
মালালার সঙ্গে হওয়া চুক্তির মূল্য নিয়ে ছড়িয়ে পড়া খবর সঠিক কি না, তা অবশ্য আনুষ্ঠানিক ভাবে জানায়নি প্রকাশনা সংস্থাটি। সংস্থার তরফে আর্জু তাহসিন বলেন, “বইটি সাহস, আত্মবিশ্বাস এবং ভাল ভাবনার নিদর্শন হয়ে থাকবে।”
‘আমি মালালা’ নামে ওই বই মালালা জানাবে সোয়াত উপত্যকায় মেয়েদের শিক্ষার অধিকারের দাবিতে লড়তে গিয়ে তাকে কিভাবে হেনস্থা হতে হয়েছে।
এখন সে ব্রিটেনের বার্মিংহামে এক স্কুলের ছাত্রী। মালালার কথায়, ‘‘আশা করি আমার বইটি পড়ে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ বুঝতে পারবেন কারও কারও ক্ষেত্রে শিক্ষার আলো দেখাটাই কত কঠিন।”
মালালার আত্মকথার মাধ্যমেই জানা যাবে আরও লক্ষ লক্ষ শিশুর কষ্ট, সমস্যা। মালালা মনে করে, প্রতিটি শিশুর স্কুলে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। সে বিষয়ে সচেতনতা ছড়ানো প্রয়োজন। সেও ওই প্রচারের অংশ হতে চায়।
২০০৯ সালে বিবিসির জন্য উর্দুতে সোয়াট উপত্যকার দৈনন্দিন জীবন নিয়ে ব্লগ লিখতে শুরু করে মালালা। ছদ্মনাম ব্যবহার করত সে। তখন খুবই অশান্ত ছিল তার চারপাশ। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল তালেবান। তাদের চোখ রাঙানিতে থমথমে পরিস্থিতি। এর পরে স্থানীয় মেয়েদের স্কুলে যাওয়াও বন্ধ করে দেয় তালেবান। আর তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনা।
এ সবের মধ্যেই জানাজানি হয়ে যায় মালালার আসল পরিচয়। মাঝেমধ্যেই তার মুখ দেখা যেতে থাকে পাকিস্তানি এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে।
২০১১ সালের অক্টোবর মাসে আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের জন্য মালালার নাম প্রস্তাব করেন। সে বছরের ডিসেম্বর মাসেই ওই কিশোরীর হাতে তুলে দেওয়া হয় পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় যুবা শান্তি পুরস্কার।
গত অক্টোবরে তার স্কুলের গাড়িতে ওঠে কয়েক জন বন্দুকধারী যুবক। তারা জিজ্ঞেস করে, “তোমাদের মধ্যে কার নাম মালালা? না বললে সকলকেই গুলি করা হবে।” মালালাকে চিনতে পেরেই তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে এক দুষ্কৃতী। গুলি মাথা, গলা ভেদ করে গিয়ে আটকায় মালালার কাঁধে।
পাকিস্তানে কিছু দিন চিকিত্সা হওয়ার পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ব্রিটেনে। বার্মিংহামের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিত্সা চলে মালালার। সুস্থ হওয়ার পরে বার্মিংহামের স্কুলে ভর্তি হয় সে। ওই কিশোরীর পরিবারও আপাতত ব্রিটেনেই।
নিজের বইয়ে মালালা লিখেছে, “আমি এমন একটা দেশ থেকে আসছি, যেটি তৈরি হয়েছিল মধ্য রাতে। যখন আমি প্রায় মরেই যাচ্ছিলাম, সেটা ছিল ভর দুপুর। দিনটি ছিল মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০১২। সময়টাও বিশেষ ভাল ছিল না, কারণ তখন স্কুলে পরীক্ষা চলছিল। যদিও আমি খুব পড়া-পাগল বলে পরীক্ষার দিনগুলো আমার কাছে তত অপছন্দের নয়।”
সে জানিয়েছে, “দিনের মতো পড়াশোনা শেষ করে বন্ধু আর শিক্ষকদের মাঝে চাপাচাপি করে একটা ট্রাকের পিছনে বসে বাড়ি ফিরছিলাম। সেটিকেই আমরা স্কুলগাড়ি হিসেবে ব্যবহার করতাম। কোনও জানলা ছিল না। তাই ধুলো মাখা প্লাস্টিকের ছাউনিটা সরিয়ে বাইরেটা দেখার ইচ্ছেও বিশেষ হত না”। এর পরের ঘটনা সকলেরই জানা। সূত্র: ওয়েবসাইট।