আল্লাহ ও রসুল (সা.)-এর অবাধ্যতা থেকে দূরে থাকতে হবে মাওলানা মুহাম্মদ আশরাফ আলী
মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রসুলের এবং জেনেশুনে নিজেদের পারস্পরিক আমানতের খেয়ানত কর না।’ -সূরা আনফাল-২৭।
এ আয়াতের শানেনুজুল সম্পর্কে ইমাম ওয়াহেদী (রহ.) বলেন, বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবু লুবাবার (রা.) ব্যাপারে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। মুসলমানরা যখন বনু কুরায়যাকে অবরোধ করে রেখেছিলেন, আর বনু কুরায়যার মহল্লায় লুবাবার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা অবস্থান করছিল। রসুল (সা.) তখন কোনো এক বিশেষ প্রয়োজনে আবু লুবাবা (রা.)-কে বনু কুরায়যার কাছে পাঠালেন। কুরায়যা গোত্রের লোকেরা জানতে চাইল, আবু লুবাবা! সা’দের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা যদি বের হয়ে আসি, তাতে আমাদের কী পরিণতি হবে বলে তুমি মনে কর? আবু লুবাবা (রা.) আপন গলার দিকে ইশারা করে বুঝাতে চাইলেন, তোমাদের সবার গলা কেটে ফেলা হবে, কাজেই তোমরা তা করতে যেও না। তার এ আচরণ ছিল আল্লাহ ও রসুলের খেয়ানতের পর্যায়ভুক্ত। আবু লুবাবা (রা.) নিজেই স্বীকারোক্তি করেন, ‘আমি পা স্থানচ্যুত করার পূর্বেই বুঝতে সক্ষম হলাম, আমি আল্লাহ ও তার রসুলের খেয়ানত করে ফেলেছি।’ এরপর হজরত আবু লুবাবা (রা.) দীর্ঘ ছয় দিন মসজিদে নববীর একটি কাঠের খামের সঙ্গে নিজেকে বেঁধে রাখেন এবং তওবা মঞ্জুর হওয়ার ঘোষণা আসার পরই তিনি বাঁধনমুক্ত হন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ বান্দাদের জন্য যা কিছু (যে বিষয়গুলো) ফরজ করেছেন, তাই আল্লাহর আমানত।’ অর্থাৎ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তোমরা আল্লাহর দেওয়া ফরজ আদেশ-নিষেধ ভঙ্গ বা অমান্য কর না। হজরত কালবী (রা.) বলেন, আল্লাহ ও তার রসুলের অবাধ্যচারিতাই হচ্ছে খেয়ানত। আল্লাহর ফরজকৃত বিধানের ব্যাপারে প্রত্যেকেই আমানতদার। ইচ্ছা করলে সে তা খেয়ানত করতে পারে, আবার রক্ষা করতেও পারে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ-ই তা জানবে না। উল্লিখিত আয়াতে ‘তোমরা জেনেশুনে’ কথার অর্থ-নিঃসন্দেহে তোমরা জান যে, এটা আমাদের আমানত। আল্লাহ আরও বলেন, নিশ্চয় আল্লাহতালা খেয়ানতকারীকে সুপথ প্রদর্শন করেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মোনাফেকের চিহ্ন তিনটি : যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে এবং যখন তার কাছে কিছু গচ্ছিত রাখা হয়, তখন তা খেয়ানত করে।— বুখারি ও মুসলিম।
আহমাদ, বাযযার ও তাবারানির বর্ণনায় রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার আমানতদারী নেই তার ইমান নেই এবং যে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না তার ভিতর দ্বীন নেই। সব ব্যাপারেই খেয়ানত বা বিশ্বাসঘাতকতা দোষণীয়। তবে একটা অন্যটা অপেক্ষা বেশি দোষণীয় হতে পারে। যে লোক ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করল, আর যে কারও অর্থ-সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা বা আরও বড় কোনো অপরাধ করল, তারা উভয়ে সমান নয়। রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাকে যে বিশ্বাস করে তুমি তার বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা কর (অর্থাৎ বিশ্বাস ভঙ্গ কর না)। ‘আর তোমার’ সঙ্গে যে বিশ্বাসঘাতকতা করে, ‘তার সঙ্গেও তুমি বিশ্বাস ভঙ্গ কর না। ‘আর তোমার সঙ্গে যে বিশ্বাসঘাতকতা করে’ তার সঙ্গেও তুমি বিশ্বাসঘাতকতা কর না। আরেক হাদিসে আছে, একজন মুমিন-বিশ্বাসী আর য-ই করুক না কেন, খেয়ানত বা বিশ্বাসঘাতকতা ও মিথ্যাচারিতা করতে পারে না।’ — মুসনাদে আহমাদ।
লেখক : ইসলামী গবেষক।